শুক্রবার, ৩রা অক্টোবর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১৮ই আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ

*** তেহরান থেকে রাজধানী অন্যত্র সরিয়ে নেবে ইরান, নেপথ্যে পানি *** গাজা অভিমুখী নৌবহরে ইসরায়েলি সেনাদের আক্রমণ, ধরে নেওয়া হলো অধিকারকর্মীদের *** ৪৭ দেশের ৪৪৩ স্বেচ্ছাসেবীকে অপহরণ করেছে ইসরায়েল *** মর্ত্য ছেড়ে কৈলাসে ফিরলেন দুর্গতিনাশিনী *** শহিদুল আলমের জাহাজ এখনো আটক হয়নি, দিলেন ভিডিওবার্তা *** পাকিস্তানকে হারিয়ে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ শুরু *** এনসিপিকে শাপলা দিলে মামলা করব না, তবে ইসি দিতে পারে না: মান্না *** শুধু থালাবাটি নয়, এনসিপির জন্য আছে লাউ-বেগুন-কলাসহ ৫০ প্রতীক *** ঝড় উপেক্ষা করে গাজার পথে ফ্লোটিলা, শহিদুল আলমের ভিডিও বার্তা *** ইসরায়েলি সব কূটনীতিককে কলম্বিয়া থেকে বের হয়ে যাওয়ার নির্দেশ প্রেসিডেন্ট পেত্রোর

পাকিস্তানিরা মেধাশূন্য করতে চাইলেও বাংলাদেশ দ্রুত ঘুরে দাঁড়ায়

উপ-সম্পাদকীয়

🕒 প্রকাশ: ০৪:৪০ অপরাহ্ন, ১৪ই ডিসেম্বর ২০২৪

#

ছবি : সংগৃহীত

১৪ই ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। ১৯৭১সালের ২৫শে মার্চ কালরাত থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধের পুরোটা সময়জুড়েই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এ দেশের বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে।তবে বিজয়ের প্রাক্কালে জাতিকে মেধাশূন্য করতে এ হত্যাযজ্ঞ ভয়াবহ রূপ নেয়। আর এসব কাজে তাদের সহযোগিতা করেছিল এ দেশীয় দোসররা।

বাঙালির বিজয় যখন অনিবার্য; তখন এদেশীয় দোসরদের সহযোগিতায় পাকিস্তানি বাহিনী হত্যা করে বাংলাদেশের প্রথিতযশা বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার বুদ্ধিজীবীদের। বাংলাদেশকে চিরতরে পঙ্গু করে দেয়াই এর মূল উদ্দেশ্য ছিল। দীর্ঘ নয় মাস সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাঙালির বিজয় যখন শুধু সময়ের অপেক্ষা, তখনই ঘটে ইতিহাসের নিকৃষ্টতম সেই হত্যাকাণ্ড। তাদের উদ্দেশ্য ছিল স্বাধীনতার পর যেন বাংলাদেশ কখনো মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে- তা নিশ্চিত করা।

পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী পরিকল্পিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, চিকিৎসক, শিল্পী, লেখক, সাংবাদিকসহ বহু খ্যাতিমান বাঙালিকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে।

মূলত ডিসেম্বরের ১০ তারিখ থেকে বুদ্ধিজীবীদের হত্যার প্রস্তুতি নেয়া হতে থাকে। ১৪ই ডিসেম্বরে যার পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করা হয়। পরিকল্পনার মূল অংশে দেশের শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, শিল্পী, ডাক্তার, প্রকৌশলী, আইনজীবী, লেখক, গবেষকসহ চিহ্নিত বুদ্ধিজীবীদের পাকিস্তানি হানাদাররা এবং তাদের এ দেশীয় দোসররা অপহরণ করে নিয়ে যায়। সেদিন শুধু ঢাকায় প্রায় ২০০ জনের মতো বুদ্ধিজীবীকে তাদের বাসা থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। তাদের চোখে কাপড় বেঁধে মিরপুর, মোহাম্মদপুর, নাখালপাড়া, রাজারবাগসহ অনেক স্থানে থাকা টর্চার সেলে নিয়ে গিয়ে অমানবিক নির্যাতন চালানো হয়। পরে তাদের নৃশংসভাবে রায়েরবাজার এবং মিরপুর বধ্যভূমিতে হত্যা করে ফেলে রাখা হয়।একইভাবে সারাদেশের বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়।

স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে জেলাওয়ারি শহীদ বুদ্ধিজীবীদের একটি তালিকা প্রকাশিত হয়।  শহীদ বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে ৯৯১ জন শিক্ষাবিদ (যার মধ্যে ২৩ জন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক), ১৩ জন সাংবাদিক, ৪৯ জন চিকিৎসক, ৪২ জন আইনজীবী ও অন্যান্য (সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, শিল্পী এবং প্রকৌশলী) ১৬ জনের নাম ছিল। যার মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য ব্যক্তিত্বগণ হলেন- অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী, অধ্যাপক গোবিন্দ চন্দ্র দেব, অধ্যাপক জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা, অধ্যাপক মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, অধ্যাপক আনোয়ার পাশা, অধ্যাপক গিয়াসউদ্দিন আহমদ, ফজলুর রহমান খান, হুমায়ূন কবীর, ডা. ফজলে রাব্বী, ডা. মোহাম্মদ মুর্তজা, ডা. শামসুদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক রাশিদুল হাসান, ড. সন্তোষ ভট্টাচার্য, ডা. মোহাম্মদ শফি, সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেন, শহীদুল্লা কায়সার, নিজামুদ্দিন আহমেদ, খন্দকার আবু তালেব, আ ন ম গোলাম মোস্তফা, শহীদ সাবের, সৈয়দ নাজমুল হক, জহির রায়হান, আলতাফ মাহমুদ, ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত, রণদাপ্রসাদ সাহা, ড. আবদুল খায়ের, ড. সিরাজুল হক খান, ড. ফয়জল মহী, ডা. আবদুল আলীম চৌধুরী, সেলিনা পারভীন, অধ্যাপক হবিবুর রহমান, কবি মেহেরুন্নেসা, আইনজীবী নজমুল হক সরকার প্রমুখ।যদিও সেদিনের তালিকা পূর্ণাঙ্গ ছিল না। কারণ খুব অল্প সময়ে সেটা করা হয়েছিল। এরপর দেশের বিভিন্ন প্রান্তের বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের খবর পাওয়া গেছে।

আজকের প্রজন্মের কাছে হয়তো প্রশ্ন আসতে পারে, পাকিস্তানি হানাদাররা কেন বুদ্ধিজীবীদের বেছে বেছে হত্যা করার পরিকল্পনা করেছিল?কারণ তারা বুঝতে পেরেছিল, একটি জাতি বুদ্ধিজীবীদের হাত ধরেই সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যায়।তাদেরকে হত্যা করলে বাংলাদেশ কখনো জাতি হিসেবে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না।এজন্যই দেশের সূর্যসন্তানরা তাদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছিল।

তবে পাকিস্তানিদের স্বপ্ন পূরণ হয়নি। স্বাধীনতার পর খুব দ্রুততম সময়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছিল। বাংলাদেশ বিশ্বমঞ্চে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হয়। মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মত্যাগ জাতি চিরদিন শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে। আজকের দিনে সকল শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। 

আই.কে.জে/

শহীদ বুদ্ধিজীবী

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন

Footer Up 970x250