ছবি: সংগৃহীত
ধর্ম, বিশেষ করে ইসলামকে অবমাননা, বা দেশের সংখ্যাগুরু জনসংখ্যার ধর্ম এবং এর প্রচারক মুহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে কটূক্তির অভিযোগে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার ঘটনা দেশে দীর্ঘ বছর ধরে ঘটছে। ধর্মের অবমাননা করা ও অন্যের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়া কী শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে বিবেচিত? এ আইন কী সব ধর্মের অনুসারীর জন্য সমান? নিজের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগলে কী যে কোনো ধর্মের অনুসারী আইনের আশ্রয় নিতে পারেন, বা মামলা করতে পারেন? সব ধর্মের মানুষের ধর্মীয় অনুভূতি সমান বলে রাষ্ট্র কী স্বীকৃতি দেয়? দেশে শুধু একতরফা, বিশেষ করে হিন্দুসহ অন্য ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার মামলা হয় কেন?
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ধর্মীয় সংখ্যালঘু কারো বিরুদ্ধে ইসলামকে কটূক্তির অভিযোগ দেশে পুরনো 'ট্রেন্ড'। এরপর চলে তাদের পরিবার-পরিজন, গোষ্ঠীর ওপর আক্রমণ। হামলা। লুটপাট, বাড়িঘর ভাংচুর। প্রতিমা ভাংচুর। এতে নতুন যোগ হয়েছে 'ব্যক্তিগত আলাপচারিতায়', বা ন্যায্য মজুরি দাবি করায় ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে সংখ্যালঘুদের নির্যাতন ও কারাগারে পাঠানো। তাদের প্রতিমা ভাংচুর, মন্দিরে হামলার ঘটনায় কী ধর্ম অবমাননা হয় না? দেব-দেবীদের অযাচিত বাক্যে সনাতনধর্মের কী কটূক্তি হয় না?
বিশেষজ্ঞদের মতে, ফেসবুকের আইডিতে কে কী করেছেন, কারা করেছেন, কোনো ষড়যন্ত্র আছে কী না, কোনো আইডি হ্যাকড করে করা হয়েছে কী না, এটা যাচাই-বাছাই কিংবা তদন্ত করার দায়িত্ব প্রশাসনের। তবে ইসলামপন্থী সংগঠনগুলোর ডাকে সাড়া দিয়ে যেসব মাদ্রাসা ছাত্র কিংবা সাধারণ মানুষ সক্রিয় হচ্ছেন, তাদের বেশিরভাগই প্রকৃত ঘটনা সম্পর্কে কিছুই জানেন না। কোন ফেসবুক আইডিতে ইসলামের অবমাননা করা হয়েছে কিংবা সেখানে কী লেখা হয়েছে, সেটি আসল আইডি কী না, এ সম্পর্কে অধিকাংশের কোনো ধারণাই থাকে না। তবুও কেন এসব ঘটছে একের পর এক?
কথিত 'প্রতিবাদকারী', 'তৌহিদী জনতা', বা ' প্রতিবাদী মুসলমানরা' এগুলো যাচাই করার প্রয়োজন মনে করেন না কেন? এটা কী সংখ্যাগরিষ্ঠের ক্ষমতার জোর নয়? সংখ্যাগরিষ্ঠের ক্ষমতা দেখানোর প্রবণতা থেকেই একশ্রেণির মুসলমান যাচাই-বাছাই করার প্রয়োজন বোধ করেন না বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত। সংখ্যাগুরুরা এভাবে ক্ষমতা চর্চা করলে কোনো সমাজ সভ্য, সহনশীল ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির হয়ে উঠতে পারে না। এরপরও বাংলাদেশকে বিশ্বে 'সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য উদাহরণ' বলে কোন যুক্তিতে সরকারের পক্ষে দাবি করা হয়?
২০২৪ সালের ২৬শে জুন প্রকাশিত গবেষণাপ্রতিষ্ঠান 'সেন্টার ফর অল্টারনেটিভসের (সিএ) বাংলাদেশ পিস অবজারভেটরির (বিপিও)' প্রতিবেদনে বলা হয়, 'দেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংসতার ৭০ ভাগই ভূমিকেন্দ্রিক। সহিংসতার বহিঃপ্রকাশ ঘটে সংখ্যালঘুদের বিষয়সম্পদ বা ধর্মীয় উপাসনালয় ধ্বংসের মাধ্যমে।' ২০১৩ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত সংখ্যালঘুদের ওপর বিভিন্ন সহিংসতার ধরন বিশ্লেষণ করে এ তথ্য দেওয়া হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এ সহিংসতা সৃষ্টির ক্ষেত্রে এখন বড় ভূমিকা রাখছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে (মূলত ফেসবুক) ছড়ানো অপতথ্য। এসব প্ল্যাটফর্মে সংখ্যালঘুদের নিয়ে ঘৃণা ছড়ানোর ঘটনাও বাড়ছে। বিশেষ করে হিন্দু নারীরা এর ভুক্তভোগী হচ্ছেন বেশি মাত্রায়। দেব-দেবীদের সম্পর্কে কটূক্তি করা হচ্ছে। তাহলে এসব ঘটনা কী ধর্মীয় নয়? স্রেফ রাজনৈতিক? এসব ঘটনায় কী চাইলে সংখ্যালঘুরা মামলা দায়ের করতে পারেন? দেশের বিদ্যমান আইনে কী আছে?
অন্য ধর্মের অনুসারীদের মামলা দায়েরের সুযোগ
দেশের আইনে বলা হয়েছে, ধর্ম অবমাননা ও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে বিবেচিত হবে। কোনো ধর্মীয় স্থানের ক্ষতি সাধন, অসম্মান করা, লিখিত বা মৌখিকভাবে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা, ধর্মীয় অনুষ্ঠানে বিশৃঙ্খলা তৈরি ও অসম্মান করার উদ্দেশ্যে ধর্মীয় স্থানে অনধিকার প্রবেশ বা ধর্মীয় বাক্য বা শব্দের বিকৃতি ধর্মীয় অবমাননা বলে গণ্য হবে।
জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শাহদীন মালিক বলছেন, 'আইন শুধু কোনো নির্দিষ্ট ধর্মাবলম্বীদের জন্য নয়। সব ধর্মের অনুসারীই তাদের ধর্মানুভূতি আহত হলে এ আইনের দ্বারস্থ হতে পারেন। তবে সাধারণত দেখা যায়, ইসলাম ধর্মবিশ্বাসীরাই এ আইনের আশ্রয় বেশি নিয়েছেন। অন্য ধর্মবিশ্বাসের অনুসারীর ধর্মবিশ্বাস আহত হওয়ার অভিযোগে এ আইনের সহায়তা নিয়েছেন বলে আমার জানা নেই। দেশের আইনে ধর্মানুভূতিতে আঘাত করার অভিযোগে মামলা করার বা বিচার প্রক্রিয়ায় শাস্তির উদাহরণও বেশি নেই। কিন্তু ধর্মীয় অবমাননার অভিযোগ তুলে হামলা, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ বা পিটিয়ে হত্যার ঘটনা অনেকবার ঘটেছে।'
অভিযোগ প্রমাণ হয়?
গত কয়েক বছরে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় ধর্ম অবমাননার অভিযোগ পরে আর প্রমাণ করা যায়নি। বরং বেশ কিছু সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, বিভিন্ন সময়ে এ ধরনের অভিযোগ কৌশল হিসেবে ব্যবহার করে এসব হামলার পটভূমি তৈরি করা হয়েছে।
২০১৬ সালে রসরাজ দাস নামের এক যুবকের ফেসবুক পোস্ট ঘিরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হিন্দু সম্প্রদায়ের ঘরবাড়ি ও মন্দিরে হামলা হয়। কিন্তু পিবিআই ও সিআইডির ফরেনসিক বিভাগ পরীক্ষা করে মুঠোফোন সেট ও মেমোরি কার্ডে এ ধরনের ছবির অস্তিত্বই পায়নি। অর্থাৎ, সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যমূলকভাবে মিথ্যা প্রচারণা চালানো হয়েছে। কক্সবাজারের রামুতে বৌদ্ধদের মন্দির পোড়ানোর আগেও একই অপতথ্য ছড়ানো হয়েছিল। ২০২২ সালে কুমিল্লায় দুর্গোৎসবের সময় দেশের বেশ কয়েকটি জেলায়ও অপতথ্য ছড়িয়ে হামলা চালানো হয়।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এসব সহিংসতার বিচার হয় না। সাক্ষী খুঁজে পাওয়া যায় না। বছরের পর বছর চলে যায়, তদন্ত কাজ শেষ হয় না। ফলে সার্বিকভাবে সংখ্যালঘুদের মধ্যে ভয় ও নিরাপত্তাহীনতা দেখা দেয়।পাকিস্তান আমল থেকে শুরু করে স্বাধীনতার পর থেকেও দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় বিভিন্ন সময়ে আক্রমণের শিকার হয়েছে এবং প্রতিটি সরকারের আমলেই ধারাবাহিকভাবে কম-বেশি তা চলে আসছে। এসব ঘটনার বিচারের নজির খুব কম।
বিগত আওয়ামী লীগের সরকারের আমলে ফেসবুকের কথিত পোস্ট কেন্দ্র করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও উপাসনালয়ে ভাঙচুর ও লুটপাটের শত শত ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের। কোনো ঘটনারই বিচার হয়নি।
আইনে যা আছে
দেশে যে আইনে ফৌজদারি অপরাধের বিচার করা হয়, সেই ১৮৬০ সালের ফৌজদারি দণ্ডবিধিতে ধর্মীয় অবমাননার বিষয়ে সুস্পষ্ট আইন রয়েছে। আইনটি ১৯২৭ সালে সংশোধন করে নতুন একটি ধারা যোগ করা হয়। স্বাধীনতার পর ব্রিটিশ আমলে তৈরি এ আইন সামান্য পরিবর্তন করা হয়।
বাংলাদেশে বা ভারতে ধর্মীয় বিশ্বাসে আঘাত করা বা ধর্ম অবমাননার ক্ষেত্রে অনেক আগে থেকেই আইন রয়েছে। ব্রিটিশ শাসনামলে ১৮৬০ সালে যে ফৌজদারি দণ্ডবিধি তৈরি করা হয়, সেখানেই এ সংক্রান্ত বিধান রয়েছে। পরবর্তীতে যদিও সেটি কিছু কিছু সংশোধিত হয়েছে। এ আইনের ২৯৫ থেকে ২৯৮ ধারায় ধর্মীয় অবমাননার ব্যাখ্যা ও শাস্তির বিষয়ে বলা হয়েছে। যে কোনো ধর্মের মানুষ তাদের বিশ্বাস আহত হলে ফৌজদারি দণ্ডবিধির আইনের আশ্রয় নিতে পারেন।
ফৌজদারি দণ্ডবিধির ২৯৫ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ধর্মীয় স্থান বা সেখানকার কোনো বস্তু ধ্বংস করা, ক্ষতি করা বা অসম্মান করা ধর্মীয় অবমাননা হিসেবে গণ্য হবে। এ ক্ষেত্রে দুই বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড, জরিমানা বা উভয় দণ্ড হতে পারে।
পরবর্তীতে ১৯২৭ সালের একটি সংশোধনীর ২৯৫ (ক) ধারায় যোগ করা হয়েছে, ইচ্ছাকৃতভাবে দেশের কোনো নাগরিককে মৌখিক, লিখিতভাবে বা অন্য কোনো উপায়ে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা হলে তা ধর্মীয় অবমাননা বলে গণ্য হবে। এ রকম অপরাধের ক্ষেত্রে দুই বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড, জরিমানা বা উভয় দণ্ড হতে পারে। একই আইনের ২৯৬ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, আইনসঙ্গতভাবে আয়োজিত ধর্মীয় কোনো সমাবেশ বা অনুষ্ঠানে কেউ বাধা দিলে বা বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করলে সেটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হবে। তখন এক বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড, জরিমানা বা উভয় দণ্ড হতে পারে।
২৯৭ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তির ধর্মানুভূতিতে আঘাত করার উদ্দেশ্যে ধর্মীয় কোনো স্থানে অনধিকার প্রবেশ করা, মৃতদেহের অসম্মান অথবা শেষকৃত্যানুষ্ঠানে সমস্যা তৈরি করা হলে সেটাও ধর্মীয় অবমাননা বলে গণ্য হবে। এ রকম অপরাধের ক্ষেত্রে এক বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড, জরিমানা বা উভয় দণ্ড হতে পারে। ফৌজদারি দণ্ডবিধির ২৯৮ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, ধর্মানুভূতিতে আঘাত করার উদ্দেশ্যে কোনো বাক্য বা শব্দ বিকৃত করা, এমন অঙ্গভঙ্গি করা যাতে তার ধর্মবিশ্বাস আহত হতে পারে, এমন আচরণ করা হলে এক বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে। সেই সঙ্গে জরিমানার বিধানও রয়েছে।
মামলা কে করবেন?
আইনজীবীরা বলছেন, ধর্মানুভূতি আঘাতপ্রাপ্ত মনে হলে, ধর্মীয় বিশ্বাসে আঘাত হলে যে কোনো সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি আইনের সহায়তা নিতে পারেন। তিনি যেমন থানায় মামলা করতে পারেন, আবার সরাসরি আদালতেও মামলা করতে পারেন। এসব ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার পর প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী বিচার ও শাস্তি হতে পারে।
অভিজ্ঞদের মতে, দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘুদের ওপর এত বড় তাণ্ডব ঘটে যাওয়ার পর সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের মধ্যে যে আত্মোপলব্ধি জাগ্রত হওয়ার কথা ছিল, যে প্রতিবাদী ভূমিকা তাদের নেওয়ার কথা ছিল, বাস্তবে তার প্রচণ্ড ঘাটতি লক্ষ করা যাচ্ছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের ব্যানারে যেসব কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে, তা দায়সারা গোছের। দেশে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা কেন হয়, তা নিয়ে বিস্তর আলোচনা হলেও এর ফলে কে লাভবান হয় এবং কী প্রক্রিয়ায় তা প্রতিরোধ করা যায়, তা নিয়ে উল্লেখযোগ্য কোনো পদক্ষেপ লক্ষ করা যায় না। ফলে সংখ্যালঘুরা আতঙ্কিত থাকেন। তারা প্রতিকারের জন্যও আইনি ঝামেলায় জড়ানোর সাহস পান না।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কারণে দেশের বিভিন্ন স্থানে মব ভায়োলেন্স ও সাম্প্রদায়িক উসকানির মতো ঘটনাগুলো ঘটছে এবং ঘটনাগুলোর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আইনের আওতায় আনার ব্যাপারে সে রকম জরুরি কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে দেখা যাচ্ছে না। ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত সাপেক্ষে দোষী ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার ও উপযুক্ত শাস্তি হচ্ছে না। এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে সরকার, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিশেষ মনোযোগ নেই।
ধর্মীয় অনুভূতি বা অবমাননার অভিযোগ অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিষয়। এ ধরনের অভিযোগের তদন্তের স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষতা ও প্রমাণভিত্তিক বিচার নিশ্চিত করতে পারছে না প্রশাসন। অপরাধের অভিযোগ প্রমাণ হওয়ার আগেই সংখ্যালঘুদের সামাজিকভাবে হেয় করা, নিপীড়নের মুখে ঠেলে দেওয়া বা সহিংসতার দিকে ঠেলে দেওয়ার নিন্দনীয় ঘটনা ঘটছেই। বিচারহীনতার সংস্কৃতি সামাজিক সম্প্রীতি ও আইনের শাসনের জন্য গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ধর্মীয় নাকি রাজনৈতিক বিষয়?
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জোবাইদা নাসরিন মনে করেন, সংখ্যালঘুদের ওপর ধর্ম অবমাননার অভিযোগে হামলার বিষয়টি শুধু ইসলামের অবমাননা নয়, এর সঙ্গে রাজনৈতিক বিষয়ও জড়িত। প্রতিটি ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, ইসলাম ধর্মের অবমাননার অভিযোগ এনে বিভিন্ন ইসলামপন্থী সংগঠন তৎপর হয়েছে। ইসলামপন্থী সংগঠনগুলো এর মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে ব্যবহার করে নিজেদের প্রভাব জানান দিতে চায় বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
জোবাইদা নাসরিন বলেন, 'এ ধরনের সাম্প্রদায়িক হামলাগুলোকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে এবং সংগঠিত করে তারা মনে করিয়ে দিতে চায় যে, তারা শক্তিশালী। দেশের রাজনীতিতে ধর্ম সবসময়ই বড় হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। সেই রামু থেকে ভোলা পর্যন্ত প্রতিটি ঘটনার ক্ষেত্রেই পুলিশ বলেছে, ফেসবুক আইডি হ্যাকড কিংবা কোনো হিন্দু ধর্মাবলম্বীর নাম ব্যবহার করে ফেসবুক আইডি খুলে সেটির মাধ্যমে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে।'
নজিরবিহীন একটি 'বিশ্লেষণ'
সুইডেনভিত্তিক নেত্র নিউজ দাবি করেছে, সংখ্যালঘু অন্তর্ভুক্তিতে দক্ষিণ এশিয়ায় অনবদ্য বাংলাদেশ। গত ১২ই জুন প্রচারিত প্রতিবেদনে সংবাদমাধ্যমটি দাবি করে, ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের জন্য বাংলাদেশের সরকারি ও পেশাগত অঙ্গনে প্রবেশের দুয়ার প্রায় অবারিত। জনপ্রশাসন থেকে শুরু করে পুলিশ বাহিনী—রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সব দপ্তরে সিদ্ধান্তগ্রহণ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ রয়েছে সংখ্যালঘু কর্মকর্তাদের।
জনাকীর্ণ আদালতে আইনজীবী হিসেবে তারা মামলা পরিচালনা যেমন করছেন, তেমনি বিচারক হিসেবে পালন করছেন ন্যায়বিচার নিশ্চিতের গুরুদায়িত্বও। দেশের শীর্ষ সব বিদ্যাপীঠে অধ্যাপনা করছেন অনেকে। গণমাধ্যমেও সাংবাদিক হিসেবে রাখছেন জনমত তৈরিতে ভূমিকা। বেসামরিক এমন বহু খাত ও প্রতিষ্ঠানে সংখ্যালঘু কর্মকর্তাদের উপস্থিতির হার দেশের মোট জনসংখ্যায় তাদের নয় শতাংশ অনুপাতের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ—এমনকি কিছু ক্ষেত্রে খানিকটা বেশিও। বাংলাদেশের জনপরিসরে জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধিত্ব নিয়ে নেত্র নিউজের করা একটি বিশ্লেষণে এমন চিত্র উঠে এসেছে।
খবরটি শেয়ার করুন