ছবি: সংগৃহীত
এতদিন সবজির বাজারে স্বস্তির কথা বলা হয়েছিল। সেটা মূলত অনেকটা সম্ভব হয়েছে তখন সবজি তোলার ভরা মৌসুম ছিল বলে। বাজারে সবজির প্রচুর সরবরাহ ছিল। ক্ষেত-খামারিরাও ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করতে পারছিলেন না। এখন সবজিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পেঁয়াজ ও তেলের বাজারে অস্বস্তি শুরু হয়েছে।
গত কয়েকদিনে পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম কেজি প্রতি ২০ টাকার বেশি বেড়েছে। পাড়া-মহল্লায় আরও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। সরকারি সংস্থা টিসিবির হিসাবে পাঁচদিনে পেঁয়াজের দাম কেজি প্রতি বেড়েছে প্রায় ৩০ টাকা। বেশিরভাগ সবজির দামও বাড়ছে।
বাজারে সরকারের নির্ধারিত নতুন দরের ভোজ্যতেল না এলেও দাম বাড়ার ঘোষণায় খুচরা ব্যবসায়ী অনেকে বোতলজাত পুরোনো সয়াবিন তেল নতুন দামে বিক্রি করছেন। রাজধানীর প্রায় প্রতি বাজারে এমন চিত্র দেখা যাচ্ছে।
এবার ভরা মৌসুমের সময় বেশ কম দর ছিল পেঁয়াজের। ফলন ভালো হওয়ায় দেশি পেঁয়াজের দাম কেজি প্রতি সর্বনিম্ন ৩০ টাকায় নেমেছিল। এরপর কিছুটা বেড়ে ঈদুল ফিতরের পরও ৪০-৪৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এখন দর উঠেছে ৬০-৬৫ টাকায়। পাড়া-মহল্লার কোথাও কোথাও ৭০ টাকা কেজিতেও বিক্রি হচ্ছে।
‘ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের’ (টিসিবি) বাজারদরের তথ্য বলছে, রাজধানীর খুচরা বাজারে মানভেদে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৬০-৭০ টাকায় বিক্রি হয়। অথচ এখন পেঁয়াজের দাম বাড়ার যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই। কৃষকরা পেঁয়াজ উৎপাদন করে বাজারে ছেড়ে দিয়েছেন। এ সুযোগে মুনাফালোভী কিছু বড় ব্যবসায়ী মজুদ বাড়িয়ে সিন্ডিকেট করে দাম বাড়াচ্ছেন।
কয়েকদিন আগে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটার প্রতি ১৪ টাকা বাড়ায় সরকার। এতে এক লিটার সয়াবিন তেলের দাম হয়েছে ১৮৯ টাকা, যা এতদিন ছিল ১৭৫ টাকা। খোলা সয়াবিন ও সয়াবিনের বিকল্প খোলা পাম তেলের দামও বেড়েছে লিটারে ১২ টাকা।
খোলা সয়াবিন ও পাম তেলের দাম প্রতি লিটার ১৬৯ টাকা, যা আগে ছিল ১৫৭ টাকা। সরকার নির্ধারিত নতুন দরের তেল না এলেও দাম বাড়ার ঘোষণায় খুচরা ব্যবসায়ী অনেকে বোতলজাত পুরোনো সয়াবিন তেল নতুন দামে বিক্রি করছেন।
গত রমজানে স্বস্তি থাকলেও এখন সব ধরনের সবজির দাম চড়া। রমজানে ২০ টাকা কেজি টমেটো পাওয়া গেলেও বর্তমানে তা ৪০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। অন্যান্য সবজির দামও এবারের ঈদুল ফিতরের পর থেকে ক্রমাগত বাড়ছে।
বাজারে প্রতি কেজি সবজির দাম প্রায় একশ টাকা ছুঁই ছুঁই। শিম, শসা, করলা, ঢেঁড়স, বেগুন, পটোল, বরবটি ও চিচিঙা ৭৫ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ধুন্দুল, কচুর লতি ও ঝিঙা ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
তবে এখন পর্যন্ত মাংসের বাজারে কিছুটা স্বস্তি রয়েছে। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি দুইশত টাকার নিচে বিক্রি হচ্ছে। একইভাবে সোনালি জাতের মুরগি বিক্রি হচ্ছে কেজি ২৭০ থেকে ২৮০ টাকায়। গরুর মাংস ও ডিমের দাম এখনো স্থিতিশীল রয়েছে।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজারে সরবরাহ কমেছে ঠিকই, তবে দাম বাড়ার হার অস্বাভাবিক। সিন্ডিকেটও সক্রিয় রয়েছে, যারা কৃত্রিম সংকট তৈরির মাধ্যমে মুনাফা লুটছে। তাই দাম কমাতে বাজার তদারকি অব্যাহত রাখা দরকার। তা না হলে অস্থির হওয়া নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। এখনই লাগাম টেনে ধরতে না পারলে বাজারে অস্থিরতা আরো বাড়বে।
এইচ.এস/