সোমবার, ৪ঠা আগস্ট ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১৯শে শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ

*** নতুন সংবিধান রচনার ঘোষণা এনসিপির *** জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদদের তালিকা থেকে ৮ জনের নাম বাদ *** বাংলাদেশকে ১৫ কোটি ডলার ঋণ দেবে এডিবি *** স্বাস্থ্য খাত সংস্কারের সুপারিশ বাস্তবায়নে প্রধান উপদেষ্টাকে কমিশন সভাপতির চিঠি *** বৃষ্টি উপেক্ষা করে সিডনিতে ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভে লাখো মানুষ *** এনসিপির ‘নতুন বাংলাদেশের ইশতেহার’ ঘোষণা *** তিন দশকের রাজনীতিতে আমাদের নেতৃত্ব দিয়েছেন দুই শক্তিশালী নারী: মাহফুজ আনাম *** সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলবে ঐকমত্য কমিশন *** তারুণ্যের প্রথম ভোট ধানের শীষের জন্য হোক: তারেক রহমান *** গঙ্গাচড়ায় হিন্দুপল্লিতে হামলাকারীদের উসকানি, স্থানীয় সাংবাদিক গ্রেপ্তার

মেনোপজ পুরুষদেরও হয়! যে সময় এই সমস্যা দেখা দিতে পারে

নিউজ ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০৪:২২ অপরাহ্ন, ১লা আগস্ট ২০২৩

#

ছবি: সংগৃহীত

আমরা সবাই জানি একটা নির্দিষ্ট বয়সে সব মহিলারই মাসিক স্রাব স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যায় এবং এ অবস্থাকে মেডিকেল পরিভাষায় মেনোপজ বলে। এ মেনোপজের কারণে মহিলারা বেশকিছু সমস্যায় ভোগেন, যেমন শরীরে জ্বালাপোড়া, ডিপ্রেশন, যৌন চাহিদা কমে যাওয়া, হাড়ের ক্ষয় ইত্যাদি। শরীরের এই পরিবর্তনগুলো ঘটে ইস্ট্রোজেন নামক শরীরের বিশেষ একটি হরমোনের হঠাৎ পরিবর্তনের কারণে। 

ইদানীং অনেক গবেষণায় লক্ষ করা গেছে, শুধু মহিলারাই হরমোন পরিবর্তনের প্রভাবে ভোগেন না, মেনোপজে মহিলারা যে লক্ষণগুলো অনুভব করেন, পুরুষরাও একটি বয়সে হরমোন পরিবর্তনের কারণে একই রকম লক্ষণ অনুভব করছেন।

এ অবস্থাকে অনেকে বিজ্ঞানী ভাষায় ‘পুরুষ মেনোপজ’ বলে অভিহিত করেন। কিছু ডাক্তার এই সমস্যাটিকে অ্যান্ড্রোজেন (টেস্টোস্টেরন) হ্রাস বা হাইপো টেস্টোস্টেরন হিসেবে অভিহিত করেন।

পুরুষের মধ্যে মেনোপজ জাতীয় সমস্যা নারীদের মতো সুনির্দিষ্টভাবে বা নির্দিষ্ট কিছু বয়সে হঠাৎ করে পরিলক্ষিত হয় না। তবে এটা লক্ষণীয় যে, পুরুষের টেস্টোস্টেরনের মাত্রা বয়সের সঙ্গে সঙ্গে হ্রাস পায়। সাধারণত বয়স ২৫-এর পরে বছরে গড়ে ১% থেকে ২ পার্সেন্ট হারে হরমোনের লেভেল কমতে থাকে।

বয়স ৪৫ এর পরে এই মাত্রা উল্লেখযোগ্য পরিমাণ হ্রাস পায়। হরমোনের এই নেমে যাওয়ার প্রভাবে শরীরে কিছু প্রতিক্রিয়া পরিলক্ষিত হয়। যেমন যৌন চাহিদা কিছুটা কমে যাওয়া, শরীরের মাংসপেশির দৃঢ়তা কমে যাওয়া, সময় অসময়ে হঠাৎ মেজাজ বিগড়ে যাওয়া ইত্যাদি।

কিন্তু এ অবস্থাকে আমরা কখনোই অস্বাভাবিকতা বলি না। মানুষের জীবনে এই অস্বাভাবিকতাই আবার এক ধরনের স্বাভাবিকতা।

প্রাকৃতিক নিয়মেই জীবনে এ ধরনের কিছু ঘটনা ঘটবেই, এগুলোকে মেনে নিতে হবে। তবে সব ক্ষেত্রেই এসব প্রাকৃতিক নিয়ম ধরে ঘটে না। কিছু কিছু রোগ যেমন ডায়াবেটিস, অপিয়েট ও কেমোথেরাপিউটিক ড্রাগ, স্থূলতা ইত্যাদি কারণে কম বয়সেও হরমোনের ঘাটতি লক্ষ করা যায়।

আবার হরমোন স্বল্পতার কারণেই অনেক বয়স্ক পুরুষের মধ্যে নেমে আসে তীব্র কিছু শারীরিক ও মানসিক সমস্যা, যেমন ডিপ্রেশন, যৌন চাহিদা বেশি পরিমাণ কমে যাওয়া, শারীরিক দুর্বলতা ও অবসন্নতা, কাজকর্মে উৎসাহের অভাব ইত্যাদি।

যদিও অনেক বিজ্ঞানী টেস্টোস্টেরনের মাত্রা হ্রাসের সঙ্গে এই লক্ষণগুলোর সরাসরি সম্পর্ক নিয়ে সন্দেহ পোষণ করেন। তবে এসব ক্ষেত্রে বেশকিছু মেডিকেল ট্রায়ালে টেস্টোস্টেরন দিয়ে হরমোন থেরাপি গ্রহণকারীরা পুরুষ- মেনোপজের সঙ্গে যুক্ত এসব উপসর্গের উপশমের কথা জানিয়েছেন। 

মহিলাদের মেনোপজের সঙ্গে পুরুষ মেনোপজের মূল পার্থক্য হলো- যেখানে মহিলাদের হরমোন উৎপাদন সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যায়, পুরুষদের ক্ষেত্রে সেটা ঘটে না, বরং টেস্টোস্টেরন হ্রাস একটি ধীর প্রক্রিয়ায় ঘটে।

মহিলাদের ডিম্বাশয়ের মতো পুরুষের অন্ডকোষ হঠাৎ করে হরমোন তৈরির ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে না। ফলে মহিলারা যেখানে বয়স ৪৭ থেকে ৫০-এর মধ্যেই সন্তান জন্মদানের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন, সুস্থ পুরুষরা সেখানে তাদের ৮০ বা তার পরেও ভালোভাবে শুক্রাণু তৈরি করতে সক্ষম।

* কীভাবে পুরুষ ‘মেনোপজ’ নির্ণয় করা হয়?

পুরুষ মেনোপজ নির্ণয়ের জন্য সুনির্দিষ্ট তেমন কোনো পরীক্ষা নেই। রোগীর উপসর্গ যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। কিছু কিছু রোগ যেমন ডায়াবেটিস ও স্থূলতা এক্ষেত্রে বিরাট ভূমিকা রাখে। 

*পুরুষ ‘মেনোপজ’ চিকিৎসা করা যেতে পারে?

টেস্টোস্টেরনের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে কম হলে, টেস্টোস্টেরন প্রতিস্থাপন থেরাপি উপসর্গগুলো উপশম করতে সাহায্য করতে পারে।

আরো পড়ুন: ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ: কলকাতা পারলেও কেন পারছে না ঢাকা

মনে রাখতে হবে, মহিলাদের মধ্যে হরমোন প্রতিস্থাপন থেরাপির মতোই, টেস্টোস্টেরন প্রতিস্থাপন থেরাপিরও সম্ভাব্য ঝুঁকি এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। যাদের প্রোস্টেট ক্যান্সার রয়েছে বা প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে টেস্টোস্টেরন থেরাপি প্রয়োগ করা উচিত নয়। এ থেরাপি হৃদরোগের ও স্ট্রোকের ঝুঁকিও বাড়াতে পারে। 

তাই হরমোন রিপ্লেসমেন্টের পূর্বে অবশ্যই চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ গ্রহণ করা জরুরি। চিকিৎসক আপনার সমস্যাগুলো খুব যত্নসহকারে বিশ্লেষণ করবেন এবং হরমোনের স্বল্পতার সঙ্গে এর সমস্যাগুলোর সম্পর্ক কতোটুকু তা নির্ধারণ করবেন।

সমস্যার তীব্রতা ও ওষুধের ঝুঁকি বিবেচনা করেই তিনি রোগীকে হরমোন থেরাপির পরামর্শ দিতে পারেন। আপনার ডাক্তার পুরুষ মেনোপজের লক্ষণগুলো কমাতে নির্দিষ্ট জীবনধারা বা অন্যান্য পরিবর্তনের সুপারিশও করতে পারেন। এর মধ্যে রয়েছে:

-ডায়েট

-ব্যায়াম ও

-ওষুধ, যেমন এন্টিডিপ্রেসেন্ট।

প্রতিটি পুরুষই সারাটি জীবন তার পৌরুষত্ব ও শক্তি নিয়ে বাঁচতে চায়। আপনিও আপনার হরমোন মাত্রার পরিবর্তনজনিত সমস্যাগুলোর দিকে নজর দিন এবং সঠিক চিকিৎসা নিন।

অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আবদুল হাই 

এসি/ আই. কে. জে/

পুরুষ মেনোপজ!!

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন