ছবি: সংগৃহীত
পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ টক-মিষ্টি লটকন ছোট-বড় সবার কাছে বেশ জনপ্রিয়। সম্প্রতি খাগড়াছড়ি জেলার পাহাড়ি অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে লটকন চাষ শুরু হয়েছে। কম পরিশ্রম আর কম পুঁজিতে বেশি লাভের সুযোগ থাকায় লটকন চাষে আগ্রহী হচ্ছেন তারা। বাজারে প্রতি কেজি লটকন ১০০-১২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
পাহাড়ি মাটি যেন এ অঞ্চলের লোকদের জন্য আশীর্বাদ। পাহাড়ের মাটিতে কৃষির অপার সম্ভাবনা লুকিয়ে আছে। এসব মাটিতে যা কিছু ফলায় তারই বাম্পার ফলন হয়।
একটা সময়ে পাহাড়ের ঢালু জমিতে জন্ম নেয়া লটকন ফল অবহেলায় নষ্ট হয়ে গাছের নিচে পড়ে থাকতো। কালের বিবর্তনে পাহাড়ে দিন দিন ব্যাপকহারে চাহিদা বাড়ছে টক-মিষ্টি এ ফলটির। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে স্থানীয়দের প্রয়োজন মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে লটকনের ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয়েছে।
জেলার ব্যঙ্গমারা, সাপমারা, মোহাম্মদপুর, আটবাড়িসহ মাটিরাঙ্গার বিভিন্ন আনাচে কানাচে এ ফলটির গাছ রয়েছে। স্থানীয় বাঙালিদের লটকন ফলটি চাকমা ভাষায় ‘পচিমগুল’, মারমা ভাষায় ‘ক্যানাইজুসি’ ও ত্রিপুরা ভাষায় ‘খুচমাই’ নামে পরিচিত। জুন মাসের মাঝামাঝি সময়ে পাকতে শুরু করে লটকন। এ সময়ে বাজারেও আসতে শুরু করে ফলটি।
মাটিরাঙ্গা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৭ হেক্টর জমিতে লটকন আবাদ করা হয়। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ২৮ মেট্রিক টন।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৯ হেক্টর জমিতে লটকন আবাদ করা হয়। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৩১ মেট্রিক টন। উচ্চ ফলনশীল লটকন গাছের গোড়া থেকে শুরু করে প্রতিটি থোকায় থোকায় ঝুলতে দেখা যায়।
আরও পড়ুন: পাট কাটা, ধোয়া ও শুকানোয় ব্যস্ত সময় কাটছে কৃষকদের
মাটিরাঙ্গার নবীনগরে আলম মিয়ার পাহাড়ের ঢালুতে প্রায় ৭০টি লটকন গাছ আছে। প্রতিটি গাছে ঝুলছে সোনালি, হলুদ রঙের লটকনের থোকা। লটকন বিক্রি করে নিজের পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে কিছু টাকা সঞ্চয় করতে পারবেন বলে তিনি জানান।
ব্যাঙমারা ও সাপমারা থেকে মাটিরাঙ্গা বাজারে লটকন বিক্রি করতে আসা কুহেলী ও ঝর্ণা ত্রিপুরা জানান, তাদের বাড়ির পাশে লটকন গাছ আছে। এবার লটকন বিক্রি করে লাখ টাকা আয়ের স্বপ্ন দেখছেন তারা।
মাটিরাঙ্গা উপজেলা উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মো. আমির হোসেন বলেন, বেশি পরিমাণে গাছপালা ও ছায়া থাকায় পাহাড়ি এলাকার মাটি লটকন চাষের জন্য খুবই উপযোগী। কম পুঁজি ও পরিশ্রমে বেশি লাভবান হওয়ায় কৃষকরা বাণিজ্যিকভাবে লটকন চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।
এসি/ আই.কে.জে/