রবিবার, ১৫ই জুন ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১লা আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ময়লা-আবর্জনার স্তূপে পরিবেশ বিপর্যয়, দরকার যথাযথ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা

সম্পাদকীয়

🕒 প্রকাশ: ০৪:৪৪ অপরাহ্ন, ৫ই মে ২০২৫

#

ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীসহ সারাদেশের নগর-শহরে বাড়ছে খোলা জায়গায় ময়লা-আবর্জনার স্তূপ। সড়ক- মহাসড়কের পাশে, অলিগলি থেকে শুরু করে আনাচে-কানাচে ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। কোথাও কোথাও নীতিমালা যথাযথভাবে না মেনে ময়লার ভাগাড়গুলো আগুন দিয়ে পোড়ানো হচ্ছে। এসব আবর্জনায় পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়ছে, কোথাও মারাত্মকভাবে দূষণ হচ্ছে। 

যেন নগর-মহানগরে ‘ভেঙে পড়েছে’ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ মানুষের জীবন। তারা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। যত্রতত্র ময়লার স্তূপে দুর্গন্ধে অস্বস্তিতে পড়ছেন বাসিন্দারা। এগুলো প্রায়ই ছড়াচ্ছে রোগ-জীবাণু। বাড়ছে মশা-মাছির উপদ্রব। সাধারণ বর্জের সঙ্গে চিকিৎসা বর্জ্য এক জায়গায় ফেলা হচ্ছে। এর ফলে পরিবেশদূষণের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। এতে মানুষ অসুস্থ হওয়ার পাশাপাশি পরিবেশের বিপর্যয় ঘটছে।

রাজধানীতে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে ঘরবাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও শিল্পকারখানা। এসব অবকাঠামোর জন্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বর্জ্য নিষ্কাশনের আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত ব্যবস্থাপনা নেই। অসংখ্য মানুষের বাসগৃহ থেকে গৃহস্থালি বর্জ্য প্রতিদিন এখানে-সেখানে নিক্ষিপ্ত হচ্ছে। 

প্রায় সব এলাকায় রাস্তার পাশে বর্জ্যগুলোকে স্তূপ করে রাখা হয়। অনেকে পলিথিনে ভরে সড়কেই ফেলে রাখছেন আবর্জনা। তা পচে-গলে বাতাস দূষিত করে। বৃষ্টি হলে তা আরো ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। ডাস্টবিন থেকে উপচে পড়া বর্জ্য রাস্তার পাশের ড্রেনে পড়ে পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা অচল করে দেয়।

জনসংখ্যা যত বাড়ছে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিষয়টি তত জটিল রূপ ধারণ করছে। রান্নাঘরের পরিত্যক্ত আবর্জনা, হাটবাজারের পচনশীল শাকসবজি, মিল-কারখানার তৈলাক্ত পদার্থ, কসাইখানার রক্ত, ছাপাখানার রং ও হাসপাতালের বিষাক্ত বর্জ্যের নিরাপদ অপসারণ নিশ্চিত না হওয়ায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা হয়ে উঠেছে আরও ঝুঁকিপূর্ণ। 

বায়ুর মান পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সের (আইকিউএয়ার) সূচক অনুযায়ী, বছরের অধিকাংশ সময় ঢাকার বাতাস অস্বাস্থ্যকর থাকে। সাধারণত শীতকালে ঢাকার বায়ু-বাতাস খুব অস্বাস্থ্যকর থাকে। তবে এখন গরমকালেও অস্বাস্থ্যকর হয়ে উঠেছে। এর অন্যতম কারণ ময়লা-আবর্জনা পোড়ানো। 

মানুষ এখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা আগুনে পুড়িয়ে ফেলছেন। আগুনের ধোঁয়া মানুষের শ্বাসতন্ত্রের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। বর্জ্য পোড়ানোর নিয়ম না থাকলেও সিটি কর্পোরেশনের তদারকির অভাবে যত্রতত্র বর্জ্য পোড়ানো হচ্ছে।

ঢাকা মহানগরী ছাড়াও দেশের প্রতিটি নগর-মহানগরে যত্রতত্র আবর্জনার স্তূপ রয়েছে। ৭০ লাখ জনসংখ্যা-অধ্যুষিত চট্টগ্রাম মহানগরীতে দৈনিক গৃহস্থালির বর্জ্য উৎপাদিত হয় প্রায় ৩ হাজার টন। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে দৈনিক প্রায় ২ হাজার ৫০০ টন বর্জ্য সংগ্রহ করা হয়। বাকিগুলো নালা-নর্দমা হয়ে নগরীর খালে গড়ায়।

খুলনা নগরীর ১৫৯টি সড়কে দিনের অনেকটা সময় ধরে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ পড়ে থাকে। গাজীপুরে বর্জ্য রাখার নির্দিষ্ট কোনো স্থান না থাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কসহ বিভিন্ন সড়কের পাশে যেখানে-সেখানে ময়লা ফেলা হচ্ছে। সড়ক-মহাসড়কের পাশে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, কলকারখানা, হাসপাতাল ও বাসাবাড়ির বর্জ্য ফেলা হচ্ছে।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে বিভিন্ন এলাকায় আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। এতে পরিবেশ দূষণের সঙ্গে মহাসড়কের সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে। পর্যটন নগরী কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকতসহ পুরো শহর যেন ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। এতে পর্যটকরা যেমন বিব্রত হচ্ছেন, তেমনি শহরবাসী স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন। ময়লার স্তূপের কারণে দিনদিন সৌন্দর্য হারাচ্ছে সমুদ্র সৈকত।

ময়লা-আবর্জনা ফেলার নিজস্ব জায়গা নেই নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের। দীর্ঘদিন ধরে নারায়ণগঞ্জের বিপুল পরিমাণ বর্জ্য অস্থায়ীভাবে বিভিন্ন স্থানে ফেলা হচ্ছে। ময়লার দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ ওই সব এলাকার মানুষ। 

সিটি করপোরেশন ও পৌরসভা আইন ২০০৯ বলা হয়েছে, করপোরেশন নগরীর বিভিন্ন স্থানে ময়লা ফেলার পাত্র বা অন্য কোনো আধারের ব্যবস্থা করবে। করপোরেশন সাধারণ নোটিশ দিয়ে পার্শ্ববর্তী বাড়িঘর ও জমির দখলদারদের তাদের ময়লা বা আবর্জনা উক্ত পাত্র বা আধারে ফেলার জন্য নির্দেশ দিতে পারবে। 

এ আইন অনুযায়ী, করপোরেশন নির্ধারিত স্থান থেকে ময়লা সংগ্রহ করে ভাগাড়ে নিয়ে যাবে। নাগরিকরা তাদের বাসাবাড়ির বর্জ্য করপোরেশনের নির্ধারিত পাত্রে পৌঁছে দেবেন। কিন্তু দেখা গেছে, আশপাশে বড় ডাস্টবিনের ব্যবস্থা না থাকায় বাসাবাড়ির বর্জ্য নাগরিকরা সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত স্থানে পৌঁছে দিতে পারেন না। 

যে কারণে সিটি করপোরেশন বিভিন্ন ওয়ার্ডভিত্তিক সংগঠনকে নিবন্ধন দিয়েছে, যারা বাসাবাড়ি থেকে ময়লা সংগ্রহ করে করপোরেশনের নির্ধারিত পাত্রে পৌঁছে দেয়। কিন্তু বাস্তবে সেটা খুব কম দেখা যাচ্ছে। অর্থাৎ, যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। দেশে আইনের যথাযথ প্রয়োগের অভাবে ময়লা আবর্জনার স্তূপের কারণে মারাত্মক রকমের পরিবেশ বিপর্যয় ঘটছে।

এইচ.এস/



বর্জ্য ব্যবস্থাপনা

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন