ফাইল ছবি
জুলাই সনদ সই করার দিনে দাবি পূরণে বিক্ষোভে নামা ‘জুলাই যোদ্ধাদের’ নিয়ে বক্তব্যের জন্য বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদকে ক্ষমা চাওয়ার যে আহ্বান জানিয়েছিলেন জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, তার প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন এই বিএনপি নেতা।
গতকাল শনিবার (১৮ই অক্টোবর) বিকেলে রাজধানীর রমনার ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, দাবি পূরণ হওয়ার পরও ‘জুলাই যোদ্ধা’ নাম নিয়ে গতকাল জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান বানচালের চেষ্টা হয়েছিল।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘...সুযোগটা জাতীয় সংসদের সেই সাউথ প্লাজায় কিছু কিছু আওয়ামী ফ্যাসিস্ট বাহিনী নিয়েছে। তারা নাম ধারণ করেছে জুলাই যোদ্ধার। জুলাই যোদ্ধা নাম দিয়ে, নামটা তারা সুযোগে ব্যবহার করেছে এবং সেই ফ্যাসিস্ট বাহিনী গতকালকের (গত শুক্রবার) অনুষ্ঠানকে কলঙ্কিত করার জন্য, পারলে বানচাল করার জন্য চেষ্টা করেছে।’
সালাহউদ্দিন দাবি করেন, তার বক্তব্যকে অপব্যাখ্যা করে ‘জুলাই যোদ্ধাদের’ আওয়ামী লীগের ‘দোসর’ বলার দায় তার ওপর চাপানো হচ্ছে।
জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের আগে অনুষ্ঠানস্থল সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় অবস্থান নিয়েছিলেন ‘জুলাই যোদ্ধা’ পরিচয়ে কয়েক শ ব্যক্তি। পরে পুলিশ পিটিয়ে তাদের বের করে দেয়। এরপর তাদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষও হয় মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে।
শনিবার সকালে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে দলের প্রতিষ্ঠাতা, সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা জানানোর পর সালাহউদ্দিন সেই প্রসঙ্গ তুলে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘যেসব বিশৃঙ্খলা হয়েছে, আমরা খোঁজ নিয়েছি, এটা তদন্তাধীন। দেখা গেছে, এখানে জুলাই যোদ্ধাদের নামে কিছুসংখ্যক ছাত্র নামধারী উচ্ছৃঙ্খল লোক ঢুকেছে। সেটা ফ্যাসিস্ট সরকারের ফ্যাসিস্ট বাহিনী বলে মনে করি। আওয়ামী ফ্যাসিস্টরা বিভিন্ন ফাঁকফোকরে বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করছে। এখানে কোনো সঠিক জুলাই বা অভ্যুত্থানের সঙ্গে জড়িত কেউ থাকতে পারে না।’
এ কথার প্রতিক্রিয়ায় গতকাল দুপুরে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) এক সংবাদ সম্মেলনে সালাহউদ্দিন আহমদকে তার বক্তব্য প্রত্যাহার এবং ‘জুলাই যোদ্ধাদের’ কাছে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
সেখানে দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘তিনি ভুলবশত, হয়তো তার কাছে তথ্য না থাকার কারণে তিনি এ রকম বলেছেন। যেহেতু তিনি দীর্ঘদিন দেশে ছিলেন না, যেহেতু তিনি জুলাই অভ্যুত্থানের সময় দেশে ছিলেন না, রাজপথে ছিলেন না, সেহেতু হয়তো তিনি জানেন না যে কে রাজপথে ছিল, কারা লড়াই করেছিল, কারা বুলেটের সামনে দাঁড়িয়েছিল?’
এরপর বিকেলে বিএনপির সমর্থক প্রকৌশলীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ আয়োজিত ‘গণতান্ত্রিক উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণে প্রকৌশলীদের ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেওয়ার সময় প্রসঙ্গটি তোলেন সালাহউদ্দিন।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘বর্তমানে অপতত্ত্ব ছড়ানোর, একটা অপব্যাখ্যা ছড়ানোর একটা বিশাল টেন্ডেন্সি দেখি অনেকের মধ্যে। আজকে একটা দলের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনের এক পর্যায়ে আমাকে কোনো একটা বিষয়ে জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। আমি এখানেই এই সুযোগটা নিয়ে এটা একটু বলে দিই।’
সালাউদ্দিন বলেন, ‘গতকালকে সংগঠিত জাতীয় সংসদের বিশৃঙ্খলা যেগুলো হয়েছে, সেটার সাথে জড়িয়ে আমি বুঝলাম না জুলাই যোদ্ধারা কেন নিজেরা সেই বিশৃঙ্খলার দায়দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিতে চাচ্ছে। আমি স্পষ্টতই বলেছি, সকালে আমার একটা অনুষ্ঠানে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজারে ফুল দিতে গেলে বলেছি, আমি বিশ্বাস করি জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের সাথে সংশ্লিষ্ট কোনো সংগঠন এবং কোনো ব্যক্তি এ রকম বিশৃঙ্খলার সাথে জড়িত ছিল না, থাকতে পারে না।’
জে.এস/
খবরটি শেয়ার করুন