রবিবার, ৮ই জুন ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২৪শে জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

'ভালো লোকেরা স্বর্গে যায়, খারাপ লোকেরা পাতায়ায়'

নিউজ ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ১০:৫০ অপরাহ্ন, ২৯শে মে ২০২৫

#

ছবি: সংগৃহীত

ব্রিটিশ পত্রিকা দ্য সান ও দ্য ডেইলি মিরর-এর নিবন্ধে পাতায়াকে ‘বিশ্বের যৌনতার রাজধানী’ বলে বর্ণনা করা হয়। এ খবরে ক্ষিপ্ত হয় থাইল্যান্ড। স্থানীয় পুলিশ দাবি করে, ব্রিটিশ পত্রিকার এ তথ্য বানোয়াট। তবে স্থানীয় মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, সেখানে যৌনকর্মীর প্রকৃত সংখ্যা ২৭ হাজারের চেয়ে অনেক বেশি। 

তারা মনে করেন, চোখ বন্ধ রেখে বাস্তবকে অস্বীকার করে ও যৌনকর্মীদের দমনপীড়নের মাধ্যমে কোনো সমাধান হবে না। যৌনকর্মীদের স্বীকৃতি ও অধিকার দেওয়ার কথা ভাবতে হবে। স্রেফ একটি জেলেপল্লি থেকে পাতায়া কীভাবে বিশ্রাম ও বিনোদন এবং ‘বিশ্বের যৌনতার রাজধানী’ হয়ে উঠল, তা নিয়ে ব্যাংকক পোস্টে নিবন্ধ প্রকাশিত হয়।

একসময় পাতায়া নামের জায়গাটি ছিল থাইল্যান্ড উপসাগরের একটি জেলেপল্লি। সাগরে অল্প কয়েকটি নৌকা ও তীরে গ্রামবাসীর থাকার জন্য কিছু কুঁড়েঘর বাদে সেখানে আর কিছুই ছিল না। ১৯৫৯ সালের ২৯শে জুন নাখন রাচাসিমার সামরিক ঘাঁটিতে থাকা ৫০০ সদস্যের একটি আমেরিকান সেনাদল এক সপ্তাহের বিশ্রাম ও বিনোদনের জন্য পাতায়ায় যায়। ওই সেনারা সৈকতের দক্ষিণাঞ্চলের প্রান্তে স্থানীয় লোকদের কাছ থেকে কয়েকটি বাড়ি ভাড়া নেয়। 

তখন থেকে ঘুমন্ত জেলেপল্লির জন্য প্যান্ডোরার বাক্স খুলে যায়। আমেরিকান সেনাদের মধ্যে পাতায়ার সৌন্দর্যের খবর ছড়িয়ে পড়ে এবং এটি কংক্রিটের নগর ব্যাংককের পরিবর্তে জনপ্রিয় গন্তব্যে পরিণত হয়। ভূতাত্ত্বিক তথ্যব্যবস্থায় (জিআইএস) বিনোদনের জন্য সেরা সৈকত হিসেবে মানচিত্রে স্থান পায় পাতায়া।

বর্তমান ইউ-তাপাও বিমানবন্দর নামে পরিচিত পাতায়ার পাশের বান সাত্তাহি বিমানঘাঁটিতে যখন বিপুল পরিমাণে সেনারা আসতে শুরু করেন, তখন থেকেই বাড়তে থাকে পাতায়ার জাঁকজমক। এর প্রায় অর্ধশতাব্দী পর ভিয়েতনাম যুদ্ধ থেকে নিষ্কৃতি পাওয়া সেনা থেকে শুরু করে যৌন পর্যটক এবং থাইল্যান্ডের রেড লাইট অঞ্চলের বাসিন্দাদের গন্তব্যে পরিণত হয় পাতায়া।

ভিয়েতনাম যুদ্ধ চলাকালে থাইল্যান্ডে বিশ্রাম ও বিনোদনের সুবিধা সৃষ্টি করতে থাইল্যান্ড ও আমেরিকার মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ১৯৬৪ সালে পাতায়া সৈকতের অদূরে প্রথম আমেরিকান ঘাঁটি ইউ-তাপাওয়ে পৌঁছায় জিআইএস। তখন থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর প্রায় সাত লাখ আন্তর্জাতিক সেনাকে এক সপ্তাহের বিশ্রাম ও বিনোদনের জন্য থাইল্যান্ডে পাঠানো হয়।

থাইল্যান্ডের সমাজে জীবিকার জন্য দেহ ব্যবসা নতুন কিছু নয়। ১৬৮০ সালে আয়ুথাইয়া যুগ থেকেই সেখানে পতিতাবৃত্তি বৈধ। এমনকি সেখানে সরকার পরিচালিত যৌনপল্লি ছিল। তবে এ দেহ ব্যবসা কেবল ব্যাংকক অঞ্চলেই সীমাবদ্ধ ছিল। যখন থেকে আন্তর্জাতিক সেনারা আসতে শুরু করেন, তখন থেকেই যৌনকর্মীদের নতুন গন্তব্যে পরিণত হয় পাতায়া। 

যৌনকর্মীরা নতুন খদ্দেরদের সঙ্গে মানিয়ে নিতে শুরু করেন এবং তারা মুদ্রার বিনিময় হার সম্পর্কে জানতে পারেন। পাশাপাশি তারা আমেরিকার রক অ্যান্ড রোল ধারার সংগীত ও অশ্লীল শব্দের সঙ্গে পরিচিত হন। যুদ্ধে যাওয়ার সপ্তাহ খানেক আগে বিনোদনের জন্য ছুটে আসা তরুণ সেনাদের মনোরঞ্জন করতে থাকেন যৌনকর্মীরা।

বলা হয়ে থাকে, ‘ভালো লোকেরা স্বর্গে যায়, আর খারাপ লোকেরা পাতায়ায়।' এ অভিব্যক্তি পাতায়া শহরের স্লোগান বলে অনেকের কাছে প্রতীয়মান হয়। এ স্লোগানের মধ্যে বিদ্রূপের গন্ধ থাকলেও পাতায়ায় আসা অনেক পর্যটকের মানসিকতা যে এটাই, তা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়।

এইচ.এস/

থাইল্যান্ড

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন