সোমবার, ১৯শে মে ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৪ঠা জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বিশ্ব জাদুঘর দিবস

হারিয়ে যাচ্ছে জাদুঘরগুলোর আকর্ষণ

নিজস্ব প্রতিবেদক

🕒 প্রকাশ: ০৫:২২ অপরাহ্ন, ১৮ই মে ২০২৫

#

ছবি: সংগৃহীত

১৮ই মে বিশ্ব জাদুঘর দিবস। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘দ্রুত পরিবর্তনশীল সমাজে জাদুঘরের ভবিষ্যৎ’। প্রতি বছরের মতো এবারও দিসবটির তাৎপর্য তুলে ধরে জাদুঘর কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচির আয়োজন করছে। যাতে করে ছাত্র-শিক্ষক, গবেষকদের গবেষণা করার সুযোগ সৃষ্টি হয়, দেশের আপামর জনগণ সংস্কৃতি-ঐতিহ্য সম্পর্কে জানাতে পারে।

জানা যায়, ১৯৪৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অব মিউজিয়ামস’ (আইসিওএম)। এর সদস্য হিসেবে বর্তমানে বাংলাদেশসহ বিশ্বের মোট ১৮০টি দেশের ২৮ হাজার জাদুঘর যুক্ত রয়েছে।

১৯৭৭ সালে প্রথম আন্তর্জাতিক জাদুঘর পরিষদের আহ্বানে বিশ্ব জাদুঘর দিবস পালন করা হয়। প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী জাদুঘরের ভূমিকা প্রচারের জন্য এ দিবসে অংশগ্রহণের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে জাদুঘরগুলোকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। বার্ষিক প্রতিপাদ্য, ইভেন্ট ও ক্রিয়াকলাপের মাধ্যমে জাদুঘরগুলো এ দিবস উদযাপন করে। 

১৯৯২ সালে এ আয়োজনের জন্য একটি বার্ষিক প্রতিপাদ্য প্রথম গৃহীত হয়। ১৯৭৭ সালে প্রথম আন্তর্জাতিক পোস্টার তৈরি করা হয় এবং ওই বছর ২৮টি দেশ তা অনুমোদন  করে।

পৃথিবীর শুরু থেকে আজ পর্যন্ত যতো ইতিহাস জমা হচ্ছে, তারই প্রতিচ্ছবি হলো জাদুঘর। এ উপমহাদেশে ব্রিটিশদের মাধ্যমে জাদুঘরের ধারণাটি এসেছে। ভারতীয় এশিয়াটিক সোসাইটির সদস্যরা এ অঞ্চলের জাতিতাত্ত্বিক, প্রত্নতাত্ত্বিক, ভূ-তাত্ত্বিক এবং প্রাণীবিষয়ক নমুনা সংগ্রহ করে সেগুলোকে যথাযথভাবে সংরক্ষণ ও প্রদর্শনের ব্যাপারে উদ্যোগী হন। 

লর্ড ওয়ারেন হেস্টিংস, যিনি এশিয়াটিক সোসাইটির পৃষ্ঠপোষক ছিলেন— তিনি কলকাতার পার্ক স্ট্রিটে জমির ব্যবস্থা করেন। ১৮০৮ সালে সেখানে জাদুঘরের জন্য ভবন নির্মাণ শেষ হয়। এ প্রক্রিয়ায় ১৮১৪ সালে উপমহাদেশের প্রথম জাদুঘর ‘এশিয়াটিক সোসাইটি মিউজিয়াম’-এর জন্ম ও প্রতিষ্ঠা হয়।

১৯১০ সালের এপ্রিলে দিঘাপতিয়া রাজপরিবারের সার্বিক পৃষ্ঠপোষকতায় শরৎকুমার রায়ের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত ‘বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর’ হচ্ছে বাংলাদেশের প্রথম জাদুঘর। ১৯১৩ সালে এটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়।

বাংলার গভর্নর লর্ড কারমাইকেল জনগণের চাহিদা পূরণে একটি জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করার কথা চিন্তা করেন। ১৯১১ সালের বঙ্গভঙ্গ তাতে বাধা হয়ে দাঁড়ায়, ১৯১২ সালের দিকে তিনি দেশের কিছু বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন, যারা বেশ কিছু পুরনো সামগ্রীর প্রদর্শনীর আয়োজন করেছিলেন। 

প্রদর্শনীটি দেখে লর্ড কারমাইকেল মুগ্ধ হয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ঢাকায় একটি জাদুঘর তৈরি করবেন। জাদুঘরটির কাজ শুরু করার জন্য ২ হাজার রুপি দান করেন। জাদুঘরটি প্রতিষ্ঠা করতে বনহ্যাম কারটার ও স্যার নিকোলাস ডড বেটসন গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন।

বাংলাদেশে এখন শতাধিক জাদুঘর রয়েছে। জাতীয় জাদুঘরের কার্যক্রম কেবল শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরেই সীমাবদ্ধ নয়, পুরান ঢাকার আহসান মঞ্জিল জাদুঘর, এলিফ্যান্ট রোডে শহীদ জননী জাহানারা ইমাম স্মৃতি জাদুঘর, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা জাদুঘর, চট্টগ্রামে জিয়া স্মৃতি জাদুঘর, সিলেটে ওসমানী স্মৃতি জাদুঘর, ময়মনসিংহে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন সংগ্রহশালা, ফরিদপুরে পল্লিকবি জসীমউদ্‌দীন সংগ্রহশালা ও জাদুঘর, কুষ্টিয়ায় সাংবাদিক কাঙ্গাল হরিনাথ সংগ্রহশালা ও জাদুঘর এবং কুমিল্লায় নবাব ফয়জুন্নেসা স্মৃতি জাদুঘরও পরিচালনা করে থাকে।

জাতীয় জাদুঘরের প্রতি দর্শকদের আকর্ষণ দিনদিন কমছে। একসময় জাতীয় জাদুঘর ছিল ঢাকায় বেড়াতে আসা মানুষের কাছে প্রধান আকর্ষণের কেন্দ্র। বর্তমানে হারিয়ে যাচ্ছে জাদুঘরগুলোর আকর্ষণ। প্রতিবছর দর্শনার্থীর সংখ্যা কমছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একই নিদর্শন দীর্ঘদিন ধরে প্রদর্শন করা, প্রচারের ঘাটতি ও পরিচালনার জন্য দক্ষ জনবলের অভাবে জাদুঘরগুলো আকর্ষণ হারাচ্ছে।

এইচ.এস/


জাদুঘর দিবস

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন