বুধবার, ২২শে অক্টোবর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৭ই কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ

*** সালমান শাহর মৃত্যুর আগের দিন স্ত্রী সামিরার সঙ্গে কী ঘটেছিল *** অক্টোবরের ২০ দিনে রেমিট্যান্স এলো ১৭৮ কোটি ডলার *** কাতারে বাংলাদেশি কর্মীদের ভিসা না দেওয়ার প্রচারণা প্রসঙ্গে যা বলছে মন্ত্রণালয় *** ‘দলীয়’ উপদেষ্টাদের বিষয়ে ড. ইউনূসের কাছে যে দাবি জানিয়েছে বিএনপি *** ‘জনতার জন্য হিজাব আইন, খামেনির উপদেষ্টার মেয়ের জন্য ডানাকাটা জামা’ *** নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ করার জন্য যা কিছু প্রয়োজন করব: প্রধান উপদেষ্টা *** ভারতীয় ঋণচুক্তির ১০ প্রকল্প বাতিলের তথ্য সঠিক নয়: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা *** সালমান শাহ, সোহেল চৌধুরী হত্যা: কে এই আজিজ মোহাম্মদ ভাই *** সোনারগাঁও হোটেলে আজিজ মোহাম্মদ ভাইকে কেন চড় মেরেছিলেন সালমান *** যে প্রার্থীদের ভোট দিতে বললেন উপদেষ্টা ফরিদা আখতার

তৃতীয় লিঙ্গের এমপির পাশে বসেছেন চরমোনাই পীর!

এসএম শামীম

🕒 প্রকাশ: ০৬:০৬ অপরাহ্ন, ২০শে আগস্ট ২০২৫

#

সংসদে অনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে দেশের রাজনৈতিক কাঠামো কীভাবে বদলে যেতে পারে—তা নিয়ে শঙ্কা ও কটাক্ষ প্রকাশ করেছেন সাবেক সংসদ সদস্য ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক গোলাম মাওলা রনি। তার মতে, এই পদ্ধতির মাধ্যমে এমন কিছু গোষ্ঠী সংসদে প্রবেশ করতে পারে, যারা প্রচলিত ধারার রাজনীতির বাইরে। বিষয়টিকে ‘গণতান্ত্রিক অধিকার’ হিসেবে মেনে নিলেও তিনি সংসদের গঠন ও পরিবেশ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। 

গতকাল মঙ্গলবার (১৯শে আগস্ট) তার ব্যক্তিগত ইউটিউব চ্যানেলে প্রচারিত এক ভিডিওতে এসব কথা বলেন তিনি। ভিডিওটি আজ বুধবার (২০শে আগস্ট) দুপুর ২টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত দেখা হয়েছে ৩০ হাজারের বেশি বার।

ভিডিওতে রনি বলেন, আমাদের দেশে ঐতিহ্যগতভাবে এমন একটি নির্বাচনী পদ্ধতি রয়েছে, যেখানে যেকোনো রাজনৈতিক দল বা স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্দিষ্ট আসনে প্রার্থী হতে পারেন এবং যিনি সর্বোচ্চ ভোট পান, তাকেই বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। কিন্তু পিআর পদ্ধতিতে বিষয়টি ভিন্ন। এখানে কোনো নির্দিষ্ট আসনের নির্বাচন হয় না, বরং প্রতিটি দল সারা দেশের ভোট পায় এবং সেই ভোটের অনুপাতে সংসদে আসন বরাদ্দ হয়।

তিনি ব্যাখ্যা করেন, যদি সারাদেশে ১০ কোটি ভোট হয় এবং কোনো একটি দল সেখান থেকে মোট ভোটের ৩০০ ভাগের মধ্যে ৪ ভাগ পায়, তাহলে সেই দল সংসদে ৪টি আসন পাবে। এতে করে এমন দলগুলোও সংসদে প্রবেশের সুযোগ পাবে, যাদের কোনো নির্দিষ্ট এলাকায় ভোটের আধিক্য নেই, কিন্তু দেশব্যাপী ছড়িয়ে-ছিটিয়ে কিছু সমর্থক রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে রনি কটাক্ষ করে বলেন, ‘যেমন আমাদের দেশে গাঁজা সেবনকারী ব্যক্তির সংখ্যা যদি ২০ লাখ হয় এবং তারা ‘গাঞ্জো পার্টি’ নামে একটি দল গঠন করে, তবে তারাও পিআর পদ্ধতিতে সংসদে যেতে পারে। তখন সংসদে দেখা যাবে গাঁজাসেবীদের ১০ জন প্রতিনিধি।’

তিনি আরও বলেন, তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠী যদি একটি দল গঠন করে এবং তারা ৩-৪ লাখ ভোট পায়, তবে তারাও সংসদে প্রতিনিধি পাঠাতে পারবে। সেক্স ওয়ার্কারদের নিয়েও তিনি মন্তব্য করেন, যে তাদের দল গঠনের মাধ্যমে সংসদে প্রবেশ করার সুযোগ সৃষ্টি হবে। তিনি বলেন, ‘ধরা যাক ‘বাংলাদেশ সেক্স ওয়ার্কার পার্টি’ নামে একটি দল তৈরি হলো এবং তারা লাখখানেক ভোট পেল—তাহলে তারাও এমপি হবে।’

তিনি একইভাবে পাহাড়ি জনগোষ্ঠী, নদীভাঙা মানুষ, হকার, বস্তিবাসী, গার্মেন্টস শ্রমিক, পাটকল শ্রমিক এমনকি ছিনতাইকারী ও ডাকাতদের নিয়েও বক্তব্য রাখেন। বলেন, ‘ছিনতাইকারীরাও একসময় বলবে, আমাদেরও সংসদে যাওয়ার অধিকার আছে। আমরা তো জেল খেটেছি, আমাদেরও কর্মসংস্থানের দরকার।’

এরপর রনি বলেন, এভাবে যদি প্রতিটি শ্রেণি-পেশা থেকে আলাদা রাজনৈতিক দল গঠিত হয়, তাহলে সংসদে হাজার খানেক দলের প্রতিনিধিত্ব দেখা যাবে। তাদের কেউ কেউ ২-৩টি আসন পাবে, কেউবা আরও বেশি।

তিনি বলেন, পিআর পদ্ধতির সংসদে এমন একটি বৈচিত্র্যময় পরিবেশ সৃষ্টি হবে, যেখানে হিজড়া, সেক্স ওয়ার্কার, সমকামী, হকার, গাঁজাসেবী, ডাকাত—সকলেই বসে থাকবেন। এবং প্রশ্ন তোলেন, ‘তখন এই সব শ্রেণির প্রতিনিধিরা সংসদে কোথায় বসবেন, কাদের পাশে বসবেন?’

চরমোনাই পীরের উদাহরণ টেনে রনি বলেন, ‘যদি পীর সাহেবের পাশে হিজড়া প্রতিনিধি বসেন, বা সমকামী প্রতিনিধি বসেন, তখন তার অনুভূতির কী হবে? সংসদের যে সৌজন্য ও শিষ্টাচার আছে, তা কীভাবে বজায় থাকবে?’

সমকামীদের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘তারা সংসদে এসে সুদর্শন পুরুষদের পাশে বসতে চাইবে, হাত ধরে হাঁটবে, গল্প করবে, সিঙ্গারা খাবে, একসাথে বাথরুমে যাবে—এতে করে কী ধরনের সামাজিক ও ধর্মীয় পরিবেশ তৈরি হবে, সেটা চিন্তা করা উচিত।’

তিনি বলেন, এ রকম একটি সংসদ গঠিত হলে সেটা দেখতে সারা বিশ্বের মানুষ বাংলাদেশে ছুটে আসবে। ‘তাজমহল বা আইফেল টাওয়ার দেখতে যেমন মানুষ যায়, তেমনি এই সংসদ অধিবেশন দেখতে বিশ্বজুড়ে আগ্রহ তৈরি হবে। টেলিভিশন চ্যানেলগুলো লাইভ সম্প্রচারের জন্য কোটি কোটি টাকা খরচ করবে।’

তবে এসব কটাক্ষের মাঝেও তিনি বলেন, ‘পিআর পদ্ধতির পক্ষে যারা কথা বলেন, তারা সৎ ও মহৎ উদ্দেশ্য নিয়েই বলছেন। তারা চান সব শ্রেণি-পেশার মানুষের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হোক, সত্যিকারের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হোক।’

তার মতে, ‘পিআর পদ্ধতির বিরোধিতা যারা করেন, তারা সংকীর্ণ মন-মানসিকতার পরিচয় দেন। তারা চান না, হিজড়া, সেক্স ওয়ার্কার বা সমাজের অন্য বঞ্চিত শ্রেণির মানুষ এমপি হোক।’

সব শেষে তিনি বলেন, ‘এই পিআর পদ্ধতি যদি বাস্তবে রূপ পায়, তবে বাংলাদেশের সংসদ হতে পারে পৃথিবীর সবচেয়ে আলোচিত গণতান্ত্রিক প্ল্যাটফর্ম।’

গোলাম মাওলা রনি

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন

Footer Up 970x250