মঙ্গলবার, ৬ই মে ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২৩শে বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

‘তিন সাংবাদিকের প্রশ্নের মান ও ঔচিত্য নিয়ে সংশয় আছে’

বিশেষ প্রতিবেদক

🕒 প্রকাশ: ০৬:১২ অপরাহ্ন, ৩রা মে ২০২৫

#

ছবি: সংগৃহীত

২০২৪ সালের ৫ই আগস্টে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর দেশের জাতীয় পর্যায়ের গণমাধ্যমগুলোতে যে ‘রদবদল’ হয়েছে, এতে ‘ভবিষ্যৎ ক্ষমতার হিসাব–নিকাশও কাজ করেছে’ বলে মনে করেন বিশিষ্ট সাংবাদিক ও দৈনিক প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান। তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশে সাংবাদিকতার স্বাধীনতা বাইরের কেউ নিশ্চিত করতে পারবেন না। এটা সম্পাদক ও সাংবাদিকদেরই নিশ্চিত করতে হবে।’

একইসঙ্গে তিনি মনে করেন, সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর সংবাদ সম্মেলনে করা ‘তিন সাংবাদিকের প্রশ্নের মান ও ঔচিত্য নিয়ে সংশয় আছে’। তিনি বলেন, গত বছরের জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে ‘শহীদদের বিষয়ে প্রশ্ন করার ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের আরও সতর্ক ও সংবেদনশীল থাকা উচিত ছিল’। তবে ‘অনুচিত প্রশ্ন করার কারণে সাংবাদিকের চাকরি যাওয়ার উদাহরণ সম্ভবত এটাই প্রথম।’

গত ২৯শে এপ্রিল অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর সংবাদ সম্মেলনে ‘জুলাই অভ্যুত্থান নিয়ে অবমাননাকর’ প্রশ্ন করার অভিযোগে দেশের তিনটি টিভি চ্যানেলের (দীপ্ত, এটিএন বাংলা, চ্যানেল আই) তিন সাংবাদিকের চাকরিচ্যুত হওয়ার অভিযোগ উঠে।

সংস্কৃতি উপদেষ্টার নাম উল্লেখ না করে সোহরাব হাসান বলেন, ‘উল্লিখিত তিন সাংবাদিকের একজন উপদেষ্টার কাছে বাংলা নববর্ষের আয়োজন ও জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদদের তালিকা নিয়ে প্রশ্ন করেছিলেন। তিন সাংবাদিকের প্রশ্নের মান ও ঔচিত্য নিয়ে সংশয় আছে। থাকাটা অস্বাভাবিক নয়। শহীদদের বিষয়ে প্রশ্ন করার ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের আরও সতর্ক ও সংবেদনশীল থাকা উচিত ছিল। কিন্তু অনুচিত প্রশ্ন করার কারণে সাংবাদিকের চাকরি যাওয়ার উদাহরণ সম্ভবত এটাই প্রথম।’

তিনি বলেন, ‘আশির দশকে আমাদের একজন অগ্রজ সাংবাদিক স্বয়ং রাষ্ট্রপতিকে কঠিন প্রশ্ন করেছিলেন। বলেছিলেন, শামসুর রাহমান, আল মাহমুদের কবিতা প্রথম পাতায় ছাপা হয় না। আপনার কবিতা প্রথম পাতায় ছাপা হয়। আপনি কি তাদের চেয়েও বড় কবি? এ প্রশ্নের জন্য তার চাকরি যায়নি। ঢাকা থেকে বদলি করে অন্যত্র পাঠানো হয়েছিল।’

ওই রাষ্ট্রপতি ও সাংবাদিকের নাম কবি সোহরাব হাসান উল্লেখ না করলেও সুখবর ডটকমের অনুসন্ধান বলছে, আশির দশকে স্বৈরাচারী সেনাশাসক জেনারেল এইচ এম এরশাদকে সংবাদ সম্মেলনে ওই প্রশ্ন করেছিলেন সাহসী সাংবাদিক জাহাঙ্গীর হোসেন। তিনি তখন সরকারি বার্তা সংস্থা বাসসের কূটনৈতিক সংবাদদাতা ছিলেন। জাতীয় সংসদ ভবনে তখন প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের দপ্তর (সিএমএলএ) ছিল। সেখানে রীতি অনুযায়ী ওই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। 

পতিত স্বৈরাচারী এরশাদ ওই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছিলেন তার আমেরিকা সফর নিয়ে। জাহাঙ্গীর হোসেন ‘বিব্রতকর’ প্রশ্ন করায় এরশাদের রোষের শিকার হয়েছিলেন। তবে তিনি বাসস থেকে চাকরিচ্যুত হননি। তাকে তখন চট্টগ্রামে বদলি করা হয়েছিল। 

সোহরাব হাসান বলেন, নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলে ‘হত্যা, হত্যাচেষ্টা ও হামলার অভিযোগে মামলা দেওয়া হয়েছে ১৬০ জনের (সাংবাদিক) নামে। এর পাশাপাশি প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিল করা হয়েছে ১৬৭ জনের। সম্পাদক পরিষদসহ বিভিন্ন মহলের সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে সরকার একটি পরিবীক্ষণ কমিটি করলেও কতজন কার্ড ফিরে পেয়েছেন, কতজনের বিরুদ্ধে কী সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আছে, জানানো হয়নি।’

আজ শনিবার (৩রা মে) দৈনিক প্রথম আলোতে প্রকাশিত এক কলামে সোহরাব হাসান এসব কথা বলেন। কলামটি- ‘নতুন বাংলাদেশে’ সাংবাদিকতা কতটা মুক্ত শিরোনামে প্রকাশিত হয়েছে। ৩রা মে বিশ্ব মুক্ত সংবাদমাধ্যম দিবস উপলক্ষে তার এ লেখা প্রকাশিত হয়। 

সোহরাব হাসানের লেখায় ১৬০ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার কথা উল্লেখ থাকলেও ইংরেজি পত্রিকা ডেইলি স্টারের ৩রা মে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছরের জুলাই ও আগস্টের ঘটনা-সম্পর্কিত বিভিন্ন মামলায় কমপক্ষে ২৬৬ সাংবাদিককে জড়ানো হয়েছে। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি মামলা হয়েছে ঢাকায়- ৮৮টি। 

সিলেট ও চট্টগ্রামে যথাক্রমে ৩৯ এবং ৩৬ সাংবাদিককে অভিযুক্ত করা হয়েছে। সাভার, নারায়ণগঞ্জ, কুষ্টিয়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও বগুড়ায় ১০ থেকে ২০ জন করে সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

এইচ.এস/


সোহরাব হাসান

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন