বুধবার, ৭ই মে ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২৩শে বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ

*** দিল্লি না চাইলে আগবাড়িয়ে কিছু বলার প্রয়োজন দেখছে না বাংলাদেশ *** বজ্রপাতে দ্বিখণ্ডিত হয়ে গেল বিশাল মেহগনিগাছ *** কে কী বলল, যায় আসে না: আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগ নিয়ে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা *** নাটকীয়ভাবে দ্বিতীয় দফায় জার্মানির চ্যান্সেলর নির্বাচিত হলেন ম্যার্ৎস *** লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো সেই ৬ নারীর হেফাজতকে সাধুবাদ *** পর্তুগালের অনূর্ধ্ব–১৫ দলে ডাক পেলেন রোনালদোর ছেলে *** ‘সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশের ৯টি ধারা বাতিল, মামলাও বাতিল হবে’ *** ৩০ লাখ মানুষ ‘অতিদরিদ্র’ হওয়ার শঙ্কা নিরসনে প্রয়োজন জোরদার কর্মসূচি *** আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো যা লিখেছে খালেদা জিয়ার দেশে ফেরা নিয়ে *** ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার বিষয়ে নিরাপত্তা পরিষদে রুদ্ধদ্বার বৈঠক

৩০ লাখ মানুষ ‘অতিদরিদ্র’ হওয়ার শঙ্কা নিরসনে প্রয়োজন জোরদার কর্মসূচি

সম্পাদকীয়

🕒 প্রকাশ: ০৫:১৬ অপরাহ্ন, ৬ই মে ২০২৫

#

ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বব্যাংক পূর্বাভাস দিয়েছে, দেশে এ বছর আরও ৩০ লাখ মানুষ ‘অতিদরিদ্র’ হবেন। দেশে এমন শঙ্কার পরিবেশ তৈরি হয়েছে। ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট’ শিরোনামের প্রতিবেদনে দারিদ্র্য পরিস্থিতির এ অবনতির আশঙ্কা করে বিশ্বব্যাংক। এতে বলা হয়, ২০২৩-’২৪ থেকে ২০২৪-’২৫ অর্থবছরের মধ্যে প্রায় ৩০ লাখ মানুষ চরম দারিদ্র্যের কবলে পড়তে পারেন, যাদের দৈনিক আয় ২ দশমিক ১৫ ডলারের নিচে। 

সংস্থাটি জানায়, আগামী ৩০শে জুন শেষ হতে চলা ২০২৪-’২৫ অর্থবছরে দেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধি নেমে আসবে মাত্র ৩ দশমিক ৩ শতাংশে, যা গত ৩৬ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। মাত্র চার মাস আগে, জানুয়ারিতে বিশ্বব্যাংক ৪ দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধির আশা করেছিল। বিনিয়োগ কমে যাওয়া, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, আর্থিক খাতে দুর্বলতা ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে সেই আশাবাদ ফিকে হয়ে আসছে।

সম্পদের মানের অবনতি ও দুর্বল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কারণে দেশের ব্যাংক খাতের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মুখোমুখি হচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বলা হয়েছিল, প্রধান উপদেষ্টার ব্যক্তিগত ভাবমূর্তি ও ক্যারিশমায় দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক উন্নতি ঘটবে। ঘুরে যাবে সাধারণ মানুষের ভাগ্যের চাকা।

অন্তর্বর্তী সরকারের শুরু থেকে বিদেশি বিনিয়োগের আশ্বাস পাওয়া গেলেও বাস্তবে তা হচ্ছে না। বিদেশ থেকে শুধু বড় বিনিয়োগের হাতছানির খবর আসছে; বিনিয়োগ পাওয়া যাচ্ছে না। বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য দেশের ভেতরে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নেই বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত।

বর্তমান বাস্তবতায় দেশীয় বিনিয়োগ তা-ই কম। বিদেশি বিনিয়োগে স্থবিরতা, ব্যবসা-বাণিজ্যে অচলাবস্থা, এলসি না থাকায় নতুন শিল্প-কারখানা গড়ে উঠছে না। আবার শ্রমিক অসন্তোষসহ পরিবেশ না থাকায় অনেক ছোট-বড় শিল্প-কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ব্যবসার জন্য বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে নতুন ঋণ চাহিদা নেই। দেশি বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগে আসছেন না; ব্যবসা গুটিয়ে ফেলছেন কেউ কেউ।

বলা হচ্ছে, এসব কারণে আইএমএফের ঋণের তৃতীয় কিস্তি গত বছরের শেষ দিকে পাওয়ার কথা থাকলেও এখনো পর্যন্ত তা পাওয়া যায়নি। নানামুখী সঙ্কটে মানুষের হাত খালি, অর্থের প্রবাহ নেই। যে কারণে দেশে বেড়েছে দারিদ্র্যের হার। একই সঙ্গে বেড়েছে অতিদারিদ্র্যের হারও।

দেশের মানুষ খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অতিদারিদ্র্যের হার গোটা দেশে বেড়েছে। বিশ্বব্যাংকও সাম্প্রতিক এক পূর্বাভাসে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলে, অর্থনৈতিক কার্যক্রমে ধীরগতি ও শ্রমবাজার সঙ্কুচিত হয়ে আসায় বাংলাদেশে চলতি বছর নতুন করে ৩০ লাখ মানুষ অতিদারিদ্র্যের কবলে পড়তে পারেন।

বিশ্বব্যাংকের এ পূর্বাভাস দেশের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে আলোড়ন তুলেছে। তাদের মতে, বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাসের এ অবনমন শুধু একাডেমিক সমন্বয় বলে ধরে নেওয়ার অবকাশ নেই। এটি নির্মম বাস্তবতা। তাদের মতে, একদিকে জীবনযাত্রার খরচ বাড়ছে, অন্যদিকে মজুরি বাড়ছে না। ফলে প্রকৃত আয় কমে যাচ্ছে। 

আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ দিকে যে মূল্যস্ফীতি বেড়ে গিয়েছিল, নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার প্রায় নয় মাস পরও সেটা কমানো যায়নি। মূল্যস্ফীতির কারণে অতিগরিবের হার বেড়ে চললেও সরকার প্রতিকারে টেকসই কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেনি। সীমিত আয়ের মানুষের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিও চলছে ঢিমেতালে। 

গবেষকরা বলছেন, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, বিনিয়োগ কম, উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের ধীরগতি এবং রাজস্ব ঘাটতি এ সঙ্কটকে আরো তীব্র করছে। সমস্যা সমাধানে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি জোরদার করতে হবে এবং আরো মানুষকে এ কর্মসূচির আওতায় আনতে হবে। একই সঙ্গে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরি করলে কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়বে এবং মানুষ দারিদ্র্যসীমা থেকে উপরে উঠতে পারবে।

দেশের অর্থনীতির গতি মন্থর হওয়ার আরেকটি কারণ রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা। আমরা মনে করি, নির্বাচন নিয়ে যে ধোঁয়াশা আছে, সেটি কেটে গেলে ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হতে পারেন। সে ক্ষেত্রে কর্মসংস্থানও বাড়বে। দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র থেকে বেরিয়ে আসতে প্রয়োজন জোরদার ও সৃজনশীল কর্মসূচি।

এইচ.এস/



অতিদরিদ্র

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন