ছবি: এএফপি
ইসরায়েলে হামাসের আকস্মিক হামলার জেরে গাজায় দুই বছর আগে শুরু হয়েছিল ইসরায়েলি আগ্রাসন। এরপর এই উপত্যকায় ঝরেছে প্রায় ৬৮ হাজার মানুষের প্রাণ। ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় বাড়িঘর পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তূপে, হাসপাতাল মিশে গেছে মাটির সঙ্গে, বন্ধ হয়ে গেছে শিক্ষা-চিকিৎসাসহ মৌলিক সেবা। শুধু তা-ই নয়, ত্রাণ সহায়তা আটকে দিয়ে এই উপত্যকায় মানবিক বিপর্যয় আরও প্রকট করেছে ইসরায়েল।
অবশেষে গাজা উপত্যকায় আপাতত শান্তির আভাস পাওয়া গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের চাপে মিসরে কয়েকদিন ধরে সব পক্ষের অংশগ্রহণে চলছিল আলোচনা। গতকাল বৃহস্পতিবার (৯ই অক্টোবর) মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রথমে জানান, গাজা যুদ্ধ বন্ধে প্রথম ধাপের শান্তিচুক্তিতে সম্মত হয়েছে ইসরায়েল ও হামাস। এরপর ইসরায়েল আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে, শান্তিচুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে সব পক্ষ।
বার্তা সংস্থা এএফপি, ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি ও গার্ডিয়ান এবং মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের তথ্যমতে, ইসরায়েলি সরকারের মুখপাত্র শোশ বেদ্রোসিয়ান বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘মিসরে (স্থানীয় সময়) সকালে প্রথম দফার শান্তিচুক্তির খসড়ায় স্বাক্ষর করেছে সব পক্ষ। এই খসড়ার অন্যতম একটি শর্ত হলো, হামাস সব জিম্মিকে মুক্তি দেবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রথম দফার শান্তিচুক্তি এখন পরিষ্কারভাবে দাঁড়িয়ে আছে, ৭২ ঘণ্টা পর হামাস সব জিম্মিকে (জীবিত অথবা মৃত) মুক্তি দেবে এবং তারা আমাদের কাছে আগামী সোমবার ফিরবে।’
বেদ্রোসিয়ান বলেন, ইসরায়েলের মন্ত্রিসভার বৈঠক হবে গ্রিনিচ মান সময় বৃহস্পতিবার বেলা ২টায় (বাংলাদেশ সময় রাত ৮টা)। এই বৈঠকে গাজা শান্তিচুক্তি অনুমোদন পাওয়ার কথা রয়েছে। এরপর গ্রিনিচ মান সময় বেলা ৩টায় ইসরায়েল সরকারের সব সদস্যের অংশগ্রহণে বৈঠক হবে। এর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) মানচিত্রে যেভাবে অঙ্কিত আছে, সে অনুসারে হলুদ লাইনে সরে আসবে। এরপর জিম্মি মুক্তির ৭২ ঘণ্টার সময়সীমা শুরু হবে।
গাজায় ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে গত সোমবার থেকে মিসরের শার্ম আল-শেখে শুরু হয় এই শান্তি আলোচনা। এই আলোচনায় অংশ নেন হামাস, ইসরায়েল, তুরস্ক, কাতার, মিসর ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা। মিসরের মধ্যস্থতায় শুরু হওয়া এ বৈঠকের আলোচ্য বিষয় ছিল যুদ্ধবিরতি, বন্দিবিনিময় ও গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশ।
এর আগে গত সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশন শেষ হওয়ার পরপরই যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। হোয়াইট হাউসে তার সঙ্গে বৈঠকের পর যৌথ সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দেন, তিনি গাজায় শান্তি প্রতিষ্ঠায় একটি পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছেন। এর জন্য শান্তি আলোচনায় বসতে হবে সব পক্ষকে।
এ সময় তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, হামাস আলোচনায় রাজি না হলে ইসরায়েল যা খুশি করতে পারে। তাতে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন থাকবে।
ট্রাম্পের ওই হুঁশিয়ারির পরপরই হামাসের তরফ থেকে আলোচনায় বসার সম্মতির কথা জানানো হয়। এদিকে ট্রাম্পের পরিকল্পনায় নেতানিয়াহুর সরকারের সব সদস্যের সম্মতি না থাকলেও আলোচনায় যেতে বাধ্য হয় ইসরায়েলও।
মিসর রেড ক্রিসেন্ট জানিয়েছে, শান্তিচুক্তির পর রাফাহ সীমান্ত দিয়ে ১৫৩টি ত্রাণবাহী ট্রাক গাজা অভিমুখে রওনা হয়েছে। এসব ট্রাকের মধ্যে ৮০টি জাতিসংঘের, ২১টি কাতার সরকারের এবং ১৭টি মিসর রেড ক্রিসেন্টের ট্রাক রয়েছে।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান গতকাল বলেছেন, গাজা শান্তিচুক্তি ঠিকভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে কি না, তা পর্যবেক্ষণে একটি টাস্কফোর্স গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই টাস্কফোর্সে তুরস্কও যোগ দেবে।
খবরটি শেয়ার করুন