ছবি - সংগৃহীত
রাজধানীতে ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহারে রাশ টানার পরামর্শ দিয়েছে অর্থনৈতিক কৌশল পুনর্নির্ধারণ-সংক্রান্ত সরকারি টাস্কফোর্স। এ জন্য সড়ক ব্যবহারে মাশুল ধার্য ও সহজ শর্তে গাড়ি কেনার জন্য ঋণ না দেয়ার কথা বলা হয়েছে। প্রতিবেদনে ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার নিরুৎসাহিত করার সুপারিশ করা হয়েছে। এ জন্য রাজধানীতে কত গাড়ি চলতে পারবে, সেই সংখ্যা নির্ধারণ করে দেয়ার কথা বলা হয়েছে। গ্যাস ও বিদ্যুৎ ব্যবহারের জন্য যেমন টাকা ব্যয় করতে হয়, তেমনি সড়ক ব্যবহারে গাড়ির জন্য মাশুল ধার্য করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। ব্যাংক থেকে সহজ শর্তে গাড়ি কেনার ঋণ কমিয়ে আনা এবং গাড়ির অবৈধ পার্কিংয়ের জন্য জরিমানা বাড়ানোরও প্রস্তাব করা হয়। প্রতিবেদনে রাইড শেয়ারিং সেবার ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় জোর দেওয়া হয়েছে। ব্যাটারিচালিত রিকশা, লেগুনা, দুরন্তর মতো যানের চলাচল বন্ধের পরামর্শ দিয়ে বড় ও দ্বিতল বাস বাড়ানোর কথা বলেছে টাস্কফোর্স কমিটি।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) গবেষণা অনুযায়ী, রাজধানীতে বর্তমানে গাড়ি রয়েছে সাড়ে ১৩ লাখ। এর মধ্যে ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা সাড়ে ১০ লাখ। ঢাকার রাস্তায় প্রতিদিন যোগ হয় ২৫০ গাড়ি অর্থাৎ বছরে ৯০ হাজার। এর মধ্যে ৭০ হাজারই ব্যক্তিগত গাড়ি। ফলে ঢাকায় প্রতিদিনই বাড়ছে গাড়ির চাপ, বাড়ছে যানজট। ব্যক্তিগত গাড়ি সড়কের অর্ধেকের বেশি জায়গা দখল করে রাখে। অন্যদিকে, গণপরিবহনে একই পরিমাণ জায়গায় বসে ও দাঁড়িয়ে ১৫-২০ জন যাত্রী চলাচল করতে পারেন। সেই হিসাবে যে পরিমাণ ব্যক্তিগত গাড়ি তা ঢাকার রাস্তার অর্ধেকের বেশি দখল করে রাখে। বাকি অংশ থাকে গণপরিবহন ও অবৈধ দখলে।
ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করা অনেকটাই কঠিন। তবে এটা হ্রাস অবশ্যই প্রয়োজন আছে। কিন্তু তাদের বিকল্প ব্যবস্থা করে দিতে হবে। যানজট দূর করার জন্য ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি গণপরিবহনের মানও বাড়াতে হবে। প্রাইভেট গাড়ির ব্যবহার নিরুৎসাহীত করতে হবে। যানজট নিরসনে শহরের রাস্তাগুলোও দখলমুক্ত করতে হবে।
পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোর অভিযোগে বলা হয়েছে, রাজধানীর মানুষ প্রতিনিয়ত দুঃসহ যানজটের শিকার। আর যানজটের প্রধান কারণ গণপরিবহন ব্যবস্থার নৈরাজ্য ও অনিয়ন্ত্রিতভাবে প্রাইভেট কার বৃদ্ধি পাওয়া। রাজধানীর ৫ শতাংশ বাসিন্দা চলেন প্রাইভেট কারে। এজন্য সড়কের ৭০ ভাগ জায়গা দখল করে রাখেন। এরপরও ঢাকা শহরে প্রতিদিন শতাধিক নতুন কারের নিবন্ধন দেয়া হচ্ছে। যানজট নিরসনে প্রাইভেট কার নিয়ন্ত্রণবিষয়ক নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে।
এদিকে রাজধানী ঢাকায় ভয়াবহ যানজটের আরেকটি কারণ, অভিজাত শ্রেণীর দেড় শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে ঘিরে অর্ধ লক্ষাধিক প্রাইভেট গাড়ির আনাগোনা। এসব গাড়ি শুধু শিক্ষার্থীকে স্কুলে পৌঁছে দেয়া বা স্কুল থেকে নিয়ে যাওয়ার কাজেই ব্যবহার হয়। আবার অনেক গাড়ি দিনভর স্কুলের আশপাশের রাস্তায় কয়েক সারিতে পার্কিং করে রাখা হয়।
বিআরটিএ’র পরিসংখ্যান বলছে, গত ৮ বছরে এই শহরে প্রাইভেট কারের সংখ্যাই বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। উন্নত দেশগুলোর মতো বাংলাদেশেও এই গাড়ির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে সড়ক আইন আছে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন আইন-২০১৭-তে ব্যক্তি বা পরিবার প্রতি গাড়ি সংখ্যা নির্ধারণ করে দেয়া আছে। কিন্তু কেউ-ই আইনের তোয়াক্কা করছে না।
রাজধানীতে বাড়ছে না সড়ক। অথচ প্রতিনিয়তই বাড়ছে গাড়ির চাপ, বাড়ছে যানজট। নতুন গাড়ির সিংহভাগই ব্যক্তিগত গাড়ি। যা যানযটের অন্যতম প্রধান কারণ।
আই.কে.জে/