ছবি: সংগৃহীত
নারী ও মানবাধিকারকর্মী খুশী কবির বলেছেন, ‘যৌনকর্মীদের কাছে যারা যান, তাদের হয়রানি করা হয় না। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থাও নেওয়া হয় না। এর চাহিদা আছে বলেই যৌনবৃত্তি টিকে আছে। শুধু যারা সাপ্লাই করছেন, তাদেরই কেন ক্রিমিনালাইজ করা? এ দ্বিচারিতা কেন? এখানে সবারই তো সমান মর্যাদা পাওয়ার কথা।’
অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে যৌনকর্মীদের স্বীকৃতির বিষয়ে যে প্রস্তাব করা হয়েছে, এর বিরোধিতা করছে কিছু গোষ্ঠী। এ পরিপ্রেক্ষিতে বক্তব্য জানতে চাইলে দৈনিক সমকালকে খুশী কবির এসব কথা বলেন।
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘নিজেরা করি’র সমন্বয়ক খুশী কবির বলেন, ‘নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনে নারীরা কাজ করেছেন। তারা নির্ভয়ে সুপারিশমালা জমা দিয়েছেন। সে জন্য আমি তাদের ধন্যবাদ জানাই। বাস্তব অবস্থা বিশ্লেষণ করে যে ধরনের সুপারিশ করা উচিত, তারা সেভাবেই করেছেন। তারা অন্যান্য দেশের বিষয়াদিও পর্যালোচনা করেছেন।’
তিনি বলেন, আমরা দেখছি, সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বলা আছে। নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন বলেছে, ‘যেহেতু রাষ্ট্র একটি ইহজাগতিক সত্তা, সেহেতু কোনো ধর্মীয় বিধান অনুসরণ করে সংবিধান শুরু হওয়া উচিত নয়। তাছাড়া এটি প্রাধান্যপ্রাপ্ত ধর্মনিরপেক্ষতা নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তাই অনুচ্ছেদটি বাতিল করা প্রয়োজন।’
এ বিষয়ে যুক্তি তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রের দায়িত্ব সব নাগরিককে সমানভাবে সুযোগ দেওয়া। সব নাগরিকের অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। ধর্ম-বর্ণ-লিঙ্গ-জাতি-গোষ্ঠী নির্বিশেষে সবার অধিকার নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। আমার মনে হয়, নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন এ আঙ্গিকেই সুপারিশ করেছে।’ খুশী কবিরের সাক্ষাৎকারটি সমকালের ছাপা সংস্করণে আজ শনিবার (২৬শে এপ্রিল) প্রকাশিত হয়েছে।
নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের কিছু সুপারিশে বিরোধিতা করেছেন অনেকে। বিশেষ করে, ধর্মপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোর বিরোধিতা স্পষ্ট। এ প্রসঙ্গে খুশী কবির বলেন, ‘যে কোনো সুপারিশ বা প্রস্তাবের বিরোধিতা থাকা অস্বাভাবিক নয়। এটা সত্য, আমাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ নাগরিক মুসলমান। এর অর্থ এই নয়– অন্য নাগরিকদের আমরা উপেক্ষা করব। সবাই যে এর (কমিশনের সুপারিশ) বিপক্ষে কথা বলেছে, তা নয়।’
তিনি বলেন, ‘আমরা দু-তিনটি গ্রুপের বিরোধিতা দেখেছি। এক গ্রুপ এ কমিশনের প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে পুরোপুরি বাতিল করার কথা বলেছে। আরেক গ্রুপ বলেছে, এ কমিশনের প্রতিবেদনে কিছু ভালো দিক আছে, আর কিছু দিক সংশোধন করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘সরকার এ কমিশন গঠন করেছে। সরকারই তাদের দায়িত্ব দিয়েছে। নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনে যারা আছেন, তাদের সবাই চেনেন। সরকার যেমন চেনে, তেমনি যারা বিরোধিতা করছেন, তারাও চেনেন। এ কমিশন গঠনের সময় তো তারা বিরোধিতা করেননি। কেন তাদের নেওয়া হচ্ছে– সে ধরনের কিছু তখন বলেননি।’
এইচ.এস/
খবরটি শেয়ার করুন