ছবি: সংগৃহীত
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নয় মাস পেরিয়ে গেলেও ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি। রাজনৈতিক-সামাজিক অস্থিরতার কারণে অব্যাহতভাবে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সংকুচিত হয়ে আসছে। ব্যবসা-বাণিজ্যের মন্দা পরিস্থিতি কাটছে না।
দিনে দিনে বাড়ছে বেকারত্ব। নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তার কারণে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে ভাটা পড়েছে। যদিও অন্তর্বর্তী সরকার বিনিয়োগ সামিট করে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেছে। সেখানে শুধু প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেলেও দৃশ্যমান বিনিয়োগ আসেনি। রাজনৈতিক অচলাবস্থার কারণে বেশিরভাগ বিনিয়োগকারীই ধীরে চলার নীতি গ্রহণ করেছেন। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে।
গত নয় মাসে নতুন কোনো শিল্পকারখানা তো হয়নি, বরং প্রতি মাসে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছোট-বড় কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। যার ফলে হাজার হাজার শ্রমিক কাজ হারিয়েছেন। এতে বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ীসহ অর্থবাণিজ্য সম্পর্কিত সব খাতের ওপর প্রভাব পড়ছে। সামনের দিনগুলোতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি কী হতে পারে, সেটা নিয়ে বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও শঙ্কায় রয়েছেন।
বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৫ সালে দক্ষিণ এশিয়ার প্রবৃদ্ধি কমে ৫ দশমিক ৮ শতাংশে দাঁড়াবে, যা গত অক্টোবরে করা পূর্বাভাসের চেয়ে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ কম। সেখানে বাংলাদেশের অবস্থা আরো নাজুক।
বলা হয়েছে, জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৩ শতাংশে নেমে আসতে পারে। সরকারের লক্ষ্য ছিল ৬ শতাংশে আটকে রাখা। আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরও প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৫ শতাংশে ধরে রাখার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে দ্বিমত প্রকাশ করেছে বিশ্বব্যাংক।
সংস্থাটি বলেছে, মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমছে, আরও কমবে। যার চূড়ান্ত ফল হিসেবে দারিদ্র্যের সংখ্যা বাড়বে। ফলে আরো নতুন করে ৩০ লাখ মানুষ অতি দারিদ্র্যের মধ্যে পড়বে। সংস্থাটি আরো বলছে, এ বছর বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার ২২ দশমিক ৯ শতাংশে পৌঁছাতে পারে, যা ২০২২ সালে ছিল ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বিগত ৯ মাস (জুলাই-মার্চ) শেষে রাজস্ব ঘাটতি বেড়ে ৬৫ হাজার ৬৬৫ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। যেখানে অর্থবছরের আট মাসে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৫৮ হাজার কোটি টাকার বেশি পিছিয়ে ছিল। একইভাবে বাজেট বাস্তবায়নের হার এক দশকের সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে। বছর শেষে এবার বাজেট বাস্তবায়ন ৮০ শতাংশেরও কম হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বর্তমান সরকারের সময়ে রেমিট্যান্স প্রবাহ কিছুটা বাড়ায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পতন ঠেকানো সম্ভব হয়েছে।রিজার্ভ আবারও ২৭ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। একই সঙ্গে ব্যাংকে এলসি খোলার জটিলতা কিছুটা কমেছে। ব্যবসায়ীরা এলসি খুলতে পারছেন। তবে ডলারের দাম কিছুতেই কমছে না। এখনো ব্যাংকিং খাতের বাইরে ডলারের দাম ১২২ টাকার বেশি।
দেশের প্রধান চারটি খাত সম্প্রসারণের গতি কমেছে। জানুয়ারিতে পারচেজিং ম্যানেজার ইনডেক্স বা পিএমআই সূচকের মান ছিল ৬৫ দশমিক ৭, যা ফেব্রুয়ারিতে গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৬৪ দশমিক ৬। যার অর্থ হলো, একমাসে মান কমেছে ১ দশমিক ১ শতাংশ পয়েন্ট। এভাবে ক্রমাগত কমছে। বিশ্বব্যাংক বলেছে, এ ধারা আরো দুই বছর অব্যাহত থাকবে।
বেসরকারি খাত দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি।অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানের প্রায় ৯০ শতাংশই এ খাতের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু বিনিয়োগ প্রায় নেই বললেই চলে, বরং পুরনো অনেকে ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছেন। ফলে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির উপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। দিনদিন সংকুচিত হচ্ছে দেশের অর্থনীতি। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে বেসরকারি খাতে স্বস্তিদায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।
এইচ.এস/