ফাইল ছবি (সংগৃহীত)
দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে অস্থিরতা এখন চরমে। পরিস্থিতির দ্রুত পরিবর্তন ঘটছে। সর্বশেষ সংযোজন হিসেবে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস পদত্যাগের কথা ভাবছেন—এমন খবর তোলপাড় তুলেছে। এ গুঞ্জন এমন এক সময়ে উঠল, যখন অন্তর্বর্তী সরকারের ‘বিতর্কিত উপদেষ্টাদের’ অপসারণের দাবিতে বিভিন্ন মহল থেকে চাপ আসছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নির্বাচন ও করিডর নিয়ে সেনাপ্রধানের অবস্থান। যদিও সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এ ব্যাপারে কোনো বক্তব্য দেওয়া হয়নি।
গতকাল বৃহস্পতিবার (২২শে মে) সন্ধ্যায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় গিয়ে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সেই সাক্ষাতে অন্তর্বর্তী সরকারের দুই উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ও মাহফুজ আলমও উপস্থিত ছিলেন। তারা তিনজনই জুলাই অভ্যুত্থানের অন্যতম মুখ। সাক্ষাৎ শেষে নাহিদ ইসলাম গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন, মুহাম্মদ ইউনূস পদত্যাগ করতে পারেন—এমন খবর পেয়েই তিনি দেখা করতে গিয়েছিলেন।
এ গুঞ্জনের পরপরই দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ পর্যন্ত নানাভাবে প্রতিক্রিয়া জানাতে শুরু করেছেন। সব পক্ষ থেকে দেশের ‘সংকটপূর্ণ পরিস্থিতির’ কথা উল্লেখ করে ঐক্যের ডাক দেওয়া হচ্ছে। জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে সর্বদলীয় বৈঠক ডাকার জন্য প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
গতকাল রাতে ইসলামী আন্দোলনের আমির সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করীমের আহ্বানে রাজধানীর পুরানা পল্টনে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ইসলামী আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ পাঁচটি দলের জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
গতকাল সন্ধ্যায় বিএনপি অন্তর্বর্তী সরকারের কিছু ‘বিতর্কিত উপদেষ্টা’কে সরানোর দাবি তুলেছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা বজায় রাখার স্বার্থে বিতর্কিত কয়েকজন উপদেষ্টা, যাদের বক্তব্য ও কর্মকাণ্ডে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে, এমন উপদেষ্টাদের সরিয়ে দেওয়ার দাবি আমরা তুলেছিলাম।’
তিনি বিশেষ করে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার সাম্প্রতিক বক্তব্য নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে অভিযোগ করে তাকেও অব্যাহতি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
এর আগে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের পদত্যাগের দাবিতে ঢাকার রাজপথে বিক্ষোভ করেছেন বিএনপির নেতা ইশরাক হোসেন। ১৪ই মে থেকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র হিসেবে ইশরাক হোসেনকে শপথ পড়ানোর দাবিতে এ আন্দোলন শুরু হয়।
পরে সেই আন্দোলন এ দুই উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিতে রূপ নেয়। ইশরাককে মেয়র হিসেবে শপথ নেওয়ার আদেশ চ্যালেঞ্জ করে করা রিট উচ্চ আদালত খারিজ করার পর ইশরাক আন্দোলন স্থগিত করেছেন। তবে দুই উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবি থেকে তিনি সরেননি।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) এক শীর্ষ নেতা অন্তর্বর্তী সরকারের তিন উপদেষ্টাকে ‘বিএনপির মুখপাত্র’ আখ্যা দিয়ে পদত্যাগে বাধ্য করার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। সেই সঙ্গে তারা বিচার বিভাগে বিএনপির হস্তক্ষেপের অভিযোগও তুলেছেন। তারা নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের দাবিতে কর্মসূচিও পালন করেছেন।
এ ডামাডোলের মধ্যেই স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ গতকাল ফেসবুকে একটি বিস্ফোরক স্ট্যাটাস দেন। তিনি লেখেন, ‘বিএএল, নর্থ ও দিল্লি জোটভুক্ত হয়ে যে কুমির ডেকে আনছেন, তা আপনাদেরকেই খাবে।’
দেশের রাজনীতিতে ‘নর্থ’ বলতে সাধারণত ক্যান্টনমেন্ট বোঝানো হয়। ‘বিএএল’ হলো আওয়ামী লীগের সংক্ষিপ্ত রূপ। আসিফ আরও যোগ করেন, ‘গণতান্ত্রিক রূপান্তর আর এ দেশের মানুষের ভাগ্য কোনোটাই ইতিবাচক পথে যাবে না আরকি। স্বপ্ন দেখে স্বপ্নভঙ্গের কষ্টই বোধ হয় এদেশের ভাগ্য।’
তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আগের যে কোনো বিভাজনমূলক বক্তব্য ও শব্দচয়নের কারণে দুঃখপ্রকাশ করেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘ব্যক্তির আদর্শ, সম্মান ও আবেগের চেয়ে দেশ বড় দেশপ্রেমিক শক্তির ঐক্য অনিবার্য।’
তিনি অভ্যুত্থানের সব শক্তির প্রতি সম্মান ও সংবেদনশীলতা রেখে কাজ করার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করে বলেন, ‘বাংলাদেশের শত্রুরা ঐক্যবদ্ধ ও আগ্রাসী। সার্বভৌমত্ব ও গণতান্ত্রিক সব প্রতিষ্ঠান হুমকির মুখে।’
এইচ.এস/
খবরটি শেয়ার করুন