পশ্চিমতীরের রামাল্লায় দুই ইসরায়েলি সেনা। ছবি: দ্য গার্ডিয়ান
ব্রিটেন, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে। শিগগিরই স্বীকৃতি দেবে ফ্রান্স, পর্তুগালসহ আরও কয়েকটি দেশ। এর মধ্য দিয়ে বিশ্বে ১৪০টিরও বেশি দেশের স্বীকৃতি পেতে যাচ্ছে ফিলিস্তিন। এ অবস্থায় পশ্চিমতীরে বসবাস করা ফিলিস্তিনিদের প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়েছিল দ্য গার্ডিয়ান। কিন্তু দেখা গেছে, স্বীকৃতি নিয়ে পশ্চিমতীরের মানুষের প্রতিক্রিয়ায় যেমন আনন্দ রয়েছে, তেমনি শঙ্কাও স্পষ্ট। খবর গার্ডিয়ানের।
রাষ্ট্র হিসেবে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতির বিষয়ে রামাল্লার উপকণ্ঠে আল-আমারি শরণার্থীশিবিরের নাপিত আবু সাঈদ বলেছেন, ‘অনেক দেরিতে হলেও এই স্বীকৃতি আমাদের অধিকারের স্বীকৃতি। কিন্তু শুধু ঘোষণা যথেষ্ট নয়, বাস্তব পদক্ষেপ চাই।’ তার মতে, গত ৭৭ বছরে বহু প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ হয়েছে।
স্থানীয় ‘চে গুয়েভারা’ ক্যাফের গ্রন্থাগারিক মোহাম্মদ রিজক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এটা শুধু প্রতীকী। কোন সীমান্ত চিহ্নিত করে তারা রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিচ্ছে—কেউ কি জানে? শেষ পর্যন্ত আমেরিকা ভেটোই দেবে।’ ক্যাফেটির দেয়ালে ইয়াসির আরাফাতসহ ফিলিস্তিনি বিভিন্ন প্রতীকের ছবি দৃশ্যমান। ১৯৪৮ সালে উদ্বাস্তু হওয়া ফিলিস্তিনিদের স্মৃতি আর গাজার চলমান যুদ্ধের অনেক দৃশ্য সেখানে সাঁটানো রয়েছে।
আল-আমারি শরণার্থীশিবিরটি দীর্ঘদিন ধরে ফাতাহ সমর্থকদের ঘাঁটি। এখানকার অনেকেই ইসরায়েলে ২০২৩ সালের ৭ই অক্টোবর হামাসের হামলাকে সমালোচনা করেছেন। তবে তারা একই সঙ্গে গাজার ওপর চলমান হামলায় হাজারো সাধারণ মানুষের মৃত্যুকে ‘অসহনীয় ট্র্যাজেডি’ বলে আখ্যা দিয়েছেন।
সেখানকারই ল্যাব টেকনিশিয়ান উম্মে করিম মত দেন—শুধু স্বীকৃতি দিয়ে কিছু হবে না, ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে। নিষেধাজ্ঞাও দিতে হবে।
ইতিপূর্বে ব্রিটেনের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি জাতিসংঘে বলেছিলেন, ফিলিস্তিনিদের প্রতি ব্রিটেনের ঐতিহাসিক দায় রয়েছে—বিশেষ করে ১৯১৭ সালের বেলফোর ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে। তিনি স্বীকার করেন, ফিলিস্তিনিদের অধিকার সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি কখনোই পূরণ হয়নি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক নূর ওদেহ বলেছেন, ‘স্বীকৃতি মানে প্রতিশ্রুতি, যা বাস্তবায়ন করতে হবে।’
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু অবশ্য ফ্রান্স ও অন্যান্য দেশের পদক্ষেপকে ‘হামাসকে পুরস্কৃত করা’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। তার মতে, এটি শুধু সহিংসতাকে উসকে দেবে।
তবে পশ্চিমতীরের সাধারণ মানুষ মনে করছেন, দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী সংগ্রামের মতো আন্তর্জাতিক চাপই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের একমাত্র কার্যকর পথ হতে পারে। তবে আশঙ্কাও রয়েছে, এই স্বীকৃতি গাজার বিপর্যয় থেকে মনোযোগ সরিয়ে নেবে এবং দখলদারি ও অবৈধ বসতি স্থাপন বন্ধের মতো জরুরি ইস্যুগুলো অনিষ্পন্নই থেকে যাবে।
আল-আমারির নাপিত আবু সাঈদ নিজের জীবনের অভিজ্ঞতার সঙ্গে ফিলিস্তিনের দীর্ঘ সংগ্রামকে তুলনা করেন। তিনি বলেন, ‘গ্রাহকেরা আসে যায়, ফ্যাশন বদলায়, সবাই নানা পরামর্শ দেয়। কিন্তু দিনের শেষে আমি যেমন দোকানে দাঁড়িয়ে থাকি, আমাদের অবস্থাও তেমনই অপরিবর্তিত।’
খবরটি শেয়ার করুন