নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ পৌরসভায় প্রায় আড়াই বছর ধরে নির্বাচন হচ্ছে না। জনপ্রতিনিধি না থাকায় পৌর এলাকার বাসিন্দারা নাগরিক সেবা থেকে হচ্ছেন বঞ্চিত। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, পৌরসভার সীমানা সংক্রান্ত জটিলতার সমাধান হলেও মন্ত্রণালয়ে পাঠানো নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্যের একটি চিঠির পর পৌর নির্বাচন আটকে আছে।
এব্যাপারে সোনারগাঁ পৌরসভা সংশ্লিষ্টরা বলেন, ২০০১ সালে গঠিত এই পৌরসভায় ২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর সর্বশেষ নির্বাচন হয়। ২০২১ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মেয়াদ শেষ হয়। পাশের মোগরাপাড়া ইউনিয়নের সঙ্গে পৌরসভার সীমানা নির্ধারণ সংক্রান্ত একটি মামলার কারণে পৌরসভার পরবর্তী নির্বাচন থমকে যায়। জনপ্রতিনিধিদের মেয়াদ শেষ হওয়ার ১৫ মাস পর পৌরসভা পরিষদ বিলুপ্ত ঘোষণা করে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়। সেই থেকে সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পৌরসভার প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করছেন।
এদিকে পৌরসভার কার্যক্রম বন্ধ থাকায় ভোগান্তির কথা জানিয়েছেন বাসিন্দারা। এব্যাপারে পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমরা পৌরসভার বাসিন্দারা অতিরিক্ত কর দিচ্ছি, কিন্তু কোনো নাগরিক সেবা পাচ্ছি না। আগে বাড়ির পাশের কাউন্সিলর কার্যালয়ে জন্মনিবন্ধন, ওয়ারিশ সনদের মতো সেবাগুলো পাওয়া যেত। রাস্তাঘাট, মশকনিধন কিংবা বর্জ্য সংগ্রহের মতো সেবাগুলো না পেলে কাউন্সিলরের কাছে যাওয়া যেত। কিন্তু এখন এগুলোর কিছুই হচ্ছে না। ছোটখাটো বিষয় নিয়ে ইউএনও অফিসে যেতে হয়। সাধারণ মানুষের পক্ষে ইউএনওর নাগাল পাওয়া সহজ বিষয় না।’
এব্যাপারে স্থানীয় সরকার বিভাগের নারায়ণগঞ্জ কার্যালয় কর্তৃপক্ষ বলেন, চলতি বছরের মার্চ মাসে পৌরসভার সীমানা সংক্রান্ত মামলার নিষ্পত্তি হয়। মামলা নিষ্পত্তির পর সোনারগাঁ উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) পৌরসভার সীমানা নির্ধারণ করেন। এরই মধ্যে গত ৯ মে নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য (জাতীয় পার্টি) লিয়াকত হোসেন পৌরসভার সীমানা বৃদ্ধির জন্য মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি লেখেন।
পৌর কার্যালয়ে একজন কর্মকর্তা পরিচয় গোপন রাখার শর্তে গণমাধ্যমকে বলেন, গত এপ্রিলে পৌরসভার নির্বাচনের একটি গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল। নির্বাচন মাথায় রেখে দাপ্তরিক নানান কাজও হচ্ছিল। সম্ভাব্য প্রার্থীরা তখন নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেন। এর মধ্যে মোগরাপাড়া ইউনিয়নভুক্ত নয়টি এলাকা পৌরসভার অন্তর্ভুক্ত করার জন্য সংসদ সদস্য একটি চিঠি লেখেন। তার পর থেকে নির্বাচনের কথা শোনা যাচ্ছে না।
পৌরসভার বিভিন্ন পদে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়া আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, সীমানা নির্ধারণ নিয়ে কারও আপত্তি না থাকলে নির্বাচন হতে বাধা ছিল না। কিন্তু সীমানা নিয়ে সংসদ সদস্যের পাঠানো চিঠিই এখন নির্বাচনে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁ) আসনের সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন মুঠোফোনে বলেন, ‘আমি পৌরসভার স্বার্থে চিঠি দিয়েছি। ব্যক্তিগত কোনো কারণ নেই। চিঠির সঙ্গে নির্বাচন হওয়া না হওয়ার সম্পর্ক নেই। আমি যতটুকু জানি, পৌরসভার সীমানা সংক্রান্ত জটিলতা এখনো কাটেনি। শুনেছি কয়েকজন সীমানা নিয়ে আপত্তি জানিয়েছেন। এ কারণে নির্বাচন আটকে আছে।’
তবে সীমানা নির্ধারণের দায়িত্বে থাকা সোনারগাঁয়ের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. ইব্রাহিম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সীমানা নির্ধারণের পর নির্দিষ্ট সময়ে এ নিয়ে কেউ আপত্তিও করেনি। আমরা সীমানা নির্ধারণ শেষে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি।’
এম.এস.এইচ/
খবরটি শেয়ার করুন