ছবি: সংগৃহীত
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। তিনি কবি, সাহিত্যিক, সংগীতজ্ঞ, সাংবাদিক, সম্পাদক ও রাজনীতিবিদসহ বহু গুণে গুণান্বিত। তিনি অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন, যা ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছে। তিনি ছিলেন মানবতার ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার কবি। মুসলমান পরিবারের সন্তান এবং শৈশবে ইসলামি শিক্ষায় দীক্ষিত হয়েও ধর্মনিরপেক্ষ সত্তা নিয়ে তিনি বড় হয়েছিলেন।
তিনি কাব্যে যেমন বিদ্রোহী ছিলেন, বাস্তবেও ছিলেন তেমনি বিদ্রোহী। মানবতাবাদ, অসাম্প্রদায়িকতা আর নারী-পুরুষ তথা সমাজের সাম্য রক্ষার জন্য তিনি বাংলা সাহিত্যের এক দিকপাল হয়ে আছেন এবং থাকবেন আগামীতেও
কাজী নজরুল ছিলেন জাতি ধর্ম, বর্ণ ও সম্প্রদায়ের ঊর্ধ্বে। তিনি লিখছেন,‘গাহি সাম্যের গান/ যেখানে আসিয়া এক হয়ে গেছে সব বাধা ব্যবধান/ যেখানে মিশেছে হিন্দু, বৌদ্ধ, মুসলিম, খ্রিস্টান।’ তিনি এ বিষয়ে আরো লিখেছেন, ‘মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই নহে কিছু মহীয়ান/ নাই দেশ-কাল-পাত্রের ভেদ।’
কাজী নজরুলের অসাম্প্রদায়িকতা ফুটে উঠেছে তার ‘হিন্দু-মুসলমান’ প্রবন্ধে। তিনি লিখেছেন,‘নদীর পাশ দিয়ে চলতে চলতে যখন দেখি, একটা লোক ডুবে মরছে, মনের চিরন্তন মানুষটি তখন এ-প্রশ্ন করবার অবসর দেয় না যে, লোকটা হিন্দু না মুসলমান। একজন মানুষ ডুবছে, এইটেই হয়ে ওঠে তার কাছে সবচেয়ে বড়, সে ঝাঁপিয়ে পড়ে নদীতে। হিন্দু যদি উদ্ধার করে দেখে লোকটা মুসলমান, বা মুসলমান যদি দেখে লোকটা হিন্দু, তার জন্য তো তার আত্মপ্রসাদ এতটুকু ক্ষুণ্ন হয় না। তার মন বলে, ‘আমি একজন মানুষকে বাঁচিয়েছি, আমারই মতো একজন মানুষকে।’
তিনি সব ধর্মের প্রতি ছিলেন সহনশীল। তিনি কবিতায় তুলে ধরেছেন- ‘জানিস নাকি ধর্ম সে যে বর্ম সম সহনশীল/ তাকে কি ভাই ভাঙতে পারে ছোঁওয়া-ছুঁয়ির ছোট্ট ঢিল/ যে জাত-ধর্ম ঠুনকো এত/ আজ নয় কাল ভাঙবে সে ত/ যাক্ না সে জাত জাহান্নামে, রইবে মানুষ, নাই পরোয়া।’
নজরুলের কবিতায় একদিকে যেমন ঠাঁই পেয়েছে মুসলমানদের ঐতিহ্য, আদর্শ অন্যদিকে হিন্দু আদর্শ। তিনি হিন্দু-মুসলিমের মিলনের জন্য লিখেছেন, ‘মোরা এক বৃন্তে দুটি কুসুম হিন্দু মুসলমান/ মুসলিম তার নয়ন-মণি, হিন্দু তাহার প্রাণ/ এক সে আকাশ মায়ের কোলে/ যেন রবি শশী দোলে/ এক রক্ত বুকের তলে, এক সে নাড়ির টান/ এক সে দেশের খাই গো হাওয়া, এক সে দেশের জল।’
কবি নজরুল স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, মানবতা এবং নারী অধিকারের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। জাতি-বৈষম্য, শ্রেণি-বৈষম্য এবং ধর্মীয় বৈষম্যের প্রতি তার কণ্ঠ সর্বদাই সোচ্চার ছিল। দেশকে সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গিবাদ ও ধর্মীয় কুসংস্কারের বেড়াজাল থেকে মুক্ত করতে নজরুল চর্চাকে সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে। বাংলা সাহিত্যের দিকপাল কবি নজরুল ইসলাম ১৮৯৯ সালের ২৪শে মে জন্ম নেন। জন্মদিনে তার স্মৃতির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা।
এইচ.এস/
খবরটি শেয়ার করুন