রবিবার, ৩রা আগস্ট ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১৯শে শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ

*** সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলবে ঐকমত্য কমিশন *** তারুণ্যের প্রথম ভোট ধানের শীষের জন্য হোক: তারেক রহমান *** গঙ্গাচড়ায় হিন্দুপল্লিতে হামলাকারীদের উসকানি, স্থানীয় সাংবাদিক গ্রেপ্তার *** যাত্রীর লাগেজটি নড়ছিল, খুলতেই ভেতরে ২ বছরের শিশু *** তারেক রহমান আসবেন, আমাদের নেতৃত্ব দেবেন, পথ দেখাবেন: মির্জা ফখরুল *** ১৮ তলা থেকে পড়ে বেঁচে গেল তিন বছরের শিশু *** ট্রাম্পের হুমকিতেও রাশিয়ার তেল কেনা অব্যাহত রাখবে ভারত *** নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর নির্বাচনী পর্ষদ উদ্বোধন করলেন প্রধান উপদেষ্টা *** এলপিজি ১২ কেজির সিলিন্ডারের দাম কমল ৯১ টাকা *** নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণে বিএনপির কমিটি

জনগণকে জিম্মি করে কোনো কর্মসূচিই গ্রহণযোগ্য নয়

উপ-সম্পাদকীয়

🕒 প্রকাশ: ০৩:১৪ অপরাহ্ন, ২৪শে নভেম্বর ২০২৪

#

ছবি - সংগৃহীত

গত ১৯শে নভেম্বর ঢাকা মহানগর এলাকায় তিন দিনের মধ্যে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। কারণ ত্রুটিপূর্ণ নকশায় নির্মিত ব্যাটারিচালিত রিকশাগুলোর বেপরোয়া গতির কারণে দুর্ঘটনাসহ নানা সমস্যার জন্ম দিচ্ছে।

এরপর থেকে টানা কয়েক দিন ধরে রাজধানীতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকরা। রবিবার ৭ দফা দাবি জানিয়ে এক সপ্তাহের আল্টিমেটাম দেন। গত কয়েক দিন রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের অবরোধের কারণে মানুষকে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে।

রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, মহাখালী, গাবতলী, কল্যাণপুর, আগারগাঁও, মিরপুর, পল্লবী, বসিলাসহ বিভিন্ন স্থানে ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকরা অবরোধ-বিক্ষোভ করেন, যার ফলে নগরজুড়ে ভয়াবহ যানজটের সৃষ্টি হয়। বহু মানুষ নির্দিষ্ট সময়ে কর্মস্থল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ গন্তব্যে যেতে পারেননি। বেশ কয়েকটি জায়গায় পুলিশের সঙ্গে রিকশাচালকদের সংঘর্ষ হয়েছে। এতে বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হন। কোথাও কোথাও সেনাবাহিনীর সাথেও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে রিকশাচালকরা। রোগীদের দ্রুততম সময়ে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। বেশ কিছু দিন ধরে ছুটির দিন ব্যতীত অন্যান্য দিনগুলো বিক্ষোভ-অবরোধে রাজধানী প্রায় অচল হয়ে পড়ে। মহাখালীতে রেলপথ অবরোধের কারণে ঢাকার সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।

এসব বাস্তবতায় অটোরিকশা চলাচল বন্ধ করে দেয়া ছাড়া বিকল্প নেই। তবে অটো রিকশাচালকরা বিকল্প রুট বা কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়েছেন। তাদের দাবিও সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। কারণ তেরো-চৌদ্দ লক্ষ রিকশা চালকদের বিকল্প ব্যবস্থা না করলে সমাজে আরেক ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হবে। কোনো মতেই  ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচলজনিত সমস্যাটি জিইয়ে রাখার সুযোগ নেই।

শুধু ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকরাই নন; শিক্ষার্থী, কারখানার শ্রমিকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ প্রতিদিনই নিত্যনতুন  দাবি-দাওয়া আদায়ে সড়ক অবরোধ করে থাকেন। যমুনা ফিউচার পার্কে স্বর্ণের দোকানে চুরি হয়েছে, তারাও এসে সড়ক অবরোধ করে রেখেছে। সবারই ধারণা, সড়কেই সব সমস্যার সমাধান।

অনেক সময় বিক্ষোভকারীরা ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে একপ্রকার অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করে, যা মোটেই কাম্য নয়। যেমন, গার্মেন্টশিল্প অধ্যুষিত গাজীপুরে প্রায়ই এ ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। গত তিন-চার মাস ধরে গাজীপুর, আশুলিয়া, সাভার অঞ্চলের গার্মেন্টস কারখানাগুলো বিভিন্ন দাবিতে একপ্রকার উত্তাল রয়েছে। প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও পোশাক কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনা ঘটছে। যার কারণে সড়ক অবরোধ করে আন্দোলনের ফলে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়, গাড়ি ভাঙচুর করে আতঙ্ক তৈরি করা হয়। এসব কারণে সড়কের উভয় দিকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে সড়ক দিয়ে চলাচলকারী মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়ে। একটি সড়ক অবরোধ করলে তার চাপ আশেপাশের কয়েক কিলোমিটার পর্যন্ত পড়ে।

আন্দোলন বা বিক্ষোভের প্রধান লক্ষ্যবস্তু সাধারণ মানুষ। তাদেরকে জিম্মি করে আন্দোলন করা হয়। কিন্তু এই সাধারণ মানুষ আন্দোলনের কোনো অংশ নয়। অথচ তাদেরকেই হয়রানির শিকার হতে হয়। এই প্রবণতা বন্ধ হওয়া দরকার। আন্দোলনের নতুন কৌশল বের করতে হবে। যাতে করে শুধু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষিত হয়, অন্য কারো ক্ষতি না হয়।

এখন আন্দোলনের মৌসুম চলছে। যে যার মতো যে কোনো দাবি নিয়ে রাস্তায় চলে আসছে। অথচ অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, এসব দাবি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সাধ্যের মধ্যেও নেই। আবার সরকার যেগুলো সমাধান করছে, সেটা শেষ হলে আরেকটা নিয়ে মাঠে নামছে। মনে হচ্ছে বিক্ষোভ-অবরোধের প্রতিযোগিতা চলছে। মনে রাখতে হবে, অবরোধ-ভাঙচুর কিংবা অন্যান্য ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড কখনোই দাবি আদায়ের মাধ্যম হতে পারে না।

জনগণকে জিম্মি  করে কোনো কর্মসূচিই গ্রহণযোগ্য নয়। কোনো সংগঠন বা পেশাজীবীর যৌক্তিক দাবি-দাওয়া থাকতেই পারে। তবে তা আদায়ে এমন কৌশল অবলম্বন করা উচিত নয়, যা নিরপরাধ মানুষের দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। দাবি আদায়ে প্রচলিত কৌশলের পরিবর্তন হওয়া জরুরি।
আই.কে.জে/

কর্মসূচি

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন