রবিবার, ১৫ই জুন ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১লা আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মানবতাবাদী চেতনার উদাহরণ হিসেবে কাক ও চড়াইয়ের লোককাহিনী

সাহিত্য ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০৩:৩৬ অপরাহ্ন, ২১শে ফেব্রুয়ারি ২০২৫

#

প্রতীকী ছবি (সংগৃহীত)

রবিউল হক

সত্য, ন্যায়নিষ্ঠা, সরলতা ও ভালোর জয় অবশ্যম্ভাবী, লোকমানসের এই মানসকামনা সর্বব্যাপী ও সর্বজনীন। একদা একটি কাক ও একটি চড়াই পাখির মধ্যে প্রগাঢ় বন্ধুত্ব হয়। কিন্তু একজনের মন ছিল সরল আর অপরের মন ছিল গরল। ধূর্ত কাক চালাকি-চাতুরী ও মনের ভয়ঙ্কর-কুৎসিত বাসনাটি সন্তর্পণে লুকিয়ে রেখে সরলতার ভান করে বোকা চড়াইকে বন্ধুত্বের বন্ধনে আপন করে নিল। চড়াই কিন্তু তা ঘুণাক্ষরেও টের পেল না। কাকের প্রস্তাবে তারা একটি প্রতিযোগিতায় অংশ নিল; এক গৃহস্থ তার উঠোনে শুকাতে দিয়েছে কিছু শস্যদানা ও মরিচ, কাক খাবে মরিচ আর চড়াই খাবে শস্যদানা। যে আগে খেয়ে শেষ করবে সে হবে বিজয়ী এবং পরাজিত বন্ধুর বুকের মাংস খাবে- এই হলো তাদের চুক্তির শর্ত। অতীব সরল মনে চড়াই এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিল। কাক একটা খায় আর দশটা এদিক সেদিক ছড়িয়ে দেয়। যার ফলে চড়াই হেরে গেল। তখন কাক বললো বন্ধু তুমি এখন তোমার ওয়াদা পালন কর। তোমার বুকের মাংস খেতে দাও। চড়াই পড়ল মহাবিপদে, জীবন যায় যায়! হঠাৎ একটা বুদ্ধি তার মাথায় এলো, বললো বন্ধু ঠিক আছে আমি আমার ওয়াদা রাখবো তবে ছোট্ট একটি শর্ত আছে, তুমি ঠোঁট দিয়ে অনেক নোংরা জিনিস খাও, ঐ ঠোঁটটা তুমি নদীতে ধুয়ে এসো, তারপর তুমি আমার বুকের মাংস খাও।

গল্পের পরের অংশ কাকের জন্য করুণ ও ভয়ঙ্কর। কাক নদীতে ঠোঁট ধুতে গেলে নদী বললো কাক তোমার ঐ নোংরা ঠোট ধুতে পারবে না, তুমি বরং একটা গামলা এনে পানি উঠিয়ে নাও। কাক একে এক কুমোরের কাছে, মাটির কাছে, মহিষের কাছে, খাসির কাছে ও কর্মকারের কাছে গেল। কর্মকার গৃহস্থ বাড়ি থেকে আগুন আনতে বললো কাককে, গৃহস্থ বধূ তার পিঠের উপর আগুনের একটা চাপ তুলে দিলো। এরপর কাক উড়তে থাকলে জ্বলন্ত আগুনে ভস্মিভূত হলো। ন্যায়নিষ্ঠ, সত্যনিষ্ঠ সরল মনের দুর্বল চড়াই বেঁচে রইল। আর এদিকে ধূর্ততা ও অতিরিক্ত চালাকির কারণে কাকের করুণ পরিণতি ঘটলো। এই গল্পের সাথে আমরা বাঙলার বহুল পরিচিত একটা প্রবাদও উল্লেখ করতে পারি- ‘অতি চালাকের গলায় দড়ি’।

আরো পড়ুন : বইমেলায় কবি উপল বড়ুয়ার ‘যেখানে জঙ্গলের শুরু’

এখানে চড়াই নায়ক আর কাক খলনায়ক। আর কাক কর্তৃক চড়াই-এর বুকের মাংস খেতে চাওয়া এ গল্পের প্রধান ক্রিয়াশীলতা। চড়াই কর্তৃক কাকের ঠোঁট ধৌত করার শর্ত আরোপ করায় ‘আপাত সমাধান’ এবং কাক সরলভাবে তা গ্রহণ করায় ‘আপাত ফল’ পাওয়া যায়। গৃহস্থের ক্রিয়া ও কাকের পরিণতি যথাক্রমে ‘শেষ সমাধান’ ও ‘শেষ ফল’ হিসাবে কাজ করেছে। চড়াই সমাজের নির্যাতিত শ্রেণীর প্রতিনিধি। গৃহস্থ একই শেণীভুক্ত। এতে শ্রেণী সংগ্রামেরও চিত্র ফুটে উঠেছে। এতে মার্কসের শ্রেণী-সংঘাতের তত্ত্ব হুবহু মিলে যায়। রুশ লোকবিদ ওয়াই এম সকোলভ বলেন, “Folklore has been and continuous to be  a reflection and a weapon of class conflict.”

ফোকলোর শ্রেণী সংগ্রামের প্রতিফলন ও হাতিয়ার হিসাবে কাজ করে। আর তাই কাকের বিরুদ্ধে সংগামে  চড়াই-এর বিজয়ের মাধ্যমে শোষিত শ্রেণীর  বিজয়ের আকাঙ্খা প্রতিফলিত হয়েছে।

তথ্যসূত্র

১. আবদুল ওয়াহাব, বাংলাদেশের লোকগীতি: একটি সমাজতাত্ত্বিক অধ্যয়ন, বাংলা একাডেমি, ঢাকা, ২০০৭

২. আহমদ শরীফ, বাঙালি ও বাঙলা সাহিত্য, বাংলা একাডেমি, ঢাকা, ১৯৮৭ 

এস/ আই.কে.জে


লোককাহিনী

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন