শহীদুজ্জামান সেলিম, চয়নিকা চৌধুরী, রওনক হাসান ও রাশেদ মামুন অপু। ছবি: সংগৃহীত
প্রায় প্রতিদিন লাইট, ক্যামেরা আর নির্মাতা-অভিনেতাদের উপস্থিতিতে মুখর থাকে রাজধানীর উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টরে অবস্থিত লাবণী শুটিং হাউস। সম্প্রতি সেই বাড়িতে শুটিং বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টর আবাসিক এলাকা কল্যাণ সমিতি। নোটিশটি প্রকাশ্যে আসতেই প্রতিবাদ জানিয়েছেন নির্মাতা ও অভিনয়শিল্পীরা।
গত ২০শে জুলাই ৪ নম্বর সেক্টর আবাসিক এলাকা কল্যাণ সমিতি ইস্যুকৃত এক নোটিশে জানিয়েছে, ওই বাড়িতে শুটিং ঘিরে এলাকায় জনসমাগম বাড়ছে, রাস্তায় যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে এবং স্থায়ী বাসিন্দাদের স্বাভাবিক জীবনে ব্যাঘাত ঘটছে। নোটিশে আরও বলা হয়, আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে শুটিং হাউস পরিচালনা করা নীতিমালার পরিপন্থী। এর ফলে এলাকার স্বাভাবিক পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। সেক্টরবাসীর ক্রমবর্ধমান অভিযোগ ও সবার নিরাপত্তা এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশের কথা বিবেচনা করে অনতিবিলম্বে শুটিং কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
শুটিং বন্ধের নোটিশটি ফেসবুকে শেয়ার করে অভিনেতা রওনক হাসান লেখেন, ‘উত্তরা সেক্টর ৪ কল্যাণ সমিতি থেকে শুটিং বন্ধের নোটিশ এসেছে। আবাসিক এলাকায় নানা রকম অফিস হয়। শত শত স্কুল হয়, মাল্টিটাইপ ব্যবসা হয়। শুধু শুটিংয়ে সমস্যা! আগেও এ ধরনের চেষ্টা হয়েছে। সেগুলো সংশ্লিষ্ট সংগঠন, স্থানীয় সংসদ সদস্য, সিটি করপোরেশন এবং পুলিশ প্রশাসন মিলে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা করে সমাধান করেছে। এবারও আশা করি, তা-ই হবে। সংশ্লিষ্ট সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’
নির্মাতা তপু খান লেখেন, ‘এটা শিল্প-সংস্কৃতি বিকাশে বাধার শামিল। সংশ্লিষ্ট সংগঠনকে অনুরোধ করছি, জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণের। যদি কোনো ত্রুটি বা ভুল-বোঝাবুঝি হয়ে থাকে, তাহলে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা যাবে। তাই বলে সরাসরি নিষেধাজ্ঞাকে ভালো চোখে দেখছি না। দেশের মূল জায়গায় সংস্কার বাদ দিয়ে, সংস্কারের শুরুই হয় শুধু শিল্প-সংস্কৃতির মানুষের ওপর দিয়ে। কেন?’
চয়নিকা চৌধুরী লিখেছেন, ‘এসবের মানে কী? এটা কেমন কথা! ২৪ বছরের ক্যারিয়ারে কোনোদিন এমন কথা শুনিনি।’
নির্মাতা মাহমুদ দিদার লেখেন, ‘অনেক বছর ধরে উত্তরায় শুটিং হয়! কোনো কমপ্লেইন ছিল না। এখন চলবে না এসব! ঘুমের ডিস্টার্ব হয়। আমার ধারণা, এ অঞ্চলে দীর্ঘদিনের যে শুটিং কালচার, এটা আর থাকবে না। এটা কেবল আলামত!’
শুটিং বন্ধের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে ডিরেক্টরস গিল্ডের সভাপতি শহীদুজ্জামান সেলিম গণমাধ্যমে বলেন, ‘এভাবে হঠাৎ করে একটি চিঠির মাধ্যমে শুটিং বন্ধ করার নির্দেশনা কোনোভাবেই উচিত নয়। একটা সময় দিয়ে বন্ধের চিঠি দিতে পারত। আমরা ডিরেক্টরস গিল্ড এর প্রতিবাদ জানিয়েছি। আজকেই আমরা চিঠি দেব। হাউসের মালিকদের জানিয়েছি, আপনাদের পাশে আমরা আছি।’
অভিনয়শিল্পী সংঘের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ মামুন অপু বলেন, ‘আগেও বহুবার এলাকার কিছু চক্র শুটিং হাউসটি উচ্ছেদ করতে চেয়েছে এবং প্রতিবারই আমাদের প্রতিবাদের মুখে তারা সরে এসেছে। আবার তারা একই কাজ করছে। তারা যে কারণটা দেখিয়েছে, সেটা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। আমাদের সংস্কৃতির ওপরে যে নানা ধরনের হামলা হচ্ছে, এ নোটিশ তারই একটা অংশ। যদি শুটিং হাউস বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে শিল্পীরা কাজ করবেন কোথায়? এর বিরুদ্ধে আমরা লিগ্যাল অ্যাকশনেও যাব।’
জে.এস/
খবরটি শেয়ার করুন