রবিবার, ৮ই জুন ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২৪শে জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কী শুনছি আর কী হচ্ছে!

উপ-সম্পাদকীয়

🕒 প্রকাশ: ১০:১১ অপরাহ্ন, ৩০শে মে ২০২৫

#

মাহবুব কামাল। ছবি: সংগৃহীত

মাহবুব কামাল

জাপানে ১ লাখ জনশক্তি রপ্তানির ব্যাপারে চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পর যখন 'ড. ইউনূসের ম্যাজিক' আওয়াজ উঠলো, এরপর গতকাল (বৃহস্পতিবার, ২৯শে মে) আমি ফেসবুকে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। এক পাঠক লিখেছেন, তার ভয় হচ্ছে, জাপানে থাকা প্রবাসীদের না আবার ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়! রসিকতা করে বললেও তার এ কথাটা জাস্টিফাই করা যায়। কীভাবে দেখুন।

আমরা এমনও দেখেছি, বলা হয়েছে, ড. ইউনূসের (অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস) চিঠির কারণেই বিশ্বব্যাপী ডোনাল্ড ট্রাম্প (আমেরিকার প্রেসিডেন্ট) কর্তৃক আরোপিত বর্ধিত ট্যারিফ ৩ মাসের জন্য স্থগিত করা হয়েছে! ভয়াবহ উদ্ভাবনী শক্তি থাকলেই এমন কথা বলা যায়। পাঠক লক্ষ করুন, শেখ হাসিনার প্রেস সচিব নাঈমুল ইসলাম খান (ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক প্রেস সচিব) টেলিভিশনের টকশোগুলোয় গত সরকারকে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করতেন। কিছু একটা যুক্তি দেখাতেন, সেই যুক্তি মানা-না মানা ছিল আমাদের ব্যাপার। কিন্তু তিনি ডাহা মিথ্যা বলতেন না। এখনকার প্রেস সচিবের (প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম) কথা আপনারা তো শুনতেই পারছেন।

উপরের পাঠকের কথা যে জাস্টিফাই করা যায় বললাম, এর কারণ, আমরা দেখছি সরকারের অনেক কথাই ফাঁপা বুলি অথবা বাগাড়ম্বর। অনেক ক্ষেত্রেই এ বাগাড়ম্বর বুমেরাং হচ্ছে। যেমন, ড. ইউনূসের সুইজারল্যান্ড যাত্রার আগে অনেক আশাবাদ ব্যক্ত করা হলো। কিন্তু তিনি ফিরে আসার পরপরই দেশটি টাকা বন্ধ করে দিল! 

বলা হলো, ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গা এ ঈদ স্বদেশে (মিয়ানমার) উদযাপন করবেন; কিন্তু দেখা যাচ্ছে, উলটো রোহিঙ্গারাই এ দেশে আসছে। চীন সফরের পর 'অ্যায়সা হোগা, ত্যায়সা হোগা' বলা হলো; কিন্তু এখন পর্যন্ত বিনিয়োগের প্রাথমিক আলাপও নেই, উলটো ভারত ট্রান্সশিপমেন্ট বন্ধ করে দিল। প্রথমে বলা হলো, এটা কোনো ব্যাপার না, পরে শুনলাম, মাসে ২ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হবে। 

বিনিয়োগ সামিটকে এমনভাবে প্রচার করা হলো যে, বিনিয়োগের অবিরাম বৃষ্টিপাত হবে; কিন্তু এখন পর্যন্ত আকাশে মেঘও দেখা যাচ্ছে না। কাতার থেকে ফিরে আসার পর বলা হলো, দেশটি ৭৫৬ জন সেনাসদস্য নেবে; কিন্তু এটা বলা হলো না, সংখ্যাটা কেন কমে গেল। কারণ, শেখ হাসিনার আমলে ১১২৯ জনকে নেওয়ার কথা হয়েছিল। কাতারের আমির ড. ইউনূসের সঙ্গে দেখাটা পর্যন্ত করেননি। 

৫ই আগস্টের পরপর যে ভয়াবহ বন্যা হয়েছিল, তখন শুনলাম ১ হাজার কোটি টাকা আসছে, এক টাকাও আসেনি। জুলাই ফাউন্ডেশন গঠনের সময় আমরা ভাবলাম, অভ্যুত্থানে আহতদের পরিবারের জন্য বুঝি শাপে বর হয়েছে। এখন দেখছি, আহতরা এখানে-সেখানে বসে পড়ে তাদের প্রতি অবজ্ঞার কথা জানাচ্ছেন। 

অসত্য কথার শেষ নেই। বিমসটেকে মোদির (ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি) সঙ্গে ড. ইউনূসের যেসব কথা হয়েছিল বলে প্রচার করা হয়েছে, পরে দেখা গেল অধিকাংশই অসত্য। বলা হলো, কয়েকটি দেশের ভিসার জন্য আর দিল্লি যেতে হবে না। অথচ এ দেশগুলোর ভিসা আবেদন করা হয় অনলাইনে। অনলাইন মানে সেটা পৃথিবীর সর্বত্রই বিরাজমান। আবার দেখুন, শুনলাম সৌদি আরবের বিমানের ভাড়া কমানো হয়েছে। ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখুন, সত্য না মিথ্যা।

এবার জাপান প্রসঙ্গে আসি। কতকিছু শুনলাম। বুলেট ট্রেন নাকি পাচ্ছি। সে আলামত কোথায়? হ্যাঁ, জাপানে ১ লাখ লোক যাওয়ার ব্যাপারে চুক্তি হয়েছে বটে। তবে জাপানে যেতে হলে সে দেশের ভাষা শিখে একটা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়। তারপরও ভিসা না-ও হতে পারে। কারণ, ভিসা দেওয়ার এখতিয়ার একমাত্র দূতাবাসের।

কথাটা এজন্য বললাম যে, ড. ইউনূসকে রিসিভ করতে জাপানের সরকারি কাউকে এয়ারপোর্টে দেখা যায়নি। চুক্তি স্বাক্ষরের দৃশ্যে বাংলাদেশের পতাকা দেখলাম, জাপানেরটা কোথায়? শুনছি, জনশক্তি রপ্তানির এ প্রক্রিয়ায় অধুনা লাইসেন্সপ্রাপ্ত ড. ইউনূসের প্রতিষ্ঠানও নাকি যুক্ত। আমি কোনো ব্যাপারে নিশ্চিত না হয়ে কিছু বলি না। ফলে আপাতত এটুকুই।

দুই.

প্রধান উপদেষ্টার প্রতি অনুরোধ থাকবে, আগামী বছরের ১০ই ফেব্রুয়ারি থেকে ১৫ই ফেব্রুয়ারির মধ্যে যে কোনো একদিন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করুন। বিএনপির মনস্তত্ত্ব যতটা বুঝেছি, তারেক রহমান (বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান) রাজি হয়ে যাবেন। আপনারও ব্যক্তিত্বের ক্ষতি হবে না। কারণ, আপনি তো বলেছেন, ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। থিওরিটিক্যালি আপনি আপনার কথাতেই থাকলেন। রক্তপাত এড়ানোর এর চেয়ে ভালো বিকল্প আছে বলে মনে করি না।

লেখক: সাংবাদিক, কলামিস্ট ও টকশো তারকা।

এইচ.এস/

মাহবুব কামাল

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন