ছবি: সংগৃহীত
ক্যাথলিক খ্রিষ্টানদের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা পোপ ফ্রান্সিসের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অসংখ্য বিশ্বনেতা ও রাজপরিবারের সদস্য ইতালির রোমে সমবেত হয়েছিলেন। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসও সেখানে যোগ দিয়েছেন।
ভিআইপি অতিথিদের তৃতীয় সারিতে তাকে বসতে দেখা গেছে। তার পাশে ছিলেন প্রিন্স উইলিয়াম ও জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ। আজ শনিবার (২৬শে এপ্রিল) সকালে ভ্যাটিকানের সেন্ট পিটার্স স্কয়ারে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। খবর বাসস ও এএফপির।
সেন্ট পিটার্স স্কয়ারে উপস্থিত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বদের মধ্যে ছিলেন ব্রিটিশ রাজপরিবারের সদস্য প্রিন্স উইলিয়াম, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, তার পূর্বসূরি জো বাইডেন, ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমার ও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ।
বিশ্লেষকদের মতে, অনুষ্ঠানটি আন্তর্জাতিক কূটনীতির জন্য একটি সংবেদনশীল সময়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, ট্রাম্পের আরোপিত শুল্কের ফলে বাণিজ্যযুদ্ধ এবং ইউরোপের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েনের মধ্যে আজ সবকিছু ভুলে যেন এক ছাদের নিচে জড়ো হয়েছেন বিশ্বনেতারা
উপস্থিত ভিআইপি অতিথিদের বসার ব্যবস্থাও ছিল বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। কফিনের কাছে সামনের সারির একটি আসনে বসেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার স্ত্রী মেলানিয়া ট্রাম্প। তাদের ঠিক পাশের সারিতে বসেছিলেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট মাখোঁ ও তার স্ত্রী ব্রিজিট মাখোঁ।
তবে বিশেষভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পের বসার স্থান। তারা বসেছিলেন ইউক্রেনের দুই বড় সমর্থক দেশের প্রধানদের মাঝে। মেলানিয়ার বাম পাশে ছিলেন এস্তোনিয়ার প্রেসিডেন্ট আলার কারিস আর ট্রাম্পের ডান পাশে ছিলেন ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার স্টাব।
এস্তোনিয়া ও ফিনল্যান্ড উভয়ই ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির ঘনিষ্ঠ মিত্র। জেলেনস্কিকেও ভ্যাটিকানে বেশ ভারাক্রান্ত মুখে দেখা গেছে। তিনি আর এমানুয়েল মাখোঁ একই সারিতে বসেছিলেন, যদিও তাদের মাঝে কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তি ছিলেন।
সম্প্রতি ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনা ও প্রকাশ্য বাদানুবাদে জড়িত জেলেনস্কি ট্রাম্প থেকে মাত্র ১০টি আসন পর একই সারিতে ছিলেন। তবে জেলেনস্কির এক মুখপাত্র জানান, শেষকৃত্য অনুষ্ঠানের আগেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট।
লাখ লাখ সাধারণ মানুষ যারা পোপের শেষকৃত্যে যোগ দিতে রোমে এসেছিলেন, তাদের থেকে বিশিষ্ট ব্যক্তিরা একটি আলাদা অংশে বসেছিলেন। বিশিষ্টজনদের বসার ব্যবস্থা করা হয়েছিল সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকার পাশের স্কয়ারের ডান পাশে।
সবচেয়ে বিশেষ আসনগুলোতে বসেছিলেন পোপ ফ্রান্সিসের নিজ দেশ আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট হাভিয়ের মিলেয়, আয়োজক দেশ ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি ও প্রেসিডেন্ট সার্জিও মাত্তারেল্লা। তাদের পেছনেই ছিলেন বিভিন্ন দেশের রাজত্বকারী রাজা ও রানিরা। এ ছাড়া ফরাসি বর্ণমালার ক্রমে (কূটনীতির রীতি অনুযায়ী) অন্য প্রতিনিধিদের বসানো হয়।
প্রয়াত পোপ ফ্রান্সিস অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাজের দারুণ ভক্ত ছিলেন এবং তার কাজের ভূয়সী প্রশংসা করতেন। বিশেষ করে, বিশ্বজুড়ে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য অধ্যাপক ইউনূসের কর্মযজ্ঞ এবং তার ‘তিন শূন্য’ তত্ত্ব —যেখানে কোনো বেকারত্ব, দারিদ্র্য এবং কার্বন নিঃসরণ থাকবে না, এর প্রশংসা করতেন।
রোমের ভ্যাটিকানে তিনি ২০০৬ সালের শান্তিতে নোবেল বিজয়ীর সঙ্গে যৌথভাবে ‘তিন শূন্য উদ্যোগ’ও চালু করেছিলেন।
এইচ.এস/
খবরটি শেয়ার করুন