ছবি: সংগৃহীত
রবি হক
দেশে বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক দল, বা সংগঠনগুলোর উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার ইতিহাস রয়েছে। গত ১০ই মে এক বিশেষ সিদ্ধান্তে রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগসহ তার নেতাকর্মীদের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব উপদেষ্টা পরিষদের জরুরি সভায় পাশ হয়।
বলা হয়, জুলাই গণহত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সব ধরনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। সন্ত্রাস বিরোধী (সংশোধন ) অধ্যাদেশ-২০২৫ ও সন্ত্রাস বিরোধী আইন-২০০৯ প্রয়োগ করে এ সিন্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
১২ই মে জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, আওয়ামী লীগ এবং এর সব অঙ্গসংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারকার্য সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত তাদের যে কোনো ধরনের প্রকাশনা, গণমাধ্যম, অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যে কোনো ধরনের প্রচারণা, মিছিল, সভা-সমাবেশ ও সম্মেলন আয়োজনসহ যাবতীয় কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলো।
আওয়ামী লীগের সব রাজনৈতিক কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলেও দলটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়নি। কার্যত তাদের সব ধরনের রাজনৈতিক তৎপরতা বন্ধ রাখা হয়েছে। এটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক নতুন দৃষ্টান্ত।
মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালেও আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হয়। ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করলে তৎকালীন পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়া খান আওয়ামী লীগকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ আখ্যা দিয়ে নিষিদ্ধ করে। সেই ‘নিষিদ্ধ সংগঠনের’ নেতৃত্বেই বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে।
স্বাধীনতার পর শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকার জামায়াত, মুসলিম লীগের তিনটি অংশ ও পিডিপিসহ স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী এবং সব ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করে। ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র গঠনের জন্য এসব দল নিষিদ্ধ করা হয়।
১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টি (পিবিএসপি) ও পূর্ববাংলার কমিউনিস্ট পার্টি (পিবিসিপি) নিষিদ্ধ করা হয়। দু’টি বামপন্থি মাওবাদী সংগঠন এখনো নিষিদ্ধ।
১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইন অনুযায়ী, কোনো রাজনৈতিক দল বা সংগঠন যদি আইন লঙ্ঘন করে তাহলে সরকার সেটি নিষিদ্ধ করতে পারে। এমনকি তাদের সম্পদ ও তহবিল বাজেয়াপ্ত করারও সুযোগ রয়েছে। এ আইনের ‘ধ্বংসাত্মক সংগঠনের নিয়ন্ত্রণ’ অধ্যায়ে রাজনৈতিক দলগুলোও অন্তর্ভুক্ত।
১৯৭৮ সালের রাজনৈতিক অধ্যাদেশে বলা হয়, ‘বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব, অখণ্ডতা বা নিরাপত্তার জন্য ক্ষতিকর কোনো মতাদর্শ প্রচার বা কার্যকলাপের উদ্দেশ্যে কোনো রাজনৈতিক দল গঠন করা যাবে না।’
এতে আরও বলা হয়, কোনো রাজনৈতিক দল ‘গোপন সংগঠন (আন্ডারগ্রাউন্ড অর্গানাইজেশন), গ্রুপ বা সংস্থাকে সহযোগী সংগঠন হিসেবে রাখতে পারবে না; বা কোনো ‘সশস্ত্র ক্যাডার বাহিনী, স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী, অন্য কোনো ‘শৃঙ্খলাবদ্ধ বাহিনী’ গঠন বা পরিচালনা করতে পারবে না।
২০০৯ সালে প্রণীত সন্ত্রাস বিরোধী আইনেও সন্ত্রাস সংশ্লিষ্ট অপরাধ ও শাস্তির বিধান রয়েছে। এ আইনগুলো ব্যবহার করে বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক দল ও সংগঠন নিষিদ্ধ করা হয়।
২০০৫ সালে দেশব্যাপী একযোগে বোমা হামলার পর জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশকে (জেএমবি) সন্ত্রাস বিরোধী আইনে নিষিদ্ধ করা হয়। ২০০৯ সালে সেনাবাহিনীতে বিদ্রোহ উসকে দেওয়া ও খেলাফত কায়েমের প্রচেষ্টার অভিযোগে হিজবুত তাহরির, বাংলাদেশ শাখাকে নিষিদ্ধ করা হয়।
ওই নিষেধাজ্ঞা এখনো বলবৎ আছে। ২০২৪ সালের ২রা আগস্ট জামায়াত ও ছাত্রশিবিরকে সন্ত্রাস বিরোধী আইনে নিষিদ্ধ করা হয়। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পরই ২৮শে আগস্ট প্রত্যাহার করা হয়।
রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ বাংলাদেশে নতুন নয়। অনেক দল নিষিদ্ধের পর হারিয়ে গেছে, আবার অনেক দল দ্বিগুণ শক্তি নিয়ে ফিরে এসেছে। সময়ই বলে দেবে আগামী দিনে আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ কি হবে?
এইচ.এস/
