শনিবার, ৮ই নভেম্বর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২৪শে কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ

*** প্রধান উপদেষ্টা আহ্বান জানালে আমরা যাব, অন্য দলকে দিয়ে আহ্বান কেন: সালাহউদ্দিন *** দেশের ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে ভারতের অবস্থান কী *** কারও দলীয় স্বার্থ বাস্তবায়ন করা এই সরকারের কাজ নয়: তারেক রহমান *** রাজশাহীর প্রশংসা উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের, এড়িয়ে গেলেন নির্বাচন প্রসঙ্গ *** আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ অবস্থান নিতে হবে: শফিকুল আলম *** দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক অবস্থা স্থিতিশীল: বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর *** আওয়ামী লীগের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাচ্ছে আমেরিকা, ইউরোপ! *** ভারতের মথ ডাল এ দেশে এসে মুগ ডাল হয়ে যাচ্ছে কেন *** জাহানারা ইমামের ব্যক্তিগত বই কেজি দরে বিক্রি করেছে বাংলা একাডেমি *** ‘শেখ হাসিনাকে নিয়ে ভারতের পরিকল্পনা ফাঁস করল বিবিসি’

আওয়ামী লীগের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাচ্ছে আমেরিকা, ইউরোপ!

বিশেষ প্রতিবেদক

🕒 প্রকাশ: ০৬:২২ অপরাহ্ন, ৮ই নভেম্বর ২০২৫

#

ছবি: দ্য উইক

ভারত সম্প্রতি দেশটিতে অবস্থান করা বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি  শেখ হাসিনাকে আরও বেশি করে মুখ খুলতে দিচ্ছে এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে সাক্ষাৎকার পর্যন্ত দিতে দিচ্ছে, এর মূলে আছে দলটিকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ল্যান্ডস্কেপে প্রাসঙ্গিক রাখার চেষ্টা। এমনটাই ভারতের রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ ও গবেষকেরা মনে করছেন বলে জানিয়েছে বিবিসি বাংলা।

তারা বলছেন, শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক বিশ্ব গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকারগুলো ভারত সরকারের অগোচরে হয়নি। তার এসব বক্তব্য আসলে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মনোবল চাঙ্গা করার উদ্দেশ্যে। ভারতের পক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে বা প্রকাশ্যে যেগুলো বলা সম্ভব নয়, তার অনেক কথাই শেখ হাসিনার মুখ দিয়ে বলানো হচ্ছে। পাশাপাশি শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের জন্য প্রভাবশালী পশ্চিমা বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর কাছে নতুন করে দূতিয়ালি করছে ভারত। 

২০২৪ সালের ৫ই আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরে আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায় থেকে এর জন্য বিশেষভাবে দায়ী করা হয় যুক্তরাষ্ট্রকে। অবশ্য শেখ হাসিনার সরকারকে উৎখাতে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো ভূমিকা নেই বলে একাধিকবার জানায় হোয়াইট হাউস। এক বছর পর হঠাৎ করে দলটির জন্য আমেরিকা নতুনভাবে ‘মায়াকান্না’ করছে। ইতিমধ্যে দেশের রাজনীতিতে যে নানারকম শূন্যতা তৈরি হয়েছে, এর পরিপ্রেক্ষিতে আমেরিকা যে স্বার্থগুলো পূরণ করতে চাচ্ছে, সেগুলো পূরণ ও সংরক্ষণ করা একেবারে অসম্ভব হয়ে পড়েছে। 

এ জন্য আওয়ামী লীগকে ছলে-বলে-কৌশলে সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করানো ও রাজনীতির মূলধারায় ফিরিয়ে আনার জন্য গত কয়েক মাস ধরে নানা রকম চেষ্টা এবং তদবির চালিয়ে যাচ্ছে আমেরিকা। এই লক্ষ্যে দেশ-বিদেশে রহস্যজনক বহু বৈঠক গোপনে হচ্ছে। এমন অভিমত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।

তারা বলছেন, দেশে ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক ও বিশ্বাসযোগ্য নয়’ এমন নির্বাচনে সহযোগিতা থেকে সরে আসতে জাতিসংঘের প্রতি সম্প্রতি চিঠি লিখে আহ্বান জানিয়েছে চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ, কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা থাকায় যাদের ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ নেই। পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের কিছুটা উন্নতি হওয়ায় আওয়ামী লীগ এমন পদক্ষেপ নিয়েছে। যদিও ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক ও বিশ্বাসযোগ্য’ নির্বাচনের পরিবেশের দাবি নিয়ে জাতিসংঘে উদ্বেগ জানানো আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে তিনটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচনের আয়োজনের অভিযোগ রয়েছে।

এক বছর আগেও আমেরিকার যে দৃষ্টিভঙ্গি ছিল আওয়ামী লীগের প্রতি, সেখানে সম্প্রতি কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। একাধিক রাজনীতিবিদ সুখবর ডটকমকে বলেন, দেশে বহু বৈঠক গোপনে হচ্ছে, যা দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারাও জানেন না। কয়েকটি দলের শীর্ষস্থানীয় নেতার সঙ্গে কিছুদিন ধরে ধারাবাহিকভাবে আনুষ্ঠানিক বৈঠকও করছেন বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, কূটনীতিক এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা। জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিদেশি তাদের তৎপরতা বেড়েছে। তারা কখনো আনুষ্ঠানিকভাবে, কখনো গোপনে রাজনীতিবিদদের সঙ্গে বৈঠক করছেন।

সুইডেন, নরওয়ে, ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূতেরা প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী সম্প্রতি আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা ও দলটির সাবেক সরকারের মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরীর রাজধানীর গুলশানের বাড়িতে দেখা করেন। অনেকে বলছেন, সেখানে আলোচনা হয়েছে কীভাবে আওয়ামী লীগকে একত্রিত ও শক্তিশালী করে রাজনীতিতে ফিরিয়ে আনা যায়, কীভাবে আগামী সংসদ নির্বাচনে দলটির অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা যায়। ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নেতৃত্বে রেখে, নাকি তাকে দূরে রেখে অপেক্ষাকৃত স্বচ্ছ ভাবমূর্তির কোনো নেতার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন হবে, সেই চেষ্টা করছেন পশ্চিমা কয়েকটি দেশের কূটনীতিকেরা।

আওয়ামী লীগের জন্য আমেরিকা হঠাৎ কেন ‘মায়াকান্না’ করছে—এমন প্রশ্ন তুলেছেন সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনি। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পেছনে আমেরিকার হাত ছিল। ইতিমধ্যে রাজনীতিতে নানারকম শূন্যতা তৈরি হয়েছে। সেই শূন্যতার পরিপ্রেক্ষিতে একটা ভালো নির্বাচন এবং আমেরিকা যে স্বার্থগুলো চাচ্ছে, সেই স্বার্থগুলো সংরক্ষণ করা একেবারে অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এ জন্য আওয়ামী লীগকে ছলে-বলে-কৌশলে নির্বাচনে আনার জন্য, রাজনীতির মূলধারায় ফিরিয়ে আনার জন্য নানা রকম চেষ্টা এবং তদবির চালিয়ে যাচ্ছে আমেরিকা।’

রনি বলেন, ‘আমেরিকা প্রয়োজনে যেকোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির সঙ্গে, সেটা একদিন আগে যাদের জঙ্গি বলেছে, একদিন আগে যাকে ফাঁসি দেওয়া হয়, তার স্ত্রী বা তার সন্তানের সঙ্গে তার পরদিন একই টেবিলে বসে তারা খেতে পারে। তাদের কাছে এটা কোনো ব্যাপার নয়। আওয়ামী লীগ তো জানে যে অতীতে আমেরিকান পলিসি এবং ভারতের যে পলিসি, সে পলিসি অনুযায়ী শেখ হাসিনা কীভাবে বিরোধী দলকে হ্যান্ডল করেছে। এটা শেখ হাসিনা ভালো করে জানেন। যেমন—২০১৮ সালে শেখ হাসিনাকে আইনগতভাবে শক্তিশালী করার জন্য সব রাজনৈতিক দলকে একত্রিত করে নির্বাচনে যে আনা হলো, এটার পেছনে আমেরিকার একটা পলিসি ছিল।’

তার মতে, ‘বিবিসি বাংলা এবং বিবিসি ইন্ডিয়া এই মুহূর্তে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অত্যন্ত কাছের। এ কারণে এই সরকারের ১৪ মাসের প্রথম ছয় মাসে তারা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রোমোট করেছে, পরবর্তী ছয় মাসে তারা নিউট্রাল ছিল, আর গত দুই মাস ধরে তারা ড. ইউনূসের পেছন থেকে সরে গিয়ে এখন শেখ হাসিনাকে প্রোমোট করছে।’

রনি বলেন, ‘ভারত যে সিদ্ধান্তে পৌঁছে গেছে সেটা হলো, আওয়ামী লীগের বিকল্প তাদের বন্ধু নেই, আর আওয়ামী লীগের মধ্যে শেখ হাসিনার বিকল্প নেই; এটা তারা একেবারে শতভাগ নিশ্চিত হয়ে গেছে।’

রাজনৈতিক বিশ্লেষক জাহেদ উর রহমান মনে করেন, ‘দেশে ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলোর সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড থেকে সৃষ্ট বৈশ্বিক উদ্বেগের কারণে ইউরোপ আওয়ামী লীগকে কোনো ফর্মে ফেরত আনার ইঙ্গিত বহন করছে ইউরোপের রাষ্ট্রদূতদের আওয়ামী লীগের নেতা সাবের চৌধুরীর সঙ্গে ওই বৈঠক।’

তিনি বলেন, ‘এই দেশে সাংবিধানিকভাবে ধর্মীয় রাজনীতি করে এ ধরনের দল নিয়ে পশ্চিমাদের খুব বেশি সমস্যা আছে বলে জানা যায় না। বরং তারা এ ধরনের দলগুলোকে সহায়তা দেওয়ার পক্ষে, কারণ তারা দেখাতে চায় সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যে ইসলামী রাজনীতি হতে পারে। এটা দেওয়া হলে কট্টরপন্থীদের ক্ষমতা দখল করার রাজনীতি থেকে সরিয়ে রাখা যায়।’

তিনি বলেন, ‘এ ব্যাপারে ইউরোপ সম্ভবত পুরোপুরি একমত নয়। তারা জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলনের ব্যাপারে খুব ইতিবাচক ধারণা রাখে না। সেই প্রেক্ষাপটে তারা হয়তো ভাবছে একটা রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ।’

শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন

Footer Up 970x250