ছবি: সংগৃহীত
গরমে দেশে জনজীবন অতিষ্ঠ। প্রতিদিন তাপমাত্রা বাড়ছে। বৃষ্টির দেখা নেই। মানুষ গরমে হাঁসফাঁস করছে। এ অবস্থা থেকে স্বস্তি পেতে স্বাভাবিকভাবে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েছে। চাহিদা মতো বিদ্যুৎ না পেয়ে দিনের বড় একটি অংশে কষ্ট ভোগ করতে হচ্ছে। শহরের তুলনায় গ্রামের অবস্থা খারাপ।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ও পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) তথ্য বলছে, দৈনিক চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম হওয়ার কারণে লোডশেডিং দিতে বাধ্য হচ্ছে। সিস্টেম লসের কারণে গ্রাহক পর্যায়ে লোডশেডিংয়ের পরিমাণ বেড়ে যায়। বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, তবে এবারের লোডশেডিং গত বছরের মতো তীব্র হবে না।
গরম যত বাড়ছে, লোডশেডিং বৃদ্ধির আশঙ্কাও তত বাড়ছে। গত সপ্তাহে বিদ্যুৎ সরবরাহ না পেয়ে ঢাকায় প্রায় এক ঘণ্টা মেট্রোরেল বন্ধ ছিল। গ্যাস উৎপাদনে ও আমদানিতে অপ্রতুলতার কারণে শিল্পে গ্যাস সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করে বিদ্যুৎ কেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহ বাড়িয়েছে পিডিবি। এরপরও পর্যাপ্ত উৎপাদন করা যাচ্ছে না।
এখন পর্যন্ত দেশে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে গত বছরের ৩০শে এপ্রিলে ১৬ হাজার ৪৭৭ মেগাওয়াট। বিদ্যুতের চাহিদা ১৮ হাজার মেগাওয়াট পর্যন্ত পৌঁছতে পারে বলে মনে করছে বিদ্যুৎ বিভাগ। বর্তমান বাস্তবতায় অর্থ ও জ্বালানি সংকটে এ পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা কঠিন। ফলে আগামী দিনগুলোতে নিঃসন্দেহে লোডশেডিং বাড়বে।
দেশে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে মোট ৭১টি। এ ধরনের কেন্দ্রের বর্তমান সক্ষমতা ১২ হাজার ৩৩৩ মেগাওয়াট। এ কেন্দ্রগুলোর পূর্ণ সক্ষমতা ব্যবহার করতে হলে দৈনিক ২ হাজার ৪২০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের প্রয়োজন। জ্বালানি সংকটের কারণে সব বিদ্যুৎকেন্দ্র চালানোর সুযোগ নেই। পিডিবির দৈনিক জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালাতে গ্যাসের প্রয়োজন অন্তত ১ হাজার ৪০০ মিলিয়ন ঘনফুট।
পেট্রোবাংলা থেকে বিদ্যুতে গ্যাসের বরাদ্দ রয়েছে গড়ে সাড়ে ৯০০ মিলিয়ন ঘনফুটের মতো। তা দিয়েই গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্রগুলোকে রেশনিং করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে হচ্ছে পিডিবিকে। এতে কোনো না কোনো গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্র বন্ধ রাখতে হচ্ছে। ফলে মোট সক্ষমতার অর্ধেকের বেশি কেন্দ্র অলস পড়ে থাকছে।
এ ছাড়া গরমে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে প্রয়োজন দেড় লাখ টন ফার্নেস অয়েল ও ১৫-১৬ হাজার টন ডিজেল। দৈনিক কয়লার চাহিদা ৪০ হাজার টন। আমদানিকৃত বিদ্যুতসহ দেশে স্থাপিত বিদ্যুতের ক্ষমতা সব মিলিয়ে ২৬ হাজার ৯০০ মেগাওয়াট।
সরকারের পক্ষ থেকে বিগত সরকারের উপর দায় চাপিয়ে বলা হয়েছে, বিগত সময়ের ভুল নীতি ও পরিকল্পনার কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য জ্বালানির চাহিদা ও জোগানের ঘাটতি তৈরি হয়েছে। অর্থ সংকটে তৈরি হয়েছে জ্বালানি সংকট। সেটি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ঘাটতি। অন্তর্বর্তী সরকার অপচয় কমিয়েছে এবং খরচ নিয়ন্ত্রণ করছে। বিদেশি কোম্পানিগুলোর বকেয়া অনেকটা পরিশোধ করেছে। সামনে পরিস্থিতি আরও স্থিতিশীল হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এখন ভর্তুকি দিয়ে খরচ বাড়িয়ে উৎপাদন বাড়াতে গেলে সামষ্টিক অর্থনীতিতে তা সামাল দেওয়া কঠিন হবে বলে। লোডশেডিং একবারে বন্ধ এখন হবে না। বর্তমানে সাড়ে ১৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। গরমের কারণে সামনে ১৮ হাজার মেগাওয়াট পর্যন্ত চাহিদা বাড়বে। তেলভিত্তিক কেন্দ্রগুলোতে উৎপাদন আরও বাড়াতে হবে। দোষারোপের রাজনীতি বাদ দিয়ে জনজীবনে স্বস্তি দিতে লোডশেডিং সহনীয় পর্যায়ে রাখতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
এইচ.এস/