ছবি: সংগৃহীত
ইসবগুল একধরনের ডায়েটারি ফাইবার, যার কিছু পানিতে দ্রবীভূত হয়, কিছু হয় না। অন্ত্রের ভেতরে থাকাকালে ইসবগুলের ভুসি প্রচুর পানি শোষণ করে। কোনো কিছুর সঙ্গে বিক্রিয়া করে বিষক্রিয়া তৈরি করে না।
যেহেতু এটা কার্যকারিতার জন্য অন্ত্র থেকে পানি শোষণ করে, তাই দুই চা-চামচ ভুসি, পানি বা দুধে গুলিয়ে সঙ্গে সঙ্গেই খেয়ে ফেলা ভালো। দীর্ঘক্ষণ ভিজিয়ে রাখলে এটা বাইরে থেকেই পানি শোষণ করে নেবে, অতএব কার্যকারিতাও কমে যাবে। তবে ইসবগুল খাওয়ার পদ্ধতির ভিন্নতার ওপর ভিত্তি করে উপকারিতা নির্ভর করে। চলুন এ সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে ইসবগুল
১. ১-২ চামচ ইসবগুল ২৪০ মিলিলিটার পানিতে মিশিয়ে সঙ্গে সঙ্গে খেতে হবে।
২. ইসবগুল পায়খানায় পানির পরিমাণ বৃদ্ধি করে পায়খানা নরম করে এবং সহজে বের হতে সাহায্য করে।
৩. ইসবগুল কতটুকু খেতে হবে, তা বয়স, ওজন, শারীরিক অন্যান্য অসুস্থতার ওপর নির্ভর করে।
ডায়রিয়া চিকিৎসায় ইসবগুল
১. খাওয়ার পর ২ চামচ ইসবগুল ৩ চামচ দইয়ের সঙ্গে মিশিয়ে খেতে হবে।
২. প্রতিদিন এই নিয়মে ইসবগুল সেবনে পায়খানা নরম হওয়ার বদলে শক্ত হবে। দই এ ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিক হিসেবে কাজ করবে।
৩. ইসবগুল যে কারণে ডায়রিয়া হয়েছে, যেমন ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস খাদ্যনালির যে ক্ষতি সাধন করে, তা সারিয়ে তোলে।
দীর্ঘদিন হজমের সমস্যায় ইসবগুলের ব্যবহার
১. প্রতিদিন ২ চামচ ইসবগুল ২৪০ মিলিলিটার পানিতে মিশিয়ে সঙ্গে সঙ্গে খেতে হবে।
২. ইসবগুল পাকস্থলী পরিষ্কার করে।
৩. খাদ্যনালি রাখে টক্সিনমুক্ত, যা ক্ষতিকর পদার্থ সহজে শরীর থেকে বের করে দেয়।
আরো পড়ুন : অসুস্থ অবস্থায় কোন খাবারগুলো খাওয়া উচিত নয়
অর্শ্বরোগ নিরাময়ে ইসবগুল
১. ২ চামচ ইসবগুল কুসুম গরম পানিতে মিশিয়ে সঙ্গে সঙ্গে খেতে হবে।
২. এটি পায়খানায় পানির পরিমাণ বাড়ায় ও নরম করে, ফলে ব্যথা লাগে না।
৩. পায়খানা নরমের ফলে বৃহদন্ত্রে কম চাপ পড়ে এবং কম রক্ত যায়।
বুক জ্বালাপোড়া বা গ্যাসের সমস্যায় ইসবগুল
১. ২ চামচ ইসবগুল ১/২-১ চামচ ঠান্ডা দুধে মিশিয়ে খাবার পর সেবন করলে অ্যাসিডের সমস্যা দূর হয়।
২. দুধ ও ইসবগুল অ্যাসিড প্রশমিত করে।
৩. ইসবগুল পাকস্থলী ও খাদ্যনালির ভেতরে আলাদা একটি পর্দা তৈরি করে, যা অ্যাসিড থেকে খাদ্যনালীর পর্দাকে রক্ষা করে বুক জ্বালাপোড়া কমায়।
৪.পাকস্থলী থেকে সঠিক পরিমাণ অ্যাসিড নিঃসৃত করে।
ওজন কমাতে ইসবগুলের ভূমিকা
১. ওজন কমানোর জন্য ২ চামচ ইসবগুল ২৪০ মিলিলিটার পানি ও ১-২ চামচ লেবুর রস দিয়ে মিশিয়ে সকালে খালি পেটে খেতে হবে। এর ফলে বেশ খানিকক্ষণ পেট ভরা থাকে।
২. ইসবগুল খাদ্যনালি পরিষ্কার করে ও শরীরে চর্বি কমায়।
আরো পড়ুন : সজনে পাতার সুস্বাদু পাকোড়া তৈরির রেসিপি
কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়
১. প্রতিদিন খাবারের পর ইসবগুল খেলে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়।
ডায়াবেটিস চিকিৎসায় ইসবগুল
২. ১-২ চামচ ইসবগুল ২৪০ মিলি পানির সঙ্গে মিশিয়ে খেলে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ কমায়। এ জন্য ডায়াবেটিস রোগীদের ইসবগুল সেবনের সময় সচেতনতা অবলম্বন করতে হবে।
৩. ডায়াবেটিস রোগীরা দইয়ের সঙ্গে ইসবগুল সেবন থেকে দূরে থাকবেন।
ইসবগুল সেবনে সতর্কতা
১. অতিরিক্ত ইসবগুল সেবনের ফলে ক্ষুধামান্দ্য, ডায়রিয়া হতে পারে।
২. ইসবগুল বিভিন্ন ওষুধের কার্যকারিতায় প্রভাব ফেলে। তাই ওষুধ সেবনের ২ ঘণ্টা আগে অথবা ২ ঘণ্টা পর সেবন করতে হবে।
৩.ইসবগুল দীর্ঘক্ষণ ভিজিয়ে রাখলে পানি শোষণ করে এটি ফুলে যায়। ফলে কার্যকারিতা কমে যায় এবং গলায় আটকে মারাত্মক বিপজ্জনক অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে।
ইসবগুল খাওয়ার পদ্ধতির ওপর ভিত্তি করে এর কার্যকারিতা নির্ভর করে। তাই সঠিক নিয়ম-পদ্ধতি জেনে সে অনুযায়ী ইসবগুল সেবনে সচেতন হতে হবে।
এস/ আই. কে. জে/
খবরটি শেয়ার করুন