শনিবার, ২৮শে জুন ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১৪ই আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ

*** কুকুরের ভিডিও দেখলে কমে মানসিক চাপ, বলছে গবেষণা *** চীন সফর শেষে দেশে ফিরল বিএনপির প্রতিনিধি দল *** সাকিবকে ছাড়িয়ে বহুদূর যেতে চান তাইজুল *** আমেরিকার সঙ্গে আলোচনার কোনো পরিকল্পনা নেই: ইরান *** যুদ্ধের পর এ যেন এক নতুন ইরান, জনগণের মতো বদলে গেছে সরকারও *** লঙ্কায় স্পিন ভেলকিতে সাকিবের রেকর্ডে ভাগ বসালেন তাইজুল *** মূল সমাপ্তি ও বাদ পড়া দৃশ্য নিয়ে আজ মুক্তি পাচ্ছে ‘শোলে’ *** সাইপ্রাসে যে কারণে বিপুল জমি কিনছেন ইসরায়েলিরা *** চট্টগ্রাম বন্দরের টার্মিনাল বিদেশিদের ইজারা না দেওয়ার দাবিতে রোডমার্চ শুরু *** অনুকূল পরিবেশে বাংলাদেশের সঙ্গে সব বিষয়ে কাজ করতে প্রস্তুত ভারত: রণধীর জয়সওয়াল

আইন উপদেষ্টার বক্তব্যে মব উস্কে ওঠার শঙ্কা করছে ডেইলি স্টার

নিজস্ব প্রতিবেদক

🕒 প্রকাশ: ০১:০৩ পূর্বাহ্ন, ২৮শে জুন ২০২৫

#

ছবি: সংগৃহীত

ডেইলি স্টারের বিরুদ্ধে 'পক্ষপাতিত্বের' অভিযোগ এনে আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুলের দেওয়া বক্তব্যে পত্রিকাটির বিরুদ্ধে 'মব উস্কে ওঠার শঙ্কা' করছেন এর সাংবাদিকরা। তারা বলছেন, গত বছরের ৫ই আগস্টে ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ডেইলি স্টার ও দৈনিক প্রথম আলোর কার্যালয়ের সামনে কথিত 'বিক্ষোভ ও গরু জবাইয়ের কর্মসূচি' পালনসহ মবের একাধিক ঘটনা ঘটেছে।

তাছাড়া গত ১০ মাসে দেশে মব সন্ত্রাসের ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। 'মব জাস্টিসের' নামে হামলার ঘটনা এখন এতোটাই নিয়মিত হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, অনেক সময় পুলিশের উপস্থিতিতেও এসব ঘটনা ঘটছে। এমন পরিস্থিতিতে আইন উপদেষ্টার বক্তব্য তাদের 'উদ্বেগ বাড়িয়ে দিয়েছে'।

আসিফ নজরুল অভিযোগ করেন, বিএনপি ও দলটির প্রতি সহানুভূতিশীল বা শুভাকাঙ্ক্ষী বুদ্ধিজীবীদের বেলায় ডেইলি স্টার এবং প্রথম আলো 'পক্ষপাতিত্ব' করে। এ বিষয়ে আইন উপদেষ্টার কাছে তথ্য-প্রমাণও আছে। বিদ্যমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় উপদেষ্টার ঠিক এ ধরনের বক্তব্যের কারণেই ডেইলি স্টারের সাংবাদিকরা মবের শঙ্কা বোধ করছেন বলে আলাপ করে জানা গেছে।

তবে পত্রিকাটির বিরুদ্ধে 'পক্ষপাতের' অভিযোগ তুললেও এসব বিষয়ে তথ্য-প্রমাণের জন্য যোগাযোগ করলে আইন উপদেষ্টা বিস্তারিত তথ্য দিতে পারেননি বলে সুখবর ডটকমকে জানিয়েছেন পত্রিকাটির শীর্ষপর্যায়ের অন্তত চারজন সাংবাদিক। ডেইলি স্টার আইন উপদেষ্টাকে অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যের পরেও বার্তা পাঠিয়ে ঘটনার সুনির্দিষ্ট তথ্য চায়। কিন্তু তখনো কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি বলে পত্রিকাটির কর্তৃপক্ষ সুখবরকে নিশ্চিত করেছে।

যে বিষয়ে তথ্য-প্রমাণ আইন উপদেষ্টা দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন, সে বিষয়ে আজকের মব পরিস্থিতির মধ্যে গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে তার দেওয়া বক্তব্যটি দায়িত্বশীল আচরণ নয় বলে মনে করছেন অভিজ্ঞত সাংবাদিক ও সুশীল সমাজ। এতে মব উস্কে উঠবে না, এ ধরনের নিশ্চয়তা দেওয়া যায় না বলে তাদের অভিমত।

মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন বর্তমান পরিস্থিতি প্রসঙ্গে বলেন, 'মব সন্ত্রাসের মতো ভয়াবহ ঘটনার পরও আমরা সরকারের পক্ষ থেকে এমন কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ দেখতে পাচ্ছি না, যা মব সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে একটি শক্ত বার্তা দিতে পারে। এ ধরনের ঘটনা অস্বাভাবিক মাত্রায় ও নিয়মিত ঘটছে। সরকারের নির্লিপ্ততা এমন একটি বার্তা দেয় যে, সরকার  মব সন্ত্রাস করলেও কোনো আইনি ব্যবস্থা নেবে না।'

সুখবর যোগাযোগ করলে ডেইলি স্টার জানায়, পত্রিকাটি মনে করে, আইন উপদেষ্টার বক্তব্যের বিষয়ে খোঁজ নেওয়া তাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। তারা উপদেষ্টার সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করেও তার বক্তব্যের সপক্ষে কোনো প্রমাণ পাননি। পত্রিকাটির শীর্ষ সাংবাদিকরা মনে করছেন, ডেইলি স্টার সম্পর্কে আইন উপদেষ্টার 'উদ্দেশ্যেপ্রণোদিত মন্তব্য' আসলে ভিন্ন কারণে। দেশের ২৬৬ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের 'রেকর্ড' এবং কারাবন্দী ১৩ সাংবাদিকের জামিন না হওয়ায় আইন উপদেষ্টার দায় নিয়ে সমালোচনা করেছেন সম্পাদক মাহফুজ আনাম।

গত ৪ঠা মে ঢাকায় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এ বিষয়ে মাহফুজ আনাম আইন উপদেষ্টার সমালোচনা করেন। আইন মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বও আসিফ নজরুলের কাছে থাকার বিষয়টির এক কলামে মাহফুজ আনাম সমালোচনা করেন গত ১৬ই মে। বিষয়টি হয়তো উপদেষ্টা মেনে নিতে না পারায় ডেইলি স্টারের বিরুদ্ধে প্রমাণহীন অভিযোগ করেছেন। তবে এ বিষয়ে সুখবর আইন উপদেষ্টার বক্তব্য জানতে পারেনি।

খোঁজ নিলে জানা যায়, মাহফুজ আনাম গত ১৬ই মে ডেইলি স্টারে প্রকাশিত কলাম লেখেন, 'হোয়াট আর উয়ি বিল্ডিং আফটার ডিজমান্টলিং দ্য আওয়ামী লীগ রেজিম' শিরোনামে। এতে তিনি বলেন, 'উপদেষ্টাদের মধ্যে দায়িত্ব বণ্টনের দিকে তাকালেই বর্তমান বিশৃঙ্খলার একটি চিত্র স্পষ্ট হয়। ... আমরা আইন এবং প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় ন্যস্ত করেছি একজনের কাঁধে। ফলাফল, আমাদের দেশে সাংবাদিকরা হত্যা মামলার আসামি এবং আইনি ব্যবস্থা পরিণত হয়েছে নাগরিকদের হয়রানি, ভয় দেখানো ও অর্থ আদায়ের অস্ত্রে।'

তার কলাম যেদিন প্রকাশিত হয়, সেদিন আইন উপদেষ্টা  মালয়েশিয়া সফরে ছিলেন। উপদেষ্টা সেখানে  শ্রমিকদের উদ্দেশে মন্তব্য করেন, 'আমার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করুন' এবং তার ই-মেইল ও মোবাইল ফোন নম্বর সংগ্রহ করে নিতে বলেন। বিষয়টির কড়া সমালোচনা করে কলামে মাহফুজ আনাম প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব অন্য কোনো উপদেষ্টাকে দেওয়ার কথা বলেন। তিনি লেখেন, 'যে প্রবাসী বাংলাদেশিরা গত বছর আমাদের প্রায় ২৩ বিলিয়ন আমেরিকান ডলার পাঠিয়েছেন এবং অনেক বছর ধরেই প্রায় একই পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠিয়ে যাচ্ছেন, তারা কি একজন আলাদা উপদেষ্টা পেতে পারতেন না?'

জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার (২৬শে জুন) ঢাকায় অনুষ্ঠিত একটি সেমিনারে অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ডেইলি স্টার ও প্রথম আলোর বিরুদ্ধে 'পক্ষপাতিত্বের' অভিযোগ তোলেন। ডেইলি স্টার প্রসঙ্গে তিনি একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করে বলেন, প্রমাণ চাওয়া হলে তিনি দিতে পারবেন। তার দাবি অনুযায়ী, ঘটনাটি গত ১৩ থেকে ১৪ বছর আগে ঘটেছিল।

এরপর তার কাছে ডেইলি স্টারের পক্ষ থেকে বিস্তারিত জানতে চাওয়া হলে বৃহস্পতিবার রাত ১টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত তিনি কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য দেননি। ২৭শে জুন তারিখের সংখ্যার দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশের জন্য বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত দেড়টা পর্যন্ত ডেইলি স্টার আইন উপদেষ্টার কাছে থাকা 'প্রমাণের' অপেক্ষায় ছিল।

২৬শে জুনের অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যের পক্ষে প্রমাণ চাইলে আসিফ নজরুল পত্রিকাটিকে বলেন, 'ঘটনাটি হয়তো ২০ বছর আগে ঘটেছিল। তিনি সুনির্দিষ্ট কিছু মনে করতে পারছেন না।' ডেইলি স্টারের প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি মন্তব্য করেন, 'হয়তো ঘটনাটি জনসমক্ষে উল্লেখ করা উচিত হয়নি এবং বিষয়টি এখানেই বাদ দেওয়া উচিত।'

বৃহস্পতিবার সেন্টার ফর গর্ভনেন্স স্টাডিজ আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে গিয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, 'ডেইলি স্টারে ১৩ থেকে ১৪ বছর আগে, চাইলে সমস্ত প্রমাণ দিয়ে দেব—ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন লেকচারার (যেহেতু আইন বিভাগের লেকচারার তাই স্পষ্ট করে মনে আছে আমার) খালেদা জিয়াকে নিয়ে প্রচণ্ড আজে-বাজে কথা বলেন।'

তিনি দাবি করেন, 'তাকে ন্যাশনাল হিরো বানানো হলো। প্রথম পেজে প্রফেসর নাম দিয়ে নিউজ আসলো। তিনি ছিলেন লেকচারার, অথচ ডেইলি স্টারে লেখা হলো প্রফেসর। প্রত্যেকদিন পত্রিকাটিতে প্রফেসর লেখা হতো। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে বাজে কথা বলায় ছাত্রদল তার পদত্যাগ চেয়েছিল।'

আসিফ নজরুল বলেন, 'তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ইউন্যানিমাসলি (সর্বসম্মতিক্রমে) প্রত্যেকে একত্রিত হয়ে ঢাবি থেকে বের করে দিলো, অথচ এ নিউজ ডেইলি স্টার ছাপেনি। আমি খুবই সরি যে আমাকে বলতে হচ্ছে, তিনি এত উন্মত্ত মানসিকতার ছিলেন যে, বছর কয়েক আগে আত্মহত্যা করেছেন।'

তার দাবি, 'এমন একজন মানুষকে হিরো বানিয়েছে ডেইলি স্টার। কিন্তু তাকে যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাব থেকে দেওয়া বের করে দেওয়া হয়, এটা ক্লাবের ইতিহাসে প্রথম কোনো ব্যক্তিকে সর্বসম্মতিক্রমে বের করে দেওয়ার ঘটনা—সেই নিউজ ছাপেনি ডেইলি স্টার।'

ওই সেমিনারে উপস্থিত ডেইলি স্টারের প্রতিবেদককে আইন উপদেষ্টা বলেন, 'আপনি ডেইলি স্টারের এ জিনিসটা মাহফুজ ভাইকে (পত্রিকাটির সম্পাদক ও প্রকাশক) বলবেন। আমি আপনাকে প্রমাণ দেব, এটা একটা ক্লাসিক স্টোরি হতে পারে। আমার কথা হচ্ছে, ওনারা ভুল দুটি জিনিস ছাপাল কেন? লেকচারারকে প্রফেসর বানিয়ে ফার্স্ট পেজে নিউজ ছাপলো, তাকে যখন বের করে দেওয়া হয়েছে পুরো নিউজটা গায়েব করে দিলো কেন?'

সেমিনার শেষে ডেইলি স্টারের প্রতিবেদক আইন উপদেষ্টার কাছে সেমিনারে উল্লেখিত ঘটনার বিস্তারিত জানতে চান। পরে তিনি ফোনে ডেইলি স্টারের ওই প্রতিবেদককে জানান, তিনি ঘটনার বিস্তারিত মনে করতে পারছেন না। এবার তার ভাষ্য, 'ঘটনাটি হয়তো ২০ বছর আগে ঘটেছিল এবং ওই লেকচারারের নামের প্রথম অংশ সম্ভবত শফিক ছিল।' তিনি বলেন, 'আপাতত তার কাছে এর চেয়ে বেশি কিছু বলার নেই।'

আসিফ নজরুল

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন