এনায়েত করিম চৌধুরী। ছবি: সংগৃহীত
গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্ট পরিচয় দেওয়া এনায়েত করিম চৌধুরীকে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে একজন পুলিশের কর্মকর্তা অভ্যর্থনা জানিয়েছিলেন। এমনকি ওই কর্মকর্তা তাকে ব্যবহারের জন্য একটি প্রাডো গাড়িও দিয়েছিলেন। ওই পুলিশ কর্মকর্তা সোনারগাঁও হোটেলে গিয়ে এনায়েত করিমের সঙ্গে দেখাও করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সন্ত্রাসবিরোধী আইনে পুলিশের করা মামলায় বর্তমানে দুই দিনের রিমান্ডে রয়েছেন এনায়েত করিম চৌধুরী।
এনায়েত করিমকে গত শনিবার (১৩ই সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মন্ত্রিপাড়া হিসেবে পরিচিত রাজধানীর মিন্টো রোডে একটি প্রাডো গাড়িতে করে সন্দেহজনক ঘোরাঘুরির সময় আটক করে পুলিশ।
পুলিশ জানায়, তার কাছ থেকে দুটি আইফোন জব্দ করা হয়েছে। প্রাথমিক বিশ্লেষণে ফোনে সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য পাওয়া যায়। পরে তাকে হেফাজতে নেয় পুলিশ এবং ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠায়। তার মোবাইল ফোন ও বক্তব্য বিশ্লেষণ করে গত রোববার (১৪ই সেপ্টেম্বর) তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে রমনা থানায় মামলা করে পুলিশ। তিনি ৬ই সেপ্টেম্বর নিউইয়র্ক থেকে ঢাকায় আসেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, তিনি ৬ই সেপ্টেম্বর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামার পর পুলিশের ডিআইজি পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা তাকে অভ্যর্থনা জানান। ওই কর্মকর্তা তাকে একটি পাঁচ তারকা হোটেলে নিয়ে যান। ব্যবহারের জন্য তাকে ঢাকা মেট্রো–ঘ–১৭–১১৩৮ সিরিয়ালের একটি প্রাডো গাড়িও দেন।
অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, এটি প্রথম নিবন্ধন ছিল রাজধানীর মতিঝিলের সাদ সিকিউরিটিজ লিমিটেড নামের একটি ব্রোকার হাইসের নামে। এই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন। তিনি গত বছর গাড়িটি দেনার কারণে তার একসময়ের ব্যবসায়িকে পার্টনার সোলায়মান রুবেল নামের এক ব্যক্তিকে দিয়ে দেন।
দেলোয়ার হোসেন বলেন, তিনি ২০২৪ সালে একটি ঝামেলায় পড়েছিলেন। সে সময় তার কাছে সোলায়মান রুবেল টাকা পেতেন, টাকার বিনিময়ে তিনি গাড়িটি সোলায়মান রুবেলকে দিয়ে দেন।
গাড়িটির বিআরটিএ নথিতে দেখা গেছে, চলতি বছরের ২৭শে ফেব্রুয়ারি গাড়িটির মালিকানা পরিবর্তন হয়। সেখানে যে মোবাইল নম্বর দেওয়া হয়েছে, সেটি নুরুল আফসার নামের এক ব্যক্তির। তিনি বনানীর রেয়ার গ্রুপ নামের একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। প্রতিষ্ঠানটির গাজীপুরের শ্রীপুরে জমির ব্যবসা রয়েছে।
এ বিষয়ে নুরুল আফসার সোমবার (১৫ই সেপ্টেম্বর) রাতে বলেন, মোবাইল নম্বর তার হলেও গাড়িটি তাদের কি না—তা তিনি নিশ্চিত নন। তবে গাজীপুরের শ্রীপুরে তাদের কোম্পানির জমির ব্যবসা রয়েছে। তিনি গত শনিবার ঢাকায় ছিলেন না। গাড়ির বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না।
এদিকে গ্রেপ্তার বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকান নাগরিক এনায়েত করিম চৌধুরীকে (৫৫) সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় দুই দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। সোমবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আতিকুর রহমান তার রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এনায়েত করিমকে সকালে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। গত শনিবার ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারার মামলায় তাকে সাত দিনের রিমান্ডে নিতে পুলিশের আবেদনের ওপর রোববার শুনানির দিন ধার্য ছিল।
তবে সোমবার আদালতে হাজির করে তাকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। পরে তদন্ত কর্মকর্তা রমনা থানার উপপরিদর্শক আবু হানিফ এই মামলায় তার ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। বিকেলে শুনানি শেষে আদালত দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এদিকে নিয়মিত মামলা রুজু হওয়ায় ৫৪ ধারার মামলা থেকে এনায়েত করিমকে অব্যাহতি দেওয়া হয় বলে জানান সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা।
খবরটি শেয়ার করুন