ছবি: সংগৃহীত
গলার কাঁটা হয়ে ছিলেন জানিথ লিয়ানাগে। খানিকটা কাঁপুনিও ধরিয়ে দেন। শেষ দিকে গিয়ে তাই দেখা মেলে রোমাঞ্চের। সেই রোমাঞ্চ জিতে সিরিজে সমতা ফিরিয়েছে বাংলাদেশ। কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে আজ শনিবার (৫ই জুলাই) শ্রীলঙ্কাকে ১৬ রানে হারিয়েছে মেহেদী হাসান মিরাজের দল।
২৪৯ রানের লক্ষ্য নেমে ব্যাট হাতে তখন বোলারদের কচুকাটা করছেন কুশল মেন্ডিস। লঙ্কান ইনিংসে নবম ওভারে বাংলাদেশের কাটার মাস্টার মোস্তাফিজের টানা চার বলে মারলেন বাউন্ডারি। ম্রিয়মাণ বাংলাদেশের ফিল্ডাররা। পরের ওভারেই তানভীর ইসলাম ফিরিয়ে দিলেন ওপেনার নিশান মাদুশকাকে (১৭)।
নিজের পরের ওভারটিতে বাংলাদেশের বাঁহাতি এ স্পিনার তুলে নিলেন ২০ বলে ফিফটি করা কুশলকে (৫৬)। আর তাতেই উজ্জীবিত হয়ে ওঠে বাংলাদেশ। তানভীরের সেই জোড়া ধাক্কায় ম্যাচে ফেরে বাংলাদেশ।
শ্লথ হয়ে পড়ে শ্রীলঙ্কার রানের চাকা। পরে তানভীর আরও তিন উইকেট নিয়ে দলের জয়ের আশা উজ্জ্বল করেন। ৩৯ রানে ৫ উইকেট তার। প্রায় ৩১ মাস পর ওয়ানডে এটিই বাংলাদেশের কোনো বোলারের ৫ উইকেট শিকার। এর আগে ২০২২ সালে ভারতের বিপক্ষে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন সাকিব আল হাসান।
৩১ বলে ৫৬ রান করা কুশল মেন্ডিস এবং ৫১ বলে ৩৩ রান করা কামিন্দু মেন্ডিসকে সরিয়ে তানভির বাংলাদেশের জয়ের পথ তরান্বিত করলেও পরে মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ান জানিথ লিয়ানাগে। স্রোতের বিপরীতে দাঁড়িয়েও বুক চিতিয়ে লড়ছিলেন তিনি। যেন পণ করেছিলেন দলকে জিতিয়েই ছাড়বেন।
লঙ্কান ইনিংসের ৪৮ তম ওভারে ৮৫ বলে ৭৮ রান তোলা লিয়ানাগেকে যখন ফিরিয়ে দিলের কাটার মাস্টার মোস্তাফিজুর রহমান, তখন জয়ের জন্য ১৬ বলে ২১ দরকার ছিল শ্রীলঙ্কার। শেষ পর্যন্ত শ্রীলঙ্কা তুলেছে ২৩২।
বাংলাদেশের স্কোরে বড় অবদান ওপেনিংয়ে পারভেজ হোসেন ইমনের ৬৭ এবং মিডল অর্ডারে তাওহীদ হৃদয়ের ৫১ রানের ইনিংসের। ফিফটি না করলেও হার না মানা ৩৩ রানের ইনিংস খেলে বাংলাদেশের ইনিংসকে আড়াই শর কাছাকাছি নিয়ে গেছেন তানজিম হাসান সাকিব।
শুরুটা অবশ্য ভালো হয়নি বাংলাদেশ ইনিংসের। দলীয় ১০ রানে ব্যক্তিগত ৭ রান করে বিদায় নেন তানজিদ তামিম। এরপর অবশ্য পারভেজ হোসেন ইমান ও নাজমুল হোসেন শান্তর ৫৫ বলে ৬৩ রানের জুটি। তারা যখন উইকেট ব্যাট করছিলেন, তখন মনে হয়েছিল বড় একটা ইনিংসের ভিতই পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। কিন্তু হতাশ করলেন শান্ত, অহেতুক বাজে শট খেলতে গিয়ে উইকেটে দিয়ে ফেরেন সাবেক অধিনায়ক।
বোলার চারিত আসালাঙ্কার শর্ট বলে ব্যাকফুটে বড় শট খেলতে গিয়েছিলেন। ঠিকঠাক মতো হয়নি। মাহিশ তিকশানাকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ব্যক্তিগত ১৪ রানে। এরপর হৃদয়ের সঙ্গে ইমনের ৩৭ রানের জুটি।
এ জুটি ভাঙে ইমনের বিদায়ে। শ্রীলঙ্কার ভীতি জাগানিয়া স্পিনার ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার গুগলিকে ঠিকমতো বুঝতে পারেননি ইমন। বোল্ড হয়ে যান তিনি। আউট হওয়ার আগে অবশ্য ৬৯ বলে ৬৭ রান করেন তিনি। তার ইনিংসটি ৬টি চার ও ৩টি ছয়ে সাজানো।
বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জুটিটি আসে ষষ্ঠ উইকেটে; জাকের আলী ও তাওহীদ হৃদয় যোগ করেন ৪৫ রান। বড় ইনিংসের সম্ভাবনা জানিয়ে জাকের ২৪ রানে আউট হয়ে গেলেও তাওহীদ হৃদয় করেন ৫১ রান।
এ ইনিংসের সুবাদেই হৃদয় ওয়ানডেতে এক হাজার রানের মাইলফলকে পা রেখেছেন। বাংলাদেশের ২৫তম ব্যাটার হিসেবে ১০০০ রান করলেন তিনি। হাজার রান করতে ৩৩ ইনিংস খেলতে হয়েছে তাকে। তার চেয়ে কম ইনিংসে হাজার রান করার কৃতিত্ব শুধু দুজনের, শাহরিয়ার নাফিস (২৯) ও এনামুল হকের (২৯)।
শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের রান যে আড়াই শত ছুঁই ছুঁই, তাতে অবদান আছে দুই টেল এন্ডার তানজিম হাসান সাকিব ও মোস্তাফিজুর রহমানের। মোস্তাফিজ ৭ বল খেলে একটি রানও করেননি। কিন্তু তাকে নিয়েই শেষ উইকেট জুটিতে ২৪ বলে ৩০ রান যোগ করেন তানজিম সাকিব। মোস্তাফিজ রানের খাতা খুলতে না পারলেও ৩৩ রান করে অপরাজিত থাকেন তানজিম সাকিব। বল হাতে সবচেয়ে সফল আসিতা ফার্নান্দো; ৩৫ বলে নিয়েছেন ৪ উইকেট। ৩ উইকেট ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা।
খবরটি শেয়ার করুন