ছবি : সংগৃহীত
ভ্রমণের বেলায় সাধারণত সমুদ্র বা পাহাড়ে যাবার কথাই মাথায় আসে সবার আগে। চাইলে কিন্তু মরুভূমিতেও বেড়াতে যাওয়া যায়!
চমকপ্রদ প্রাকৃতিক ভূ-বৈচিত্র্যের মরুভূমি ভ্রমণও যে রোমাঞ্চকর হতে পারে তা আমরা ভুলে যাই। অথচ একটু কষ্টকর হলেও মরুভূমি ভ্রমণ এনে দিতে পারে নিখাদ অ্যাডভেঞ্চারের অনুভূতি।
এখানে বলা হচ্ছে এমনই এক অদ্ভুত মরুভূমির কথা যা ভারতের জয়সলমীর বা মধ্যপ্রাচ্যের দুবাইয়ের মরুভূমির মতো নয়। সোনালি বালুর বদলে এখানে একটু পরপর দেখতে পাবেন কালো পাথুরে আগ্নেয়গিরি; তবে ভয় নেই। এসব আগ্নেয়গিরির কোনোটাই বিপজ্জনক নয়। কোটি বছর আগে অগ্ন্যুৎপাতের নিদর্শন পাওয়া গেলেও বর্তমানে সবই নিষ্ক্রিয় বা মৃত।
মিশরে অবস্থিত এই মরুভূমি পরিচিত ব্ল্যাক ডেজার্ট বা কালো মরুভূমি নামে।
মরুভূমির ঢিবিগুলো প্রায় ৩০০ ফুটেরও অধিক উঁচু; গঠন, আকার-আকৃতি এবং রঙের দিক থেকে এদের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। আয়রন কোয়ার্টজাইট থাকায় কয়েকটি ঢিবির রঙ অনেক বেশি গাঢ়, আবার বেলেপাথর থাকায় একাধিক পাথুরে ঢিবি লালচে বর্ণ ধারণ করেছে।
আগ্নেয়গিরিজাত শিলা ডলেরাইট থেকে এই মরুভূমির নাম হয়েছে ব্ল্যাক ডেজার্ট। এটি অনেকটা ব্যাসল্টের মতো। সময়ের সাথে সাথে শিলাটি ক্ষয়প্রাপ্ত হয় এবং কালো ও ধূসর রঙের বিভিন্ন শেড ধারণ করে। সেখান থেকেই দীর্ঘমেয়াদে মরুভূমিটি কয়লাপোড়া মাটির মতো দেখতে হয়েছে। উঁচুনিচু খানাখন্দে ভরা কালো রঙের পাথুরে স্তরে পরিপূর্ণ এই মরুভূমি।
‘ভয়ংকর সুন্দর’ বলে যদি কিছু থেকে থাকে তবে তা মনে হয় এই মরুভূমিটি! মাইলের পর মাইল যতদূর চোখ যায়, শুধু ছোট ছোট কালো টিলা চোখে পড়ে। মনে হবে যেন কালো পাউডারে পুরোটা ছেয়ে রাখা হয়েছে।
আরো পড়ুন : পরিবার নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন টাঙ্গাইলের মহেরা জমিদার বাড়ি থেকে
অবাক ব্যাপার হলো, এই মরুভূমিতে নাকি অদ্ভুত শান্তি বিরাজ করে! এখানে পর্যটক গিজগিজ করে না; যা শোনা যায় তা কেবলই বাতাস এবং প্রকৃতির শব্দ। সূর্যোদয়, সূর্যাস্ত আর পূর্ণিমা রাতে নিকষ কালো আগেয়গিরিগুলো দেখে মনে হয় যেন তৈলচিত্রে আঁকা অপার্থিব বস্ত। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কিছু ঝোপঝাড় এবং প্রস্তরীভূত বৃক্ষরাজি জানান দেয়, এখানেও সবুজ প্রাণের অস্তিত্ব আছে।
পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম ডায়নোসরের ফসিলও এখানেই মিলেছে। ব্ল্যাক ডেজার্টের সীমানাঘেঁষা ডাস্ট আন্ড স্কাউট পর্বতে প্রত্নতাত্ত্বিকেরা এটির খোঁজ পান।
ইতিহাস নিয়ে যাদের আগ্রহ রয়েছে তারাও এখানে গেলে নিরাশ হবেন না। ব্ল্যাক ডেজার্টের সর্বোচ্চ চূড়া ইংলিশ মাউন্টেইনে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কিছু ধ্বংসাবশেষ রয়েছে। এ ছাড়া রয়েছে আল-মারসুস মাউন্টেইন, মাউন্টেইন প্যানারোমার মতো বিচিত্র প্রাকৃতিক নিদর্শন।
ব্ল্যাক ডেজার্টের উপকণ্ঠে আবার রয়েছে সাদা রঙের ক্রিস্টালে ঘেরা হোয়াইট ডেজার্ট বা সাদা মরুভূমি। সে গল্প আরেকদিনের জন্য তোলা রইল।
কায়রো বা গিজা থেকে মাত্র পাঁচ ঘণ্টার ভ্রমণে আপনি দুই মরুভূমিতেই ভ্রমণ করতে পারবেন। একদিনের ভ্রমণে বাহারিয়া মরুদ্যানে ঘুরতে গেলে দেখে আসতে পারবেন কালো মরুভূমিও; এমনকি রয়েছে তারাভরা আকাশের নিচে রাত্রিবাসের সুযোগ।
বাকেট লিস্টে মিশর ভ্রমণ থাকলে সেখানে পিরামিডের পাশাপাশি এই রহস্যঘেরা কালো মরুভূমির নাম যুক্ত করতে একদম ভুলবেন না।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া, ইজিপ্ট ইউনাইটেড ট্যুরস
এস/ আই.কে.জে