শুক্রবার, ২০শে জুন ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৬ই আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গত সরকার নাগরিকদের গুম করে ভারতীয় বাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছে: গুম কমিশন

বিশেষ প্রতিবেদক

🕒 প্রকাশ: ০৩:২১ অপরাহ্ন, ১৯শে জুন ২০২৫

#

রাজধানীর গুলশানে গুম সংক্রান্ত কমিশনের কার্যালয়ে সভাপতি ও সাবেক বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী বক্তব্য দেন। ছবি: সংগৃহীত

বিগত আওয়ামী লীগের সরকার শাসন ব্যবস্থা দীর্ঘায়িত করতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে গুম করা হয়েছে বলে দাবি করেছে গুম সংক্রান্ত কমিশন। এমনকি বিগত সরকার সাধারণ নাগরিকদের বেআইনি পন্থায় বারবার ভারতীয় বাহিনীর হাতেও তুলে দিয়েছে বলে জানিয়েছে কমিশন।

আজ বৃহস্পতিবার (১৯শে জুন) সকালে রাজধানীর গুলশানে গুম সংক্রান্ত কমিশনের কার্যালয়ে সভাপতি ও সাবেক বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী এ কথ বলেন।

তিনি বলেন, গত সরকারের শাসনামলে গুম একটি সুশৃঙ্খল ও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নেয়। ‘জঙ্গিবাদবিরোধী’ অভিযানের নামে সরকার ইসলামী উগ্রবাদের হুমকিকে ব্যবহার করেছে। রাজনৈতিক ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করা, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন এবং শাসন দীর্ঘায়িত করার উদ্দেশ্যে গুম করা হয়েছে। গুমের শিকার হয়েছেন মেধাবী শিক্ষার্থী, রাজনৈতিক কর্মী, সাংবাদিক, চিকিৎসক, প্রকৌশলীসহ বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি পেশাজীবি ও সাধারণ জনগণ।

তিনি বলেন, এ প্রক্রিয়ায় তারা ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থাকে অস্ত্র বানিয়েছে, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও নিরাপত্তা বাহিনীকে রাজনৈতিক প্রভাবাধীন করেছে এবং নির্যাতন ও গোপন আটকের সংস্কৃতি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে চালু করেছে, এমনকি সাধারণ নাগরিকদের বেআইনি পন্থায় বারবার ভারতীয় বাহিনীর হাতেও তুলে দিয়েছে।

তিনি বলেন, গত ৪ঠা জুন প্রধান উপদেষ্টার কাছে দ্বিতীয় অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন হস্তান্তর করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, বিগত কর্তৃত্ববাদী সরকারের আমলে বাংলাদেশে বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি ও ভিন্ন মতাবলম্বীদের বিরুদ্ধে পদ্ধতিগত দমননীতির অংশ হিসেবে গুমকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ৫ই আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পরও বহু অপরাধী ও তাদের শুভাকাঙ্ক্ষীরা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার কেন্দ্রে তাদের অবস্থানে থাকায় অনেক জোরাল প্রমাণ ও নিদর্শন ধ্বংস, অনেক ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক অসহযোগিতা, সাক্ষীদের ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ নানারকম ভীতিকর ও আতঙ্কজনক পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। তবুও বহু ভুক্তভোগী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাদের অভিযোগ ও অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বিস্তারিতভাবে সে কাহিনি তুলে ধরেছেন।

গত ২৬শে সেপ্টেম্বর কথিত ‘আয়না ঘর’ নামে বন্দিশালার স্থান-স্থাপনা পরিদর্শন করে কমিশন। সারাদেশে মোট ১৬টি গোপন বন্দীশালা পরিদর্শন করে কমিশন। গত ৪ঠা ডিসেম্বর, ২৬শে ফেব্রুয়ারি ও ২৫শে মার্চ তিনটি চিঠিতে মোট ১৩১টি অভিযোগের বিষয়ে আইজিপিকে মামলা করার জন্য বলেছে কমিশন।

সম্প্রতি জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের গুমবিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপ অন এনফোর্সড অর ইনভলান্টারি ডিজঅ্যাপিয়ারেন্স (ডব্লিউজিইআইডি) এর একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে আসে। তারা ঘুম সংক্রান্ত কমিশনসহ বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করেছে। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে দুজন কর্মকর্তা একটি সংবাদ সম্মেলনে তাদের জানিয়েছে, গুমের ঘটনাগুলো তারা জানতো না।

এ বিষয়ে কমিশনের সভাপতির কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গুমের ঘটনার সঙ্গে সেনাবাহিনীকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে দায়ী করা যায় না। কারণ, ডিজিএফআই প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রধান হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। 

গুম কমিশন

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন