ছবি: সংগৃহীত
মদিনার ইহুদিরা মক্কার কুরাইশদের নবীজির (সা.) কাছে কিছু প্রশ্ন করার পরামর্শ দিয়েছিল। প্রশ্নগুলো ছিল আসহাবে কাহাফের পরিচয় ও ঘটনা, রুহের প্রকৃতি ও জুলকারনাইনের ঘটনা। সুরা কাহাফে এ ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে।
ইয়াজুজ-মাজুজ অর্থ দ্রুতগামী। ইয়াজুজ-মাজুজ পৃথিবীতে বের হয়ে অতি দ্রুত সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়বে। কারও কারও মতে, আরবি ‘মওজ’ শব্দ থেকে ‘ইয়াজুজ-মাজুজ’ শব্দের উৎপত্তি। এর অর্থ ‘তরঙ্গ’ বা ‘ঢেউ’। তাদের মতে, ইয়াজুজ-মাজুজ পৃথিবীতে বের হবে অজস্র সংখ্যায়, এরপর ঢেউয়ের মতো ছুটতে ছুটতে সারা পৃথিবীতে বিস্তার লাভ করবে। এ জন্যই তাদের এই নামকরণ।
ইয়াজুজ-মাজুজ সম্প্রদায় আদমের (আ.) বংশধর। শাসক জুলকারনাইন ইয়াজুজ-মাজুজদের প্রাচীর দিয়ে আটকে রেখেছেন (সুরা কাহাফ, আয়াত ৯২-৯৭)।
কিয়ামতের আগে ঈসার (আ.) পৃথিবীতে পুনরাগমনের সময় তারা ওই প্রাচীর ভেঙে বেরিয়ে আসবে এবং সামনে যা পাবে, সব ভক্ষণ করবে।
কোরআনে আছে, ‘সে (জুলকারনাইন) বলল, আমার প্রতিপালক আমাকে যে ক্ষমতা দিয়েছেন, তা-ই যথেষ্ট। সুতরাং, তোমরা আমাকে শ্রম দিয়ে সাহায্য করো, আমি তোমাদের ও তাদের মাঝখানে এক মজবুত প্রাচীর গড়ে দেব। তোমরা আমার কাছে লোহার তাল নিয়ে আসো। তারপর মধ্যবর্তী ফাঁকা জায়গা পূর্ণ হয়ে যখন লোহার ঢিবি দুটি পাহাড়ের সমান হলো, তখন জুলকারনাইন বলল, তোমরা হাপরে দম দিতে থাকো। যখন তা আগুনের মতো গরম হলো, তখন সে বলল, তোমরা গলানো তামা নিয়ে আসো, আমি তা ওর ওপর ঢেলে দেব। এরপর ইয়াজুজ-মাজুজ তা পার হতে পারল না বা ভেদ করতেও পারল না। জুলকারনাইন বলল, এ আমার প্রতিপালকের অনুগ্রহ। যখন আমার প্রতিপালকের প্রতিশ্রুতি পূর্ণ হবে, তখন তিনি তাদের চূর্ণবিচূর্ণ করে দেবেন, আর আমার প্রতিপালকের প্রতিশ্রুতি সত্য। সেদিন আমি (আল্লাহ) তাদের দলে দলে তরঙ্গের আকারে ছেড়ে দেব, আর শিঙায় ফুঁ দেওয়া হবে। তারপর আমি তাদের সবাইকে একত্র করব’ (সুরা কাহাফ, আয়াত: ৯৩-৯৯)।
ইয়াজুজ-মাজুজ নদীর পানি পান করে শেষ করে ফেলবে। তাদের সঙ্গে কেউ লড়াই করে পারবে না। একসময় তারা বায়তুল মুকাদ্দাসের এক পাহাড়ে গিয়ে বলবে, দুনিয়ায় যারা ছিল, তাদের হত্যা করেছি। এখন আকাশে যারা আছে, তাদের হত্যা করব।
তারা আকাশের দিকে তির নিক্ষেপ করবে। এ সময় ঈসা (আ.) তাদের জন্য দোয়া করবেন। এতে ইয়াজুজ-মাজুজের কাঁধের দিক থেকে একপ্রকার পোকা সৃষ্টি করে আল্লাহ তাদের ধ্বংস করবেন। পৃথিবীজুড়ে তাদের লাশ পড়ে থাকবে। আল্লাহ নখযুক্ত পাখি পাঠিয়ে লাশগুলোকে সরিয়ে নেবেন (বুখারি ও মুসলিম)।
কোরআনে ইয়াজুজ-মাজুজের বিস্তারিত পরিচয় দেওয়া হয়নি। বাইবেলের আদি পুস্তকে (১০ম অধ্যায়ে) তাদের নুহের (আ.) বংশধর বলা হয়েছে। তাদের মধ্যে কেউ অস্বাভাবিক বেঁটে, কেউ আবার অস্বাভাবিক লম্বা।
বাদশাহ জুলকারনাইনের যুগে তারা বিশৃঙ্খলা করেছিল। তাদের অনিষ্ট থেকে মানুষকে বাঁচাতে জুলকারনাইন তাদের যাতায়াতের পথে বৃহৎ প্রাচীর নির্মাণ করেছিলেন। জুলকারনাইন সারা বিশ্ব ভ্রমণ ও শাসন করতেন। এ কারণে তিনি পূর্ববর্তী আসমানি কিতাবে আলোচিত হয়েছিলেন। আরেকটি কারণ হলো, তিনি ইয়াজুজ-মাজুজের অত্যাচার থেকে রক্ষা করেছিলেন মানুষকে।
এইচ.এস/
খবরটি শেয়ার করুন