ছবি: সংগৃহীত
রাজু আলাউদ্দিন
খালেদ মুহিউদ্দীনের সঙ্গে নিউইয়র্কের মেয়র জোহরান মামদানির ভিডিওর যে-ক্লিপটি ফেসবুকে ভেসে বেড়াচ্ছে, সেটা দেখে অনেকেই খালেদের ইংরেজি জানা নিয়ে ট্রল করছেন দেখলাম। আর খুব অল্প কয়েকজন ইংরেজি সম্পর্কে খালেদের অপরিপক্কতার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।
বাঙালি হিসেবে ইংরেজি বা অন্য একটি ভাষা জানাটা গৌরবের কিছু নয়, আবার না-জানাটা দোষেরও নয়। একজন কৃষক যদি ইংরেজি না জানে সেটা নিয়ে আমরা নিশ্চয়ই ট্রল করবো না, কারণ ইংরেজি জানাটা তার জন্য বাধ্যবাধকতার মধ্যে পড়ে না।
কিন্তু আপনি যদি এমন একটা পেশায় থাকেন-ধরা যাক ইংরেজির শিক্ষক, সাহিত্য সাময়িকীর সম্পাদক, ইমিগ্রেশন অফিসার, পদার্থ বিজ্ঞানের অধ্যাপক কিংবা সংবাদপত্রের একজন প্রতিবেদক-তাহলে ইংরেজি, অভিজ্ঞের পর্যায়ে না হলেও, যোাগাযোগে সক্ষম পর্যায়ের ইংরেজি তো জানতেই হবে।
খালেদ হয়তো ইংরেজি পড়তে বা লিখতে, বুঝতে সক্ষম-অনেকেই এরকম তো হয় যে লিখতে বা পড়তে পারেন ঠিকই, কিন্তু অনভ্যাসের কারণে ভালো বলতে পারেন না, খালেদ হয়তো সেই গোত্রের।
এতে নিন্দার কিছু দেখি না। তবে যদি ইংরেজিতে কারোর সাক্ষাৎকার নিতেই হয়, তাহলে অন্তত বলার প্রস্তুতিটা নিয়ে যাওয়াই বিধেয়। কারণ উভয় পক্ষকে ঠিকভাবে বোঝা এবং সেই অনুযায়ী সাড়া দেওয়ার প্রশ্নটা এখানে জড়িত।
আপনি যদি ঠিক মতো স্পষ্টভাবে বলতে বা বুঝতে না পারেন, তাহলে আপনার লক্ষ্যটি তো পূরণ হবে না। খালেদ ইংরেজিতে গুছিয়ে কথাগুলো নিশ্চয়ই বলতে পারতেন যদি একটু প্রস্তুতি নিয়ে যেতেন।
ভিডিও দেখে মনে হচ্ছিল, তিনি বুঝতে পারছেন না কী প্রশ্ন করবেন বা কীভাবে করবেন, ফলে উদ্দেশ্যহীন শব্দের পর শব্দ উচ্চারণ করে যাচ্ছিলেন যার মধ্যে কোনো প্রশ্ন ছিল না। নিজেরই শব্দরাশির মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছিলেন তিনি, আর বেচারা জোহরান ঈষৎ ঝুঁকে সেই শব্দরাশির মধ্যে কোথায় প্রশ্নটি লুকায়িত তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন।
যাইহোক, বিদেশি ভাষা জানার মধ্যে কোনো বাহাদুরি নেই, অন্য ভাষা তো দূরের কথা, নিজের ভাষাটিও তো ভালোভাবে আয়ত্ত করতে আমাদের সারা জীবন কেটে যায়। তবে সাক্ষাৎকারের মতো, তাও আবার রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের মতো কারোর সাক্ষাৎকার নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রশ্ন ও উত্তরের সম্ভাব্য বিপর্যয় থেকে সুরক্ষার জন্যই ভাষা সম্পর্কে সতর্কতা প্রয়োজন।
আমার মনে হয়, খালেদ ঘুরিয়ে পেচিয়ে এত কথা না বলে সোজাসাপ্টা প্রশ্ন করে ফেললেই বরং ভালো করতেন। বাংলায় তার যে-সব সাক্ষাৎকার দেখেছি, সেখানে তো তিনি যথেষ্ট চৌকষ, বুদ্ধিদীপ্ত, ও সোজাসাপ্টা, সেই একই পদ্ধতি তিনি এখানেও প্রয়োগ করতে পারতেন।
লেখক: ন্যানো কাব্যতত্ত্বের জনক কবি, প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক।
খবরটি শেয়ার করুন