ছবি : সংগৃহীত
১৯৪৮ সালে শ্রীলঙ্কা স্বাধীনতা লাভ করে। তারপর থেকে ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টি (ইউএনপি) এবং শ্রীলঙ্কা ফ্রিডম পার্টি এই দুইটি প্রভাবশালী দল কিংবা তাদের জোট দেশটি শাসন করেছে। এই দীর্ঘ ইতিহাস ভেঙে রেকর্ড গড়েছেন ন্যাশনাল পিপলস পাওয়ার (এনপিপি) নেতা অনূঢ়া কুমারা দিশানায়েক।
৫৫ বছর বয়সী দিশানায়েক শ্রীলঙ্কার নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি ন্যাশনাল পিপলস পাওয়ার (এনপিপি) নামে জোটের নেতৃত্ব দিয়েছেন, কিন্তু তাঁর দলের নাম জনতা বিমুক্তি পেরামুনা (জেভিপি)। এই দলটি এতোদিন ক্ষমতা তো দূরের কথা বিরোধী দলও হতে পারেনি। সংসদের ২২৫ আসনের মধ্যে তাদের আসন ছিল মাত্র তিনটি। সেই দলের নেতৃত্ব দিয়েই তিনি চমক দেখালেন।
গত ২১শে সেপ্টেম্বর ভোটে প্রথম দফার গণনায় কোনো প্রার্থী মোট ভোটের ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পায়নি। সেখানে দিশানায়েক ৪২ দশমিক ৩১ শতাংশ এবং নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিরোধীদলীয় নেতা সাজিদ প্রেমাদাসা পান ৩২ দশমিক ৭৬ শতাংশ ভোট। দ্বিতীয় দফা ভোট গণনা শেষে ১২ লক্ষের বেশি ভোটের ব্যবধানে তিনি বিজয়ী হন। তিনি একটি সাধারণ পরিবারের সন্তান। কিন্তু তিনি যাদের সাথে লড়েছেন তারা প্রত্যেকেই শ্রীলঙ্কার ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান। সাজিদ প্রেমাদাসা, যিনি সাবেক প্রেসিডেন্ট রানাসিংহে প্রেমাদাসার ছেলে। নমাল রাজাপক্ষে, যিনি সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপক্ষের ছেলে। আর অন্যজন তো বর্তমান প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহ।
জনতা বিমুক্তি পেরামুনা (জেভিপি) দলটি দীর্ঘদিন রাজনীতিতে কোনঠাসা ছিল। কারণ ১৯৭১ ও ১৯৮০ সালে দুবার রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে মার্ক্সবাদী বিদ্রোহের নেতৃত্ব দিয়েছেন। তৎকালীন সরকারের দমন-পীড়ন, গণগ্রেপ্তার, নির্যাতন, অপহরণ ও গণহত্যায় দলের প্রতিষ্ঠাতা ও শীর্ষ নেতারাসহ প্রায় ৬০ হাজার মানুষ নিহত হন।
দিশানায়েক ২০১৪ সালে দলের হাল ধরে পূর্বের অপবাদ থেকে দলকে মুক্ত করতে চেষ্টা চালান। যার ফলে মাত্র দশ বছরেই ক্ষমতার স্বাদ পেয়েছে দলটি।
নির্বাচনে দিশানায়েক ‘সামাজিক ন্যায়বিচার ও দুর্নীতিমুক্ত দেশ' গঠনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। জনগণ তাঁর প্রতিশ্রুতিতে আশ্বস্ত হয়ে ভোট দিয়েছে। দিশানায়েকের আহ্বানে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশা বিশেষ করে বুদ্ধিজীবী, শিল্পী, অবসরপ্রাপ্ত সামরিক ও পুলিশ এবং ট্রেড ইউনিয়নের মধ্যে একটি বৃহত্তর জোট গড়ে উঠেছিল।
২০২২ সালে শ্রীলঙ্কার রাজনীতিতে বাঁক বদল ঘটে। দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে অর্থনীতি ভেঙে পড়ে, আকাশ ছোঁয়া মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে যায়। যার কারণে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে ও তার ভাই প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দ্রা রাজাপক্ষে গণআন্দোলনে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়। তখন থেকে জনগণ মূল দুই জোটের বাইরে নতুন একজনকে দেখতে চেয়েছিল। সেটাই হয়েছে। তৃতীয় জোট থেকে নতুন নেতা অনূঢ়া কুমারা দিশানায়েক প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন।