মঙ্গলবার, ২৯শে জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১৪ই শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ

*** একাত্তর নিয়ে বক্তব্য, সমালোচনার মুখে আসিফ নজরুলের দুঃখ প্রকাশ *** জুলাই সনদের খসড়ার সঙ্গে ‘মোটামুটি’ একমত বিএনপি *** বিনা অনুমতিতে নূরুল কবীরকে প্রেস কাউন্সিলের সদস্য করা হয়েছে, প্রত্যাহারের অনুরোধ *** জনসংখ্যা বাড়াতে প্রত্যেক শিশুকে বছরে ৬২ হাজার টাকা করে দেবে চীন *** প্রেস কাউন্সিলের সদস্য হলেন মাহফুজ আনাম, নূরুল কবীরসহ ১২ জন *** ইসরায়েলি দুই মন্ত্রীকে নেদারল্যান্ডসে ঢুকতে দেবে না দেশটির সরকার *** ডাকসু নির্বাচন ৯ই সেপ্টেম্বর *** আর কাউকে প্রতীকী মূল্যে জমি দেবে না সরকার: অর্থ উপদেষ্টা *** প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের ৩৪ হাজার শুন্য পদ পূরণে উদ্যোগ *** প্রাথমিক পর্যায়ে ঐকমত্যের খসড়া আজকালের মধ্যে পাবে রাজনৈতিক দলগুলো: আলী রীয়াজ

স্বাধীনতা দিবসের গুরুত্ব ও তাৎপর্য

সম্পাদকীয়

🕒 প্রকাশ: ০৬:৫৫ অপরাহ্ন, ২৬শে মার্চ ২০২৫

#

ছবি: সংগৃহীত

২৬শে মার্চ, বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা দিবস। ১৯৭১ সালের এ দিনের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণাটি ছিল, ‘এটাই হয়তো আমার শেষ বার্তা। আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন। বাংলাদেশের মানুষ যে যেখানে আছেন, আপনাদের যা কিছু আছে, তা দিয়ে সেনাবাহিনীর দখলদারির মোকাবেলা করার জন্য আহবান জানাচ্ছি। পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর শেষ সৈন্যটিকে বাংলাদেশের মাটি থেকে উৎখাত না করা এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জন না হওয়া পর্যন্ত আপনাদেরকে সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে।’ 

বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে বাঙালি জাতি বিজয় নিশ্চিত করেই ঘরে ফিরেছিল। বঙ্গবন্ধুর পক্ষে একাধিক ব্যক্তি স্বাধীনতার ওই ঘোষণাপত্র পাঠ করেন। তবে ২৭শে মার্চে মেজর জিয়াউর রহমানের চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ অনেক বেশি আলোড়িত করেছিল মানুষকে। কারণ, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একজন কর্মকর্তার ঘোষণা জনগণের মধ্যে দ্রুত সমর্থন, শক্তি ও সাহস জুগিয়েছিল। 

তিনি ঘোষণাপত্র পাঠ করে বলেন, ‘আমি মেজর জিয়াউর রহমান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করছি যে, স্বাধীন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আমি পশ্চিম পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আক্রমণের বিরুদ্ধে সকল বাঙালিকে জেগে ওঠার আহ্বান জানাই। মাতৃভূমিকে মুক্ত করতে আমরা শেষ পর্যন্ত লড়াই করব।’

বাঙালির স্বাধীনতা অর্জনের পেছনে রয়েছে দীর্ঘ ইতিহাস। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকে পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠী পূর্ব বাংলার মানুষ তথা বাঙালিদের সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ শুরু করে। প্রথমেই বাঙালিদের মাতৃভাষা ও সংস্কৃতির ওপর আঘাত হানে। সমগ্র পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ভাষা বাংলাকে বাদ দিয়ে উর্দুকে এককভাবে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেওয়া হয়।

মায়ের ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার দাবিতে গড়ে ওঠে আন্দোলন। ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি বাংলার দামাল ছেলেরা জীবন দিয়ে বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত করেন। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট বিজয় অর্জন করে। ’৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন, ’৬৬ সালের ছয়-দফা ও ছাত্রদের এগারো দফার আন্দোলন এবং ’৬৯ সালের গণআন্দোলন গণবিস্ফোরণে পরিণত হয়। আন্দোলনের মুখে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান পদত্যাগ করেন। 

ক্ষমতায় আসেন জেনারেল ইয়াহিয়া খান। তিনি ক্ষমতায় এসে নির্বাচন দেন। ১৯৭০ সালের ঐতিহাসিক সাধারণ নির্বাচনে বাঙালিদের রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের জোট নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। বিজয়ী দলের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হয় না। শুরু হয় ক্ষমতা থেকে বঞ্চিত করার ষড়যন্ত্র। ইয়াহিয়া তথা সরকারপক্ষ আলোচনায় বসার নামে শুরু করে কালক্ষেপণ।

সব ষড়যন্ত্র উপেক্ষা করে ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) এক বিশাল জনসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা বঙ্গবন্ধু অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়ে বলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ 

২৫শে মার্চ রাতে শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ঝাঁপিয়ে পড়ে ঘুমন্ত বাঙালিদের ওপর। 'অপারেশন সার্চলাইট' নাম দিয়ে পৃথিবীর ইতিহাসের বর্বরতম হত্যাকাণ্ড চালায়। তখন থেকেই ২৬শে মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধের পর পৃথিবীর বুকে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম হয়।

স্বাধীনতা যুদ্ধের মূল উদ্দেশ্য ছিল আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার অর্জন ও অসাম্প্রদায়িক, কল্যাণমুখী, মানবিক ও প্রগতিশীল এবং স্বতন্ত্র গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। মানুষের মৌলিক ও ন্যায়সংগত অধিকার নিশ্চিত করা। জাতীয় পরিচয় প্রতিষ্ঠা এবং শোষণ, বৈষম্য ও অন্যায়ের অবসান ঘটিয়ে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত একটি সুখী-সমৃদ্ধ সমাজ প্রতিষ্ঠা করা।

কিন্তু বাস্তব সত্য হচ্ছে, মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের এত বছর পরেও স্বাধীনতার পরিপূর্ণ সুফল পাওয়া যায়নি। জাতীয় জীবনে স্বাধীনতা দিবসের তাৎপর্য অপরিসীম। দিনটি বাঙালির জীবনে প্রতিবছর আসে আত্মত্যাগ ও আত্মপরিচয়ের বার্তা নিয়ে।

এইচ.এস/

স্বাধীনতা দিবস

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন