ছবি - সংগৃহীত
বৈদেশিক শ্রমবাজার বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম মূল স্তম্ভ। কিন্তু দিনদিন ক্রমেই সংকুচিত হচ্ছে বিদেশের শ্রমবাজার। অদক্ষ শ্রমিক, জাল কাগজপত্র, দুর্নীতিসহ নানা অভিযোগে চলতি বছরই বেশকিছু দেশে শ্রম অভিবাসন বন্ধ হয়েছে।
বাংলাদেশী শ্রমিকরা মূলত নির্মাণ শ্রমিক, কৃষি শ্রমিক, বৃক্ষরোপণ, কারখানা, পরিচ্ছন্নতা কর্মী ও সেবা খাতের রেস্টুরেন্ট, কফিশপ, হোটেল, ছোট দোকান ইত্যাদিতে সাধারণ কর্মী হিসেবে কাজ করেন। এসব শ্রমিকের মধ্যে দক্ষ শ্রমিকের সংখ্যা খুবই কম ও বাংলাদেশে যে মানদণ্ডে দক্ষতা নিরূপণ করা হয় তা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বৈশ্বিক মানদণ্ডে টেকে না।
অভিবাসন খাতের বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) ‘বাংলাদেশ থেকে শ্রম অভিবাসনের গতিপ্রকৃতি ২০২৪’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের ১৬৮টি দেশে বাংলাদেশের শ্রমিকরা কাজ করছেন—এমন প্রচারণা থাকলেও বাংলাদেশী কর্মীদের অভিবাসন মূলত কয়েকটি দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। প্রতি বছর সিংহভাগ অভিবাসী উপসাগরীয়, অন্যান্য আরব, পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কয়েকটি দেশেই যাচ্ছেন। গত পাঁচ বছরে ৯৭ শতাংশ কর্মী গেছেন মাত্র ১০টি দেশে। গত বছরে ৯০ ভাগ বাংলাদেশী কর্মী মাত্র ছয়টি দেশে অভিবাসিত হয়েছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রায় ১০ লাখ পুরুষ ও নারী কাজের উদ্দেশ্যে বিদেশে পাড়ি দিয়েছেন। তারমধ্যে শুধু সৌদি আরবেই গেছেন ৬০ ভাগ কর্মী। এছাড়া মালয়েশিয়ায় ১০ দশমিক ৩০ ভাগ, কাতারে ৭ দশমিক ৫৬ ভাগ, সিঙ্গাপুরে ৫ দশমিক ৭৬ ভাগ, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ৫ দশমিক ২০ ভাগ ও জর্ডানে ১ দশমিক ৫৪ ভাগ কর্মী গেছেন। ২০২৩ সালে অভিবাসী পুরুষ ও নারীর সংখ্যা ছিল ১৩ লাখেরও বেশি। যা গত বছর থেকে তিন লাখের বেশি ছিল। সৌদিআরব, জর্ডান, কাতার, আরব আমিরাত, কুয়েত, হংকং, যুক্তরাজ্য, জাপানেও নারীরা অভিবাসিত হয়েছেন। তবে হংকং, যুক্তরাজ্য ও জাপানের মতো উন্নত দেশগুলোতে যাওয়া নারী কর্মীর সংখ্যা খুবেই নগণ্য।
গবেষণা প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, ওমান, বাহরাইন, মালদ্বীপসহ বেশ কয়েকটি দেশে গত বছর কোনো অভিবাসন ঘটেনি। ইতালিতে জাল কাগজপত্রের কারণে ও সার্বিয়ার আবেদন প্রক্রিয়ার সার্ভার অকেজো হওয়ায় এ দেশগুলোয় শ্রম অভিবাসন কার্যক্রম থেমে আছে।
সারা বিশ্বে কাজের বাজার দ্রুত বদলাচ্ছে। কাজের জোগান, চাহিদা, কাজের চরিত্রে পরিবর্তন, মজুরি সবই প্রচলিত ধারণা থেকে সরে যাচ্ছে। ব্যাপক হারে কর্মী ছাঁটাই হচ্ছে, আবার নানা ধরনের কাজে উপযুক্ত কর্মীর খোঁজ চলছে, নিয়োগ হচ্ছে। এই টানাপড়েনে শ্রম সমস্যার কারণ তেমন স্পষ্ট হয়ে উঠছে না। কাজ হারানো আর পাওয়ার মধ্যে কিছুটা সময়ের ব্যবধান, অনিশ্চয়তা, অপেক্ষা, এটাই যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার, কাজ থাকলেও তার সময়ের সীমা বাঁধা নেই, মজুরি নির্দিষ্ট নেই, সুযোগ-সুবিধাও নেই। কেউ চাইলে ৮ ঘণ্টার বেশি কাজ করতে পারে আবার কেউ ৪ ঘণ্টাও করতে পারে। মজুরি তেমন হারেই নির্ধারিত হচ্ছে। এসব সমস্যায় বাংলাদেশের অভিবাসীরা পিছিয়ে পড়ছে।
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিরাট অবদান রাখছে বৈদেশিক মুদ্রা বা রেমিট্যান্স। সে কারণে বৈদেশিক শ্রম বাজার সংকুচিত হলে দেশের অর্থনীতির ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়বে। বৈদেশিক শ্রমবাজার আরো সম্প্রসারিত করতে সরকারকে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
আই.কে.জে/