রবিবার, ৮ই জুন ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২৪শে জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কমাতে হবে শিশুর কাঁধের বইয়ের বোঝা

উপ-সম্পাদকীয়

🕒 প্রকাশ: ০৫:১৩ অপরাহ্ন, ২৩শে নভেম্বর ২০২৪

#

ছবি- সংগৃহীত

স্কুল শিক্ষার্থীদের ব্যাগের বোঝা দিনের পর দিন শুধু বেড়েই চলেছে। ২০১৬ সালের ১৭ই ডিসেম্বর হাইকোর্ট একটি ঐতিহাসিক রায় দেন। রায়ে বলা হয়, একটি শিশুর ওজনের ১০ শতাংশের বেশি তার স্কুল ব্যাগের ওজন হবে না। এ জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে আইন-বিধিমালা প্রণয়নে নির্দেশনা দেন। কিন্তু তার পরও স্কুল ব্যাগের ওজন থেকে রেহাই পাচ্ছে না শিশুরা। অনেক ক্ষেত্রে শিশুদের স্কুল ব্যাগের ওজন তার শরীরের ওজনের শতকরা ৩০ ভাগেরও বেশি হয়ে থাকে। অথচ আট বছরেও বাস্তবায়ন হয়নি উচ্চ আদালতের নির্দেশনা। ফলে শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

পাঁচ বছরের একটি ছেলে শিশুর আদর্শ ওজন ১৮ দশমিক ৭ কেজি, আর মেয়ের ১৭ দশমিক ৭ কেজি। ছয় বছরের একটি ছেলে শিশুর আদর্শ ওজন ২০ দশমিক ৬৯ কেজি আর মেয়ের ১৯ দশমিক ৯৫ কেজি। সে হিসাবে প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থীর ব্যাগের ওজন তার শরীরের ওজনের ১০ শতাংশ অর্থাৎ সর্বোচ্চ দুই কেজি হওয়ার কথা। সেখানে ঢাকার খ্যাতনামা বিভিন্ন স্কুলে প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ব্যাগের ওজন পাওয়া গেছে সর্বনিম্ন তিন থেকে সর্বোচ্চ সাড়ে পাঁচ কেজি। একদিকে বাড়তি বই পড়ার চাপ; অন্যদিকে কোচিংয়ের জন্য চাপ—এসব সহ্য করতে না পেরে শিশুরা প্রায়ই অসুস্থ হচ্ছে।

রাজধানীর প্রায় প্রতিটি স্কুলেরই একই দৃশ্য, ব্যাগের ভারে কুঁজো হয়ে হাঁটছে শিশু, নয়তো ছেলেমেয়ের ভারী ব্যাগ কাঁধে নিয়ে ঘাম মুছতে মুছতে চলেছেন তাদের মা-বাবা কিংবা অভিভাবকরা। বিভিন্ন নামি স্কুলের প্রথম শ্রেণির শিশুর ব্যাগের ওজন কমপক্ষে তিন কেজির বেশি। আবার ইংলিশ ভার্সনে প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থীর ব্যাগের ওজন গড়ে চার কেজির বেশি।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) পাঠক্রম অনুযায়ী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুদের জন্য নির্ধারিত পাঠ্যবই হলো— ইংরেজি, বাংলা, প্রাথমিক গণিত, পরিবেশ পরিচিতি সমাজ ও বিজ্ঞান, সংগীত, শারীরিক শিক্ষা, চারু ও কারুকলা এবং ধর্ম।কিন্তু রাজধানীর অধিকাংশ স্কুলেই এর সাথে দুই থেকে তিনটি বই জুড়ে দেয়া হয়। আবার কোথাও কোথাও চার-পাঁচটি বই জুড়ে দেয়া হয়। অতিরিক্ত বই ও স্কুল কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত খাতা, কলম, স্কেলবক্স, পানির বোতল—সব মিলিয়ে ব্যাগের ওজন তিন থেকে চার কেজির বেশি। শুধু ঢাকা শহরেই নয়, বিভাগীয় ও জেলা শহরের বেশির ভাগ স্কুলেই বাড়তি বই পড়তে বাধ্য করা হয়। যদিও আইনে এটি নিষিদ্ধ। তার পরও বছরের পর বছর ধরে শিশুদের অতিরিক্ত বই পড়তে বাধ্য করা হচ্ছে।

শিক্ষাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করেন, অতিরিক্ত বই বাধ্যতামূলক করার উদ্দেশ্য শিক্ষাকে উন্নত করা নয়, বরং শিক্ষকদের ব্যবসায়িক মনোভাব দায়ী। কোনো কোনো ক্ষেত্রে স্কুল সরাসরি বই বিক্রি করে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বইয়ের দোকান ঠিক করে দেয়, যেখান থেকে শিক্ষকেরা সুবিধা পায়। বাড়তি বই পড়ানোর মাধ্যমে শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্যও উৎসাহিত হয়।

কোন শ্রেণিতে কয়টি বই পড়ানো হবে, তা নির্ধারণ করে দেয় জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেটি ঠিক করার জন্য শিক্ষাবিদ ও বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটিও রয়েছে। শিক্ষার্থীর বয়স ও বিকাশের কথা বিবেচনা করে পাঠ্যবই ও পাঠগুলো নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রাক-প্রাথমিক থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে পাঠ্যবই দেয় সরকার। এনসিটিবির আইনে বলা আছে, বোর্ড কর্তৃক পাঠ্যপুস্তক প্রণীত ও প্রকাশিত নয় অথবা পাঠ্যপুস্তক হিসেবে অনুমোদিত নয়, এমন কোনো পুস্তককে কোনো বিদ্যালয়ের জন্য পাঠ্যপুস্তক হিসেবে নির্ধারণ করা যাবে না।

অন্যদিকে স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বইয়ের বোঝা কাঁধে বহন করার কারণে শিশুরা আর্থ্রাইটিস ও অস্টিওপোরোসিসের মতো জটিল রোগে আক্রান্ত হতে পারে। শিশুদের শরীরের ওজনের ১০ শতাংশের বেশি ভার বহন করা উচিত নয়। এতে শিশুদের পিঠ, কাঁধ ও পায়ে ব্যথাসহ বিভিন্ন রকমের সমস্যা দেখা দিতে পারে।শিশুরা বামন বা খর্বাকৃতির হয়ে যেতে পারে।

যেসব স্কুল শিক্ষার্থীদের ওপর অতিরিক্ত বই চাপিয়ে দিচ্ছে, তারা বেআইনি কাজই করছেন। শিক্ষার্থীদের ওপর চাপ তৈরি মানসিক বিকাশে বাধা সৃষ্টি করছে। যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়াবে।

আই.কে.জে/




শিশুর কাঁধে বইয়ের বোঝা

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন