ফাইল ছবি (সংগৃহীত)
৫৫ মাসের দীর্ঘ বিরতির পর ঢাকার জাতীয় স্টেডিয়ামে যখন ফের জ্বলে উঠল ফ্লাডলাইট, তখন শুধু একখণ্ড আলো নয়—আলোকিত হলো পুরো জাতির আবেগ। ফুটবল ফিরে এসেছে তার তীর্থভূমিতে, আর সেই ফেরার ক্ষণকে স্মরণীয় করে রাখলেন এক ‘নতুন বাংলাদেশি’—হামজা চৌধুরী। দর্শকের কণ্ঠে ধ্বনি—‘বাংলাদেশ! বাংলাদেশ!’
সেই পুরোনো দিনের সুর যেন আবার ধ্বনিত হলো ঢাকার আকাশে। ভুটানকে ২-০ গোলে হারিয়ে ফুটবলের নিজ ভূমিতে ফেরার ক্ষণটাও হয়ে থাকল স্মরণীয়।
ম্যাচের মাত্র ৬ মিনিট, কর্নার নিতে এগিয়ে গেলেন জামাল ভূঁইয়া। ভুটানের রক্ষণে খেলোয়াড়দের ভিড়। সেই ভিড়ের মধ্যে হামজা চৌধুরী নামের প্রাণপ্রাচুর্যে ভরা লড়াকুর নিখুঁত হেড, বল ছুঁয়ে গেল ভুটানের জাল। সেই সঙ্গে স্টেডিয়ামের বুক কাঁপানো গর্জন—এ যেন বহুদিন পর হারানো কিছু ফিরে পাওয়ার উল্লাস!
ইংল্যান্ডে জন্ম, লেস্টার সিটির হয়ে প্রিমিয়ার লিগের রঙিন জার্সি গায়ে চাপিয়ে ৫৭টি ম্যাচে খেলে ক্যারিয়ারের মাত্র একটি গোল করেছেন। বাংলাদেশের হয়ে মাত্র দ্বিতীয় ম্যাচ, আর তাতেই ইতিহাসের পাতায় নাম লিখিয়ে ফেললেন এই মিডফিল্ডার। জাতীয় দলের জার্সিতে পেলেন নিজের প্রথম গোল।
গোল হজম করে কেমন যেন দিশেহারা ভুটান। এক অন্য রকম উন্মাদনা। মাঠে বাংলাদেশ আক্রমণাত্মক, আত্মবিশ্বাসে টইটম্বুর। ৩২ মিনিটে অভিষিক্ত ফাহামিদুল ইসলাম বাঁ দিক দিয়ে দৌড়ে গিয়ে ভয় ধরিয়ে দিয়েছিলেন প্রতিপক্ষ রক্ষণে। তার শট ফিরিয়ে দিলেন গোলকিপার।
কিছুক্ষণ পর জামালের শটও ঠেকালেন তিনি। তবে বল দখল, গতি ও আগ্রাসনে এগিয়ে ছিল স্বাগতিকরা। ভুটান প্রতি আক্রমণে চেষ্টা করেছে। কিন্তু তা যথেষ্ট ছিল না বাংলাদেশকে বিপদে ফেলতে।
বাংলাদেশ খেলেছে অনেকটা ওপরে উঠে, যেন হারিয়ে যাওয়া আক্রমণাত্মক ফুটবলের গন্ধ পাওয়া গেছে আবার। হামজা ছিলেন প্রায় প্রতিপক্ষের অর্ধ জুড়ে। রক্ষণে তার কাজ তেমন লাগেনি, বরং মাঝমাঠে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন তিনি।
বাংলাদেশের একাদশে আজ ছিল অভাবনীয় এক বৈচিত্র্য—পাঁচ প্রবাসী ফুটবলার একসঙ্গে! জামাল, হামজা, ফাহামিদুল, কাজেম, আর তারিক। রক্ষণে দুই ভাই—সাদ ও তাজ উদ্দিন। কিন্তু প্রথমার্ধে কিছুটা সমন্বয়ের অভাব চোখে পড়েছে। তাই দ্বিতীয়ার্ধে শুরুতেই তিন বদল আনেন কোচ কাবরেরা। তুলে নেন হামজা, জামাল ও কাজেমকে। নামান হৃদয়, মোরছালিন ও ইব্রাহিমকে। সামনে ১০ জুন সিঙ্গাপুরের সঙ্গে ম্যাচ, তাই সতর্কতাই শ্রেয়।
আর এ বদল যেন আনল আরেক উৎসব। ৪৮ মিনিটে সোহেল রানার ২৫ গজ দূরের ঝোড়ো শট কাঁপিয়ে দিল ভুটানের জাল। এরপর রাকিব হোসেন গোলের সামনে বল পেলেও একটু বাইরে মারেন। ৬০ মিনিটে রাকিব ও ফাহামিদুলকে তুলে আল-আমিন ও ফাহিমকে নামান কোচ। ফাহামিদুল বাঁ দিকের উইং ধরে যতটা খেলেছেন, খারাপ বলা যাবে না। প্রথম ম্যাচ হিসেবে পাশ নম্বর পাবেন।
এইচ.এস/
খবরটি শেয়ার করুন