রবিবার, ৮ই জুন ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২৪শে জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

টিকটকের যে প্রভাব পড়ছে কিশোরীদের আচরণে

লাইফস্টাইল ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০৫:১২ অপরাহ্ন, ৩০শে এপ্রিল ২০২৫

#

ছবি: সংগৃহীত

কিশোরীদের মধ্যে অদ্ভুত আচরণগত পরিবর্তন আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। এ বিশেষ আচরণকে ইংরেজিতে বলে ‘টিকস’। এটি শারীরিক ও মৌখিক দুইভাবেই প্রকাশ পেতে পারে।

যেমন- অকারণে হাত পা ছোড়াছুড়ি করা, পাশের জনকে হাত বা পা দিয়ে খোঁচা দেওয়া, চিমটি কাটা, অযথা লোকজনের সামনে কারও স্পর্শকাতর অঙ্গের দিকে আপত্তিকর ইঙ্গিত করা ও বারবার হাততালি দেওয়া ইত্যাদি। 

এ ছাড়া হঠাৎ চিৎকার করে কোনো অর্থহীন শব্দ উচ্চারণ করা, যেমন- উ...হু...! বা কোনো খাবারের নাম বলা। বিশেষ করে অনলাইনে ভাইরাল কোনো খাবার। এ ধরনের আচরণকেই বলে টিকস। খবর ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের।

টিনএজ মেয়েদের তুলনায় অল্প বয়স্ক ছেলেদের মধ্যে এ বিশেষ আচরণগত বৈশিষ্ট্য বেশি দেখা যায়। বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বিস্মিত এবং হতবাক হয়ে লক্ষ্য করেছেন, কিশোরীদের মধ্যে হঠাৎ অনিয়ন্ত্রিত শারীরিক ও মৌখিক টিকসের প্রবণতা ব্যাপকভাবে বাড়ছে। বাংলাদেশেও অল্পবয়সী মেয়েদের টিকটকে এমন অদ্ভুত অস্থির আচরণ করতে দেখা যায়।

এ ধরনের আচরণগত অবস্থাকে ট্যুরেট সিনড্রোম বলে। এটি একটি স্নায়বিক রোগ। অস্থির অসংযত নড়াচড়া ও কণ্ঠস্বর এ সিনড্রোমের লক্ষণ। ট্যুরেট মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের মধ্যে চারগুণ বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তা ছাড়া সাধারণত ৫ থেকে ৭ বছর বয়সের মধ্যে এটি দেখা দিতে পারে। 

কিশোরীদের মধ্যে এখন যে সমস্যাটি প্রবল হচ্ছে সেটি কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতার সঙ্গে মিলছে না। তাহলে কেন হঠাৎ করে কিশোরীদের মধ্যে এমন উপসর্গ দেখা যাচ্ছে? এ প্রশ্নে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টিকটকের মতো সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের ভূমিকা থাকতে পারে।

চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন ভৌগোলিক অঞ্চলে পারস্পরিক যোগাযোগের মাধ্যমে এ সংক্রান্ত উপাত্ত সংগ্রহ করেছেন। তারা দেখেছেন, সারা বিশ্বে কিশোরীদের মধ্যে একই ধরনের আচরণগত পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে। 

আমেরিকার ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের পেডিয়াট্রিক নিউরোলজিস্ট মোহাম্মদ আলদোসারি বলেন, প্রাথমিকভাবে, তারা ভেবেছিলেন এটা হয়তো বিচ্ছিন্ন ঘটনা। সবাই এটি লক্ষ্য করছি। মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে অথবা হয়ত এক বা দুই দিনের মধ্যে, যেসব কিশোরীর টিকসের কোনো ইতিহাসই নেই, তারাও হঠাৎ করে অস্থির আচরণ করতে শুরু করে। 

অনেক কিশোর-কিশোরী এ ধরনের আচরণ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারার কারণে স্কুলে ক্লাস থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার কথাও জানিয়েছে। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, এ আকস্মিক উপসর্গগুলো সামগ্রিকভাবে গুরুতর এবং বারবার ঘটেছে। এমনকি প্রতি মিনিটে প্রায় ২৯ বার!

সমীক্ষায় দেখা গেছে, আকস্মিকভাবে টিকসের মতো আচরণগত বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পাওয়া কিশোর-কিশোরীরা একই ধরনের শব্দ চিৎকার করে বলে। তাদের অসংগতিপূর্ণ অঙ্গভঙ্গিগুলোও প্রায় একই রকম। তারা আপাতদৃষ্টিতে এলোমেলো শব্দ বা বাক্যাংশের পুনরাবৃত্তি করে। 

বারবার কসম খায়, অশ্লীল বাক্যাংশ বা শব্দ বলে। হাত বা বাহু নাড়ায়, তালি দেয় বা নির্দিষ্ট দিকে অযথা নির্দেশ করে। আবার অঙ্গপ্রত্যঙ্গ দিয়ে অন্য ব্যক্তি বা বস্তুকে আঘাত করার মতো আচরণও দেখা যায়। 

শিকাগোর রাশ ইউনিভার্সিটি মেডিকেল সেন্টারের মুভমেন্ট ডিসঅর্ডার ফেলো ক্যারোলিন অলভেরা ‘ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল’কে বলেন, তিনি দেখেছেন বহু রোগী থেকে থেকে ‘বিনস’ বলে চিৎকার করছে। লক্ষণীয় বিষয় হলো, ইংরেজি জানে না এমন রোগীও ব্রিটিশ উচ্চারণে ‘বিনস’ বলে চিৎকার করছিল। ক্যারোলিন পরে খোঁজ নিয়ে জানেন, একজন শীর্ষ ব্রিটিশ টিকটকার তার ভিডিওতে ‘বিনস’ বলে হঠাৎ চিৎকার করেন।

এইচ.এস/



টিকটক

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন