প্রতীকী ছবি
নতুন সদস্য যুক্ত করার বিষয়ে ব্রিকস জোটের সদস্যদের দ্বিধা-বিভক্তির কারণে আগামী সপ্তাহে জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠেয় ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে এর পরিধি বাড়ছে না। তাই জোটে যোগ দিতে গেলে আপাতত অপেক্ষায় থাকতে হবে বাংলাদেশসহ অন্যান্য আগ্রহী দেশগুলোকে।
রাশিয়া, চীন, ভারত, ব্রাজিল ও দক্ষিণ আফ্রিকা গত বছর ব্রিকসের পরিধি বাড়ানোর আগ্রহ দেখিয়েছিল। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশসহ অন্তত ২৩টি দেশ ব্রিকসে যোগ দেওয়ার কথা বলেছে। কিন্তু ব্রিকসকে পুরোপুরি একটি পশ্চিমাবিরোধী ফোরামে রূপান্তরে আগ্রহী নয় ভারত ও ব্রাজিল।
মূলত ব্রিকসের পরিধি বাড়ানোর বিষয়ে চীনের আগ্রহটাই ছিল বেশি। বিশেষ করে এটিকে পশ্চিমাবিরোধী প্ল্যাটফর্মে রূপ দিতে চীনের আকাঙ্ক্ষাটা অজানা নয়। কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলেছে, ব্রিকসের পরিধি বাড়ানোর বিষয়ে চীন ও রাশিয়া রাজি থাকলেও ভারত ও ব্রাজিল তাতে রাজি নয়। ভারত অবশ্য বলেছে, জোটে নতুন সদস্য নেওয়ার আগে ব্রিকসের পরিধি বাড়ানোর মূলনীতি চূড়ান্ত করাটা জরুরি।
সরাসরি না বললেও এবারের ব্রিকস সম্মেলনের স্বাগতিক দেশ দক্ষিণ আফ্রিকাও প্রকারান্তরে ভারত ও ব্রাজিলের পথেই রয়েছে। ঐকমত্যের ভিত্তিতে ব্রিকসের কর্মকাণ্ড পরিচালিত হওয়ার কারণে এর পরিধি এবার বাড়ছে না।
ঢাকা এবং প্রিটোরিয়ার কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, ২২ থেকে ২৪ আগস্ট জোহানেসবার্গে ব্রিকসের পঞ্চদশ শীর্ষ সম্মেলনে নতুন সদস্য যুক্ত করার বিষয়ে বিস্তারিত কোনো আলোচনা হবে না। কারণ, শীর্ষ সম্মেলনের আলোচ্যসূচিতে এমন কোনো বিষয় নেই। পাঁচ দেশের অর্থনৈতিক জোটে ভবিষ্যতে নতুন সদস্যদের অন্তর্ভুক্তিকে স্বাগত জানানোর বিষয়টি শীর্ষ সম্মেলনের আলোচনায় আসবে।
এখন পর্যন্ত ব্রিকসে যোগ দিতে ২৩টি দেশ আবেদন করেছে। এর মধ্যে বাংলাদেশসহ ১৫টি দেশ আবেদন করেছে ২০২৩ সালে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন গত বৃহস্পতিবার তাঁর দপ্তরে সাংবাদিকদের বলেন, গত জুনে জেনেভায় দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন ব্রিকসে যাওয়ার জন্য। তখন ধারণা ছিল, তারা নতুন কিছু দেশকে ব্রিকসের সদস্য করবে।
তবে এটা ব্রিকসের সদস্য পাঁচ দেশের ওপর নির্ভর করে বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘সেখানে যে বিতর্ক (ডিবেট) হচ্ছে, সেটি হচ্ছে—তিনটি দেশ চাইছে নতুন সদস্য নেবে। এ ছাড়া ভারত ও ব্রাজিল বলছে, নেওয়ার আগে নতুন নিয়মকানুন তৈরি করতে হবে। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট তখন বলেছিলেন, তাঁরা চারটি দেশকে নিতে চান। আমরা জিজ্ঞাসা করেছিলাম, কারা কারা? তখন তিনি জানিয়েছিলেন, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইন্দোনেশিয়া ও বাংলাদেশ।’
ভারতের বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং লন্ডনের কিংস কলেজের অধ্যাপক হর্ষ পন্ত এক নিবন্ধে লিখেছেন, চীন সমমনা দেশগুলোকে ব্রিকসে স্বাগত জানানোর কথা বললেও ভারতের নীতিনির্ধারকেরা এ বিষয়ে সতর্ক।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর যখন মন্তব্য করেন, জোটের পরিধি বাড়ানোর বিষয়ে এখনো কাজ হচ্ছে। এই মন্তব্য থেকে এটাই স্পষ্ট যে পাঁচ দেশের জোটের কলেবর বাড়াতে সদস্যদেশগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য রয়ে গেছে। তাই সদস্যদেশগুলোর মধ্যে বিষয়টি পারস্পরিক আস্থা ছাড়া জোটের কলেবর বৃদ্ধির প্রয়াস বিফলে যাবে।
সাবেক পররাষ্ট্রসচিব মো. শহীদুল হক আজ বৃহস্পতিবার সকালে গণমাধ্যমকে বলেন, ব্রিকসের মতো জোটে নতুন সদস্যদের অন্তর্ভুক্তি একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। ফলে হুট করেই যেকোনো একটি দেশ ব্রিকসের সদস্য হয়ে যাবে, এমনটা ভাবার সুযোগ নেই।
অন্যদিকে মূলত পশ্চিমা উন্নয়ন মডেলের বিপরীতে বিকল্প হিসেবে জোটের যাত্রা হলেও ব্রিকসকে ব্যবহার করে পরিবর্তনশীল ভূরাজনীতিতে চীনের প্রাধান্য বিস্তার করতে চাইছে। কিন্তু ব্রাজিল, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকা সেটা করতে দিতে চাইছে না। ব্রিকসের সম্প্রসারণের বিষয়টি এখন আর অর্থনীতি বা উন্নয়নে সীমিত নেই, এতে বৈশ্বিক রাজনীতি যুক্ত হয়ে গেছে। এমন এক প্রেক্ষাপটে নতুন সদস্য যুক্ত করে জোটের কলেবর বাড়ানোর বিষয়টিকে সহজভাবে দেখার সুযোগ নেই।
এম.এস.এইচ/
খবরটি শেয়ার করুন