শুক্রবার, ৩রা অক্টোবর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১৭ই আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ

*** মর্ত্য ছেড়ে কৈলাসে ফিরলেন দুর্গতিনাশিনী *** শহিদুল আলমের জাহাজ এখনো আটক হয়নি, দিলেন ভিডিওবার্তা *** পাকিস্তানকে হারিয়ে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ শুরু *** এনসিপিকে শাপলা দিলে মামলা করব না, তবে ইসি দিতে পারে না: মান্না *** শুধু থালাবাটি নয়, এনসিপির জন্য আছে লাউ-বেগুন-কলাসহ ৫০ প্রতীক *** ঝড় উপেক্ষা করে গাজার পথে ফ্লোটিলা, শহিদুল আলমের ভিডিও বার্তা *** ইসরায়েলি সব কূটনীতিককে কলম্বিয়া থেকে বের হয়ে যাওয়ার নির্দেশ প্রেসিডেন্ট পেত্রোর *** এআই ‘অভিনেত্রী’-কে ঘিরে যে কারণে তীব্র সমালোচনা, ক্ষুব্ধ হলিউড তারকারা *** ফ্লোটিলা থেকে আটক ২২৩ জনকে ইউরোপে পাঠাবে ইসরায়েল, জাহাজগুলোর ভাগ্য অনিশ্চিত *** নিঃসঙ্গতা কাটাতে ৭৫ বছর বয়সে বিয়ে, অতঃপর...

সাদাপাথর লুটের দায় কার

সম্পাদকীয়

🕒 প্রকাশ: ০৬:৫০ অপরাহ্ন, ২৫শে আগস্ট ২০২৫

#

ফাইল ছবি

সিলেটের কোম্পনীগঞ্জের ভোলাগঞ্জে সাদা পাথর লুটের ঘটনা নিয়ে সারাদেশে তোলপাড়  চলছে। আগে এতকিছু লুট হলেও পাথর লুটের ঘটনা এবারই প্রথম। সাদা পাথর কেবল একটি অর্থনৈতিক সম্পদ নয়, এটি ভূতাত্ত্বিক ও পরিবেশগত ঐতিহ্য। একসঙ্গে বিপুল পরিমাণ পাথর উত্তোলনের ফলে নদীর প্রবাহ পরিবর্তিত হয়, ভাঙন বাড়ে, জলজ জীববৈচিত্র‌্য হুমকিতে পড়ে। ফলে পরিবেশের মারাত্মক বিপর্যয় ঘটে। পরিবেশ ধ্বংস হলে কৃষি, পর্যটন, জীববৈচিত্র্য ও স্থানীয় অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর একশ্রেণির দুর্বৃত্ত সারাদেশে লুটপাট করে যাচ্ছে। তার ধারাবাহিকতায় সিলেট জেলায় পাথর লুট শুরু হয়। এ সময় গোয়াইনঘাটের জাফলং, বিছনাকান্দি, কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জ পাথর কোয়ারি, শাহ আরেফিন টিলা, সংরক্ষিত বাংকার এলাকা ও উৎমাছড়া এবং কানাইঘাটের লোভাছড়ার পাথর লুট শুরু হয়। গত কয়েক মাস ধরে সংঘটিত গণলুটে প্রায় ৮০ শতাংশ পাথর লুট হয়ে গেছে।

বর্তমানে নির্মাণ খাতে পাথরের ব্যাপক চাহিদা। অভ্যন্তরীণ চাহিদার বড় একটি অংশ সিলেটের কোয়ারিগুলো থেকেই পূরণ হয়। সিলেটে প্রতি ঘনফুট পাথর ৬০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হয়। সে হিসাবে সিলেট এলাকা থেকে যে পাথর লুট করা হয়েছে, তার বাজারমূল্য প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা।

২০২০ সালের আগে পর্যন্ত সিলেট অঞ্চলের আটটি কোয়ারি থেকে ইজারা দিয়ে পাথর উত্তোলনের সুযোগ দেওয়া হত। কিন্তু প্রতিবেশের ভয়াবহ ক্ষতির কারণে সরকার ২০২০ সালের পর থেকে আর ইজারা দেয়নি। পরিবেশ অধিদপ্তর জাফলংসহ বেশ কয়েকটি এলাকা ‘প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা’ ঘোষণা করে এবং সেখানে উত্তোলনকে আইনে দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভিন্ন ইস্যুতে মতপার্থক্য থাকলেও পাথর উত্তোলনের ক্ষেত্রে আশ্চর্যজনকভাবে ঐকমত্য গড়ে উঠেছে। গণমাধ্যমে বলা হয়েছে, বিএনপি, এনসিপি, জামায়াত ও আরো কয়েকটি দলের প্রভাবশালী স্থানীয় নেতারা ও প্রশাসনের প্রতিটি স্তরের কর্মকর্তারা পাথর লুটের সঙ্গে জড়িত।

প্রশ্ন উঠেছে এই লুটপাটের দায় কার? কারণ, স্থানীয় প্রশাসনের যোগসাজশে কিংবা নিস্ক্রিয়তার কারণে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের ছত্রছায়ায় একদল দুর্বৃত্ত কয়েক মাস ধরে সাদা পাথর লুট করেছে। প্রশাসন দেখেও না দেখার ভান করেছে। অন্যদিকে রাজনৈতিক দলগুলো বৈরী মনোভাব ত্যাগ করে একত্রে এই লুটপাটে সাহায্য করেছে।

সুতরাং সব মিলিয়ে দেখা যাচ্ছে, সিলেটের পাথর লুটে রাজনৈতিক ব্যক্তিরা, প্রশাসনের কর্মকর্তারা, স্থানীয় প্রভাবশালী নেতারা নৌকা, ট্রাক, ট্রাক্টর ও ক্রাশার মেশিনের মালিকরা সবাই  লুটপাট থেকে সরাসরি লাভবান হয়েছে। প্রশাসন, রাজনৈতিক নেতা ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের এই অশুভ আঁতাতের কারণেই সাদা পাথর প্রায় নিঃশেষ হয়েছে।

সাদা পাথর গণলুট রাজনৈতিক দুর্নীতি ও প্রশাসনিক ব্যর্থতার প্রতীক। এই দায় কোনোভাবেই এড়ানো যাবে না। এখনই সময় কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া ও দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করা। তা না হলে ভোলাগঞ্জের মতো একের পর এক পর্যটনকেন্দ্র ধ্বংস হয়ে যাবে।

পাথর উত্তোলনের বিরুদ্ধে এর মধ্যে প্রশাসনের ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি লোকদেখানো বলে দাবি করেছেন পরিবেশবিদেরা। যখনই পাথর লুট নিয়ে হইচই হয়, তখন প্রশাসন কিছুটা নড়েচড়ে বসে। একদিকে পাথর উত্তোলনের বিরুদ্ধে অভিযান, অন্যদিকে নির্বিচার পাথর উত্তোলন—এই দ্বৈতনীতি চলতে পারে না। কোয়ারি থেকে পাথর লুট বন্ধ করতে হলে নেপথ্যের কুশীলবদের আইনের আওতায় আনতে হবে।

সরকারের নানামুখী অভিযান ও তৎপরতার মধ্যেও সিলেট অঞ্চলে অবৈধ পাথর উত্তোলন বন্ধ হচ্ছে না। সহযোগী একাধিক দৈনিক পত্রিকার সরেজমিন প্রতিবেদনে দেখা যায়, সিলেটের বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্র ও ইজারা বন্ধ থাকা কোয়ারি থেকে  অবাধে পাথর তোলা হচ্ছে। হাজার হাজার শ্রমিক নদীর পাড়ে জমা করে রাখা পাথর টুকরিতে ভরে বাল্কহেডে ওঠাচ্ছেন। এমনকি কোথাও কোথাও খননযন্ত্র দিয়ে পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে।

সিলেট সাদা পাথর কোম্পানীগঞ্জ

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন

Footer Up 970x250