ছবি: সংগৃহীত
চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের জন্য মহা আয়োজন শুরু হয়েছে। বিশ্বের সামনে চীনের শক্তি ও প্রভাব প্রদর্শনের লক্ষ্যে আগামীকাল বুধবারের (৩রা সেপ্টেম্বর) সামরিক কুচকাওয়াজ ঘিরে রাজধানীতে কড়াকড়ি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ঐতিহাসিক তিয়েনআনমেন স্কয়ারকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে এই মহা মঞ্চ, যেখানে উপস্থিত থাকবেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানেরা। খবর বিবিসির।
আজ মঙ্গলবার (২রা সেপ্টেম্বর) বিবিসি জানিয়েছে, তিয়েনআনমেনের গেটে মাও সেতুংয়ের প্রতিকৃতির পাশে আটটি বিশাল চীনা পতাকা উড়ছে। এর নিচে ২৬ জন বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধানের আসনও প্রস্তুত। তাদের মধ্যে আছেন রাশিয়ার ভ্লাদিমির পুতিন ও উত্তর কোরিয়ার কিম জং উন। ১৯৫৯ সালের পর এই প্রথম কোনো উত্তর কোরীয় নেতা হিসেবে চীনা সামরিক কুচকাওয়াজে কিমের উপস্থিতি বিশেষ গুরুত্ব রাখে।
এই কুচকাওয়াজ মূলত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের আত্মসমর্পণ ও চীনের বিজয়ের ৮০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজন করা হলেও, প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের জন্য এর তাৎপর্য বহুদূর প্রসারিত।
সম্প্রতি সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও) সম্মেলনে ২০ টিরও বেশি দেশের নেতা অংশ নিয়েছেন—যা ছিল এখন পর্যন্ত এই সংগঠনের সবচেয়ে বড় সমাবেশ। এর মাধ্যমে সি একটি নতুন বিশ্বব্যবস্থার রূপরেখা তুলে ধরতে চেয়েছেন, যা আমেরিকাকে চ্যালেঞ্জ জানাবে।
এসসিও সম্মেলনের পরপরই বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া সামরিক কুচকাওয়াজে প্রায় ৫০ হাজার আমন্ত্রিত অতিথির জন্য আসন বরাদ্দ রয়েছে। এতে প্রদর্শিত হবে আধুনিক সামরিক প্রযুক্তি—হাইপারসনিক অস্ত্র ও মানববিহীন ড্রোন। ইরান, মালয়েশিয়া, মিয়ানমার, মঙ্গোলিয়া, ইন্দোনেশিয়া, জিম্বাবুয়ে ও মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর নেতারাও এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন। পশ্চিমা দেশ থেকে শুধু সার্বিয়া ও স্লোভাকিয়ার প্রতিনিধিরা আমন্ত্রিত হয়েছেন।
বেইজিংয়ে তাই কড়াকড়ি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ড্রোন ওড়ানো সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে, সেতু ও উড়ালপুলে ২৪ ঘণ্টা পাহারা বসানো হয়েছে। এমনকি বিগত দিনগুলোতে সামরিক কুচকাওয়াজের রিহার্সাল চলার সময় স্থানীয়দের বারান্দায় দাঁড়ানোও নিষেধ ছিল। রাস্তায় ট্যাংক চলার শব্দ শোনা গেছে রাতভর, আর প্যারেড রুটের আশপাশে স্কুল, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও হোটেল বন্ধ রাখা হয়েছে।
চীনের অর্থনীতি বর্তমানে ধীর গতির, তরুণদের বেকারত্ব ও বাড়ির দামের পতন সাধারণ মানুষের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে। এই প্রেক্ষাপটে চীনের সামরিক কুচকাওয়াজ শুধু সির বৈশ্বিক শক্তি প্রদর্শন নয়, বরং দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ রাখারও একটি প্রচেষ্টা।
সব মিলিয়ে, এই মহা আয়োজনকে ঘিরে বেইজিং শহর যেন এক সামরিক ছাউনিতে পরিণত হয়েছে। বিশ্বের সামনে চীনের শক্তি প্রদর্শনে যেন কোনো ঘাটতি না থাকে—সেই বিষয়টি নিশ্চিত করতেই প্রতিটি পদক্ষেপ নিচ্ছে বেইজিং।
খবরটি শেয়ার করুন