রবিবার, ৮ই জুন ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২৫শে জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শিক্ষাঙ্গনে অস্থিরতার শেষ কোথায়?

উপ-সম্পাদকীয়

🕒 প্রকাশ: ০৬:৩৩ অপরাহ্ন, ২৫শে মে ২০২৫

#

ছবি: সংগৃহীত

রবি হক

দেশের বিভিন্ন উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অস্থিরতা বিরাজ করছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো এখন আর শুধু পড়াশোনার জায়গা নয়, যেন ক্ষমতা দেখানোর ‘রণক্ষেত্রে’ পরিণত হয়ে উঠছে।  ছাত্ররা সংগঠিত হলে অনেক কিছু পাল্টে দিতে পারে, এ চিন্তা থেকে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে কারণে-অকারণে অস্থিরতা চলছে। ছাত্রদের একটি অংশ নিয়ম, বা প্রাতিষ্ঠানিক শৃঙ্খলা মানতে চায় না।

কোথাও উপাচার্য ও শিক্ষকদের অপসারণ, কোথাও নাম পরিবর্তনের দাবি, আবার কোথাও আবাসন-সংকটের মতো বিষয় নিয়ে আন্দোলন হচ্ছে। এক বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলন থামে, তো আরেকটিতে শুরু হচ্ছে। বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ধারাবাহিকভাবে এ অবস্থা চলছে। এসব থামানোর কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেই। 

এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রশাসনের বিরুদ্ধে অনাস্থা তৈরি হওয়াসহ ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম, তৈরি হচ্ছে প্রশাসনিক জটিলতা। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।

দেশে ৫১টি সরকারি ও ৪টি স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় চালু আছে। গত বছর গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর পূর্ববর্তী আওয়ামী লীগ সরকারের নিয়োগ দেওয়া প্রায় সব ক’টি স্বায়ত্তশাসিত ও সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য, সহ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষসহ শীর্ষ পর্যায়ের শিক্ষক-কর্মকর্তাদের পদত্যাগে বাধ্য করা হয়।

এসব কারণে অন্তর্বর্তী সরকারের শুরু থেকে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে। ধীরে ধীরে সরকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নতুন উপাচার্য নিয়োগ দিলেও নতুন নতুন সংকটের কারণে এখনো পূর্নাঙ্গ শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়নি।

গত ফেব্রুয়ারি মাসে  ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবিকে কেন্দ্র করে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে তৎকালীন উপাচার্য ও সহ-উপাচার্যকে সরিয়ে দেয় সরকার। চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) উপাচার্য নিয়োগকে কেন্দ্র করে অচলাবস্থা তৈরি হয়। পরিস্থিতি এখনো স্বাভাবিক হয়নি। প্রকৌশল শিক্ষার এ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তিন মাস ধরে ক্লাস করা, পরীক্ষা নেওয়া বন্ধ আছে ।

নিয়োগের কয়েক মাসের মাথায় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ শীর্ষ তিনটি পদে থাকা অধ্যাপকদের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। এক শিক্ষককে পুনর্বহাল ও রেজিস্ট্রারকে অপসারণের দাবি কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামেন। একপর্যায়ে উপাচার্য অপসারণের দাবি ওঠে। এর ফলে কয়েক দিন শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ ছিল।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল নেতা হত্যাকাণ্ডের ঘটনার জেরে সংগঠনটি আন্দোলনে নেমেছে। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি করে আন্দোলন চলছে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আবাসন-সংকটের সমাধানসহ (৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর জন্য আবাসন ভাতা অন্তর্ভুক্তির দাবিসহ) কয়েকটি দাবিতে আন্দোলন করেছেন। তাদের আন্দোলন থামাতে এসে অন্তর্বর্তী সরকারের এক উপদেষ্টা লাঞ্ছিত হয়েছেন। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে সরকার দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয়।

কম-বেশি প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসন-সংকট আছে। ২০২২ সালের তথ্য নিয়ে করা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের অর্ধশত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ও ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজ-মাদ্রাসা ছাড়া) অধ্যয়নরত মোট শিক্ষার্থীর মধ্যে ৬০ শতাংশের আবাসিক সুবিধা নেই। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসন ভাতা দিলে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা একই দাবি নিয়ে অচিরেই মাঠে নামতে পারেন।

নতুন বিশ্ববিদ্যালয় না হওয়া পর্যন্ত ইউজিসির তত্ত্বাবধানে সমন্বিত কাঠামোর অধীন চলবে ঢাকার সরকারি সাত কলেজের কার্যক্রম। অন্তর্বর্তী এ ব্যবস্থায় প্রশাসক নিয়োগ না দেওয়ার কারণে প্রায় দুই মাস ধরে কাজটি আটকে ছিল। এ নিয়ে আবারও আন্দোলনের হুমকি দেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা।

জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের ৩০ শতাংশ পদোন্নতির কোটা বাতিলসহ ছয় দফা দাবিতে বেশ কিছুদিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তনের দাবিতে গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে আন্দোলন করছেন গাজীপুর ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা।

জানুয়ারিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পোষ্য কোটা বাতিল ও তিন দাবিতে প্রশাসন ভবনে তালাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হয়। একই দাবিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েও প্রশাসনিক ভবন অবরোধ ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হয়। কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে এসব আন্দোলন এখন স্থগিত আছে। এভাবে দেশের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো না কোনো বিষয় নিয়ে অস্থিরতা বিরাজ করছে।

প্রশ্ন উঠছে, শিক্ষাঙ্গনে অস্থিরতার শেষ কোথায়? বিশ্ববিদ্যালয়ে হওয়ার কথা পড়াশোনা, গবেষণা ও জ্ঞানচর্চা। এসব যেন এখন অনুপস্থিত। পরিস্থিতি এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে  যে, ন্যায্য-অন্যায্য যাই হোক না কেন, আন্দোলন করলেই সরকার চাপে পড়ে দ্রুত দাবি মেনে নিচ্ছে। তবে এসব দাবি কতটা কার্যকর হবে, সে প্রশ্নও রয়েছে।

এইচ.এস/


শিক্ষাঙ্গন

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন