ছবি: সংগৃহীত
দক্ষিণ কোরিয়ার জেজু দ্বীপের হ্যানেয়ো নারীরা শত শত বছর ধরে সমুদ্রের তলদেশ থেকে শৈবাল, অ্যাবালোনসহ নানা সামুদ্রিক খাবার সংগ্রহ করে আসছেন। অক্সিজেন ট্যাংক ছাড়া দিনের পর দিন, ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঠাণ্ডা জলে ডুবে থেকে এ সংগ্রহের কাজ করেন তারা। এবার বিজ্ঞানীরা তাদের শরীরে এমন এক জিনগত পরিবর্তনের সন্ধান পেয়েছেন, যা এ ব্যতিক্রমী সামুদ্রিক জীবনযাপনের পেছনের রহস্য উন্মোচনে সাহায্য করেছে।
সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণা বলছে, হ্যানেয়ো নারীদের ডিএনএ-তে এমন দুটি পরিবর্তন পাওয়া গেছে, যা তাদের ডুবসাঁতারে অনন্য করে তুলেছে। এর মধ্যে একটি পরিবর্তন মূলত ডুব দেওয়ার সময় নারীদের রক্তচাপ কমিয়ে রাখে। এর ফলে গর্ভবতী অবস্থাতেও তারা নিরাপদে ডুব দিতে পারেন। খবর সিএনএনের।
দ্বিতীয় পরিবর্তনটি ঠাণ্ডা থেকে সৃষ্ট যন্ত্রণার সহনশীলতা বাড়ায়। এর ফলে শীতের মৌসুমে যখন জেজু দ্বীপের বাতাস জমে যাওয়ার মতো ঠাণ্ডা থাকে, তখনো তারা অনায়াসে পানিতে নামেন।
গবেষক মেলিসা ইলার্ডো বলেন, ‘আমি ৮০ বছরের হ্যানেয়োদের দেখেছি চলন্ত নৌকা থেকে সরাসরি সাগরে ঝাঁপ দিতে। এটা যেন মানুষের শরীরের সীমা ছাপিয়ে যাওয়া এক ক্ষমতা।’
সম্প্রতি ‘সেল রিপোর্টস’-এ এই সংক্রান্ত গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়, জীবন্ত জলপরি হিসেবে খ্যাত হ্যানেয়ো নারীদের হৃৎস্পন্দনের মাত্রা একেকটি ডাইভে নাটকীয়ভাবে কমে যায়। অভিজ্ঞ ডুবুরিদের ক্ষেত্রে হৃৎস্পন্দনের এ হার মিনিটে প্রায় ৪০ বার পর্যন্ত কমে আসে, যা অক্সিজেন ধরে রাখার একটি চমৎকার কৌশল।
জেজু দ্বীপের স্থানীয় ভাষার সংক্ষিপ্ত রূপও এ ডুবুরি সংস্কৃতির প্রতিফলন বলে মনে করছেন গবেষকরা। পানির ওপরে দ্রুত যোগাযোগ করার প্রয়োজনেই ভাষার রূপ বদলেছে তাদের।
এ গবেষণা শুধু হ্যানেয়োদের বিস্ময়কর জীবনযাত্রার তথ্যই দেয়নি, বরং ভবিষ্যতে উচ্চ রক্তচাপ বা স্ট্রোক প্রতিরোধে নতুন চিকিৎসা আবিষ্কারের সম্ভাবনাও উন্মুক্ত করেছে।
গবেষক ইলার্ডো বলেন, ‘যদি এ জিনগত উপাদানগুলো স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়, তাহলে তা সারা পৃথিবীর মানুষের চিকিৎসায় কাজে লাগতে পারে।’
এইচ.এস/
খবরটি শেয়ার করুন