ছবি- সংগৃহীত
বাজারে চালের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। বিশ্ববাজারে বিশেষ করে ভারত, ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ডে যখন চালের দাম কমেছে, তখন আমাদের দেশে দাম বাড়ার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। গত পনের দিনের ব্যবধানে খুচরা বাজারে চালের দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ৭ থেকে ৮ টাকা পর্যন্ত। ৭৪ থেকে ৭৫ টাকার মিনিকেট চাল এখন ৮০ থেকে ৮২ টাকা। একইভাবে মোটা চালের দামও বেড়েছে। চালের মিলগুলোতে, পাইকারি বাজার কিংবা খুচরা বাজার, কোথাও চালের কোনো অভাব নেই। এই মুহূর্তে ধান-চালেরও কোনো সংকট নেই। এরপরও চালের দাম বাড়ছে মূলত চাল সিন্ডিকেটের কারণে। আর এই চাল সিন্ডিকেট দিন দিন আরও ভয়ংকর হয়ে উঠছে। দেখে মনে হচ্ছে, তাদেরকে নিয়ন্ত্রণের কেউ নেই।
কৃষক থেকে ভোক্তা পর্যায়ে ধান-চাল পৌঁছাতে কয়েকবার হাতবদল হয়। প্রতিবার হাতবদলের সময় যোগ হয় লাভ। এ প্রক্রিয়ায় চালকল মালিকরা সবচেয়ে বেশি মুনাফা করে থাকেন। ধান-চালের মিল মালিক, মজুদদার, পাইকার ও বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর শক্তিশালী সিন্ডিকেট অস্থিরতার জন্য দায়ী। এরাই চালের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়াচ্ছে।
বর্তমান সরকারের সময়ে খাদ্যগুদামেও চালের মজুদ কমে গেছে। গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, চালের মজুদ নেমে এসেছে ৮ লাখ টনে। আবার সরকার আমন মৌসুমে ১০ লাখ টন ধান-চাল মজুদের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল, সে সংগ্রহ কার্যক্রমেও ভালো গতি নেই। আমন সংগ্রহ কার্যক্রম প্রায় দুই মাস হতে চললেও সংগ্রহ হয়েছে মাত্র পৌনে তিন লাখ টনের মতো। আবার মজুদ বাড়াতে চাল আমদানির উদ্যোগ নেয়া হলে সেখানেও সফল হওয়া যাচ্ছে না। এই অবস্থা চলতে থাকলে সামনে চাল নিয়ে সংকট আরও বাড়বে।
গত কয়েক মাস ধরে চালের দাম ক্রমাগত বৃদ্ধির লাগাম টেনে ধরার জন্য সরকারের নির্দেশে চাল আমদানিতে বিদ্যমান শুল্ক-করাদি সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা হয়। বর্তমানে মাত্র দুই শতাংশ অগ্রিম আয়কর ব্যতীত চাল আমদানিতে আর কোনো শুল্ক-কর দিতে হয় না। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে ৫৫ হাজার ৯৩৯ মেট্রিক টন চাল আমদানি হয়েছে। যার মধ্যে ভারত থেকেই আমদানি করা হয়েছে ২৫ হাজার টন। আবার ১১ই জানুয়ারি ভারত থেকে এসেছে ২৭ হাজার মেট্রিক টন চাল। চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে আনতে ভারত থেকে আরো ৫০ হাজার মেট্রিক টন নন-বাসমতি চাল আমদানির অনুমতি দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ।
গত নভেম্বর মাসে চাল আমদানি হয়েছিল মাত্র ৭ হাজার ৫০৭ মেট্রিক টন। অর্থাৎ শুল্ক-কর কমানোর পর এক মাসের ব্যবধানে চালের আমাদানি বেড়েছে ৬৪৫ শতাংশ। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআরের হিসাব মতে, এর ফলে প্রতি কেজি চাল আমদানি ব্যয় ২৫ দশমিক ৪৪ টাকা কমার কথা ছিল। যার ফলে, চালের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে থাকবে এবং নিশ্চিত হবে খাদ্যনিরাপত্তা। পাশাপাশি দেশে আমনের ভরা মৌসুম তো রয়েছেই। তবু অসাধু ব্যবসায়ী ও সিন্ডিকেটের দাপটে কমছে না চালের দাম। কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের (ক্যাব) মতে, বাজার মনিটরিংয়ে ব্যর্থতার কারণে চাল ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্যে চালের দাম কিছুতেই কমছে না। এমতাবস্থায় চালের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিয়মিত বাজার মনিটরিংসহ কঠোর হস্তক্ষেপ জরুরি ও অপরিহার্য হয়ে পড়েছে।
দেশের মানুষের প্রধান খাদ্যপণ্য চালের বাজার এখন রীতিমতো বেসামাল। বিশেষ করে মোটা চালের দামবৃদ্ধি মধ্য ও নিম্নবিত্ত আয়ের মানুষের নাভিশ্বাস হয়ে উঠেছে। কারণ তারা মোটা চাল নির্ভর। এই অবস্থায় মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তদের জীবনযাপন আরো দুরুহ হয়ে পড়বে। এ সংকট সমাধানে সঠিক পরিকল্পনা দরকার। যেকোনো মূল্যে সরকারি গুদামে খাদ্য মজুদ বাড়াতে হবে। কেননা সরকারের হাতে যদি খাদ্যপণ্য মজুদ বেশি না থাকে ব্যবসায়ীরা দাম বাড়াতে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠবে। তাই সরকারকে চালের মজুদ বাড়াতে হবে, খোলা বাজারে ব্যাপকভাবে চাল বিক্রি করতে হবে। তাহলে চালের দাম নিয়ে কারসাজি করার সুযোগও কমে যাবে।
আই.কে.জে/
খবরটি শেয়ার করুন