আদালত প্রাঙ্গণে খায়রুল বাশারকে ডিম নিক্ষেপ করা হয়। ছবি: সংগৃহীত
শত শত শিক্ষার্থীকে বিদেশে পাঠানোর কথা বলে কয়েক কোটি টাকা আত্মসাতের মামলায় গ্রেপ্তার বিএসবি গ্লোবাল নেটওয়ার্কের চেয়ারম্যান খায়রুল বাশারের প্রতি আদালত প্রাঙ্গণে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভুক্তভোগীরা। পরে আদালতে শুনানিতে এই প্রতারণার বিষয়ে বিচারকের প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছেন তিনি।
ঢাকার অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. ছানাউল্ল্যার আদালতের কাঠগড়ায় আজ মঙ্গলবার (১৫ই জুলাই) বেলা ৩টা ২০ মিনিটের দিকে বাশারকে তোলা হয়। প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ পাচারের মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। অন্যদিকে বাশারের পক্ষের আইনজীবী রিমান্ড বাতিলের পক্ষে শুনানি করেন।
বিচারক একপর্যায়ে খায়রুল বাশারকে প্রশ্ন করেন, ‘এই কাজগুলো (শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা আত্মসাৎ) কেন করলেন?’ বাশার জবাব না দিয়ে চুপ থাকেন। আবার বিচারক বলেন, কোন কারণে তাদের বিদেশ পাঠাতে ব্যর্থ হন বা অপারগ হন, তাহলে কেন টাকা ফেরত দেননি? তখনো নিশ্চুপ থাকেন বাশার।
এরপর বিচারক প্রশ্ন করেন, ‘আপনার বিরুদ্ধে কতটা মামলা হয়েছে জানেন?’ বাশার বলেন, আনুমানিক ৭০টা হয়েছে। তখন বিচারক বলেন, যত মামলা হয়েছে, মোকাবিলা করতে গেলে তো সারা জীবন কারাগারে কেটে যাবে।
বিচারক জিজ্ঞাসা করেন, ‘টাকাগুলো যে আত্মসাৎ করলেন, আপনার মানবিক সত্তা জাগ্রত হয়নি? কয়টা বিয়ে করেছেন?’ উত্তরে তিনি জানান, ‘দুটা।’ বিচারক আবার প্রশ্ন করেন, ‘আপনার সন্তান কয়জন?’ উত্তরে বাশার বলেন, ‘ছয়জন।’ বিচারক বলেন, ‘টাকা নিয়ে এসব শিক্ষার্থীর জীবন কেন হুমকির মুখে ফেলে দিলেন। একবারও কী আপনার সন্তানদের কথা মনে পড়েনি?’
বাশারের আইনজীবী এ সময় আবারও রিমান্ড জামিন শুনানি করতে চান। তখন আদালতে উপস্থিত ভুক্তভোগীরা আইনজীবীর উদ্দেশে চিৎকার করে বলেন, ‘আপনার লজ্জা নেই, নির্লজ্জ।’ পরে তিনি আর শুনানি করেননি। এরপর আদালত তার ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদেশ দেন।
এর আগে খায়রুল বাশারকে গতকাল সোমবার গ্রেপ্তার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। আজ তাকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে হাজির করা হবে—এ খবর শুনে সকাল থেকেই আদালতে ভিড় করতে থাকেন ভুক্তভোগীরা। ভুক্তভোগীরা আদালতের সামনে এসে খায়রুল বাশারের বিচার চেয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। দুপুরে তাকে আদালতে আনা হলে ভুক্তভোগীরা তার বিচার চেয়ে আরেক দফা স্লোগান দেন।
কড়া পুলিশি পাহারায় খায়রুল বাশারকে হাজতখানা থেকে বের করে আনে পুলিশ। এ সময় তার মাথায় ছিল পুলিশের হেলমেট, বুকে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট। তাকে যখন আদালত ভবনের নিচতলা থেকে সিঁড়ি দিয়ে ওঠানো হচ্ছিল, তখন বিক্ষুব্ধ লোকজন তার উদ্দেশে ডিম ছুড়তে থাকেন। প্রতারিত বিক্ষুব্ধ লোকজন খায়রুল বাশারের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। এর মধ্যে আদালত ভবনের এজলাসকক্ষে তাকে নিয়ে যায় পুলিশ।
খবরটি শেয়ার করুন