শনিবার, ৭ই জুন ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২৪শে জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ঈদে ঘরে ফেরা

'ঝাঁকবাঁধা সারসের মতো উড়ে গেল মানুষের অগণিত মাথা’

বিশেষ প্রতিবেদক

🕒 প্রকাশ: ১১:৪৫ অপরাহ্ন, ২৮শে মার্চ ২০২৫

#

ফাইল ছবি (সংগৃহীত)

প্রতি বছর ঈদের ছুটিতে বাস-ট্রেন-লঞ্চে চড়ে ঢাকা থেকে 'নিজস্ব ঠিকানার সন্ধানে' ছুটে চলা মানুষদের নিয়ে কবিতায় এক অসাধারণ চিত্রকল্প এঁকেছিলেন কবি আল মাহমুদ।

ঈদ সামনে রেখে কোটি মানুষের ঢাকা ছাড়ার এমন দৃশ্যকে কবি তুলনা করেছিলেন ঝাঁকবাঁধা সারসের উড়ে যাওয়ার দৃশ্যের সঙ্গে।

গত শতকের পঞ্চাশের দশকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ঢাকায় এসে থিতু হওয়া প্রবাদপ্রতিম এ কবি লিখেছিলেন 'ঝাঁকবাঁধা সারসের মতো উড়ে গেল মানুষের অগণিত মাথা/সদরঘাটের উপচে পড়া ভিড়ের ভেতর দ্যাখো ঘোমটা দেওয়া বধূ/যেন লণ্ডভণ্ড বাংলাদেশ কোনো অলৌকিক নিয়মে যূথবদ্ধ হয়েছে/শিশুরা মায়ের পরিধেয় উদোম করে শুষে নিচ্ছে অফুরন্ত ধলেশ্বরী/সকলের চোখেই নদী-মাঠ-শস্যের সীমাহীন সোনার তরঙ্গ/সবকিছু পার হয়ে দেশে ফেরার প্রতিযোগিতা।'

কবিতার উল্লিখিত চরণগুলো কবি ঠিক কোন সময়কালে লিখেছিলেন, তা ঠিক জানা যায়নি। তবে নতুন শতাব্দির সিকি ভাগ পেরিয়ে এসেও এমন দৃশ্যের কোনো হেরফের হয়নি।

এবারও পবিত্র ঈদুল ফিতর ঘিরে টানা নয় দিন ছুটি শুরুর আগে থেকেই সড়ক, রেল ও নৌপথে ঈদযাত্রা শুরু হয়ে গেছে। তবে আজ শুক্রবার (২৮শে মার্চ) সরকারি ছুটির শুরুর দিন সকাল থেকে সড়ক-মহাসড়কে ঢাকা ছাড়তে থাকা মানুষের ভিড় ছিল তুলনামূলক বেশি।

সঠিক কোনো পরিসংখ্যান না থাকলেও ধারণা করা হয়, ঈদে অর্ধেকের বেশি মানুষ ঢাকা ছাড়েন। মোবাইল ফোন অপারেটরদের তথ্য অনুসারে, গত বছরেও ঈদুল ফিতর উদযাপন উপলক্ষে ঢাকা ছেড়েছিলেন এক কোটির বেশি সিমধারী।

আজ ভোর থেকেই দক্ষিণাঞ্চলের প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত পদ্মা সেতুর মাওয়া দিয়ে ঘরমুখো মানুষের ঢল নামে। মাওয়া টোল প্লাজা থেকে তৈরি হয় যানবাহনের দীর্ঘ সারি।

সেতু কর্তৃপক্ষের হিসাব অনুসারে, এদিন সকাল ৬টা থেকে ১০টা পর্যন্ত চার ঘণ্টায় প্রায় ৫ হাজার মোটরসাইকেল সেতু পার হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার (২৭শে মার্চ) পদ্মা সেতু দিয়ে পার হওয়া যানবাহনের সংখ্যা ছিল ২৭ হাজার ৬৮৩টি।

যানজট-প্রবণ এলাকাগুলোতে কিছুটা ধীরগতি থাকলেও এবারের ঈদে বাড়ি ফেরার যাত্রায় দেশের ব্যস্ততম মহাসড়ক ঢাকা-চট্টগ্রামের কুমিল্লা অংশ স্বস্তিতেই পাড়ি দেন মানুষ।

এ মহাসড়কের কুমিল্লা অংশের ১০৫ কিলোমিটার এলাকার ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে প্রায় এক হাজারের বেশি পুলিশ সদস্য, দুই শতাধিক রোভার স্কাউট সদস্য এবং সেনাবাহিনী ও আনসার সদস্য নিয়োজিত আছেন বলে জানায় হাইওয়ে পুলিশ।

এর বাইরে ঈদযাত্রার পঞ্চম দিন আজ সকাল থেকেই কমলাপুর স্টেশনে ঈদে ঘরমুখী মানুষের ভিড় দেখা যায়। তবে টিকিটবিহীন যাত্রীদের স্টেশনে প্রবেশের সুযোগ না দেওয়ার বিষয়ে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের কঠোর সিদ্ধান্তের কারণে কমলাপুরে উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়নি। ট্রেন ছাড়ার আগ পর্যন্ত নির্দিষ্ট প্ল্যাটফর্মে যাত্রীদের ভিড় জমছিল। ট্রেন ছেড়ে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সেই ভিড় আবার কমে যেতে দেখা যায়।

আর উত্তরের ঈদযাত্রায় দুপুর ১২টা পর্যন্ত ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যানবাহনের চাপ থাকলেও চিরাচরিত যানজটের দেখা মেলেনি।

এক সময় ঈদে বাড়ি ফেরার লঞ্চ ধরার জন্য দুপুরের আগে থেকেই ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে যাত্রীরা সদরঘাটের দিকে যাত্রা শুরু করতেন। তখন গুলিস্তান থেকে সদরঘাট পর্যন্ত তীব্র যানজট লেগে থাকতো। অনেক যাত্রীকে সঠিক সময়ে লঞ্চে উঠার জন্য হাঁটতেও দেখা যেত। রোজার শুরু থেকেই সরগরম থাকতো টার্মিনালের কাউন্টারগুলো। কর্মচারীদের দম ফেলার সুযোগ থাকতো না।

২০২২ সালের জুনে পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকে ওই চিত্র আর নেই। আজও সেখানে চিরচেনা সেই চিত্র চোখে পড়েনি। ঈদের সময় বাসের ভাড়া বাড়ানোয় ও স্বস্তির যাত্রার জন্য অনেকে সড়ক পথ ছেড়ে নৌপথ বেছে নেন। সে কারণে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে কিছুটা যাত্রীর চাপ বেশি থাকায় বাড়তি প্রস্তুতি নিতে দেখা গেছে লঞ্চ মালিকদের।

এইচ.এস/

ঈদযাত্রা

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন